নতুন বিবাহিত জীবন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠরা নানা উপদেশ দেন যাতে নব দম্পতির বিবাহিত জীবন সুখের হয়। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যদি চাকুরিরত হয়, তাহলে তাদের সহস্র স্বপ্ন পূরণ করেও কীভাবে তারা কিছু পুঁজি জমা করতে পারবে, তার মূল দায়িত্বটা কিন্তু নিতে হয় নবদম্পতিকেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের পর নবদম্পতিদের মধ্যে অত্যধিক খরচ করার যেমন একটা প্রবণতা দেখা যায়, বাজে জিনিস কিনে অর্থব্যয় করা এবং যথাযথ ইন্সিওরেন্স না করানোর মানসিকতাও কিন্তু লক্ষ্য করা যায়।
এই সব ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখলে পরবর্তী বিবাহিত জীবন সুখের হবে এবং Financial সমস্যা ঘটবে না এটা হলফ করে বলা যেতে পারে।
Financial ভ্যালু শেয়ার করুন
অনেক দম্পতি-ই স্বচ্ছ ভাবে নিজেদের মধ্যে টাকা নিয়ে অথবা উভয়ে উভয়ের রোজগার নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে না। এটি খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সুতরাং দু’জনেরই মনের ভিতর জমানো আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা একে অপরের কাছে অজানাই থেকে যায় এবং অনেক সময় ট্রান্সপারেন্সির এই অভাব সুখী দাম্পত্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যে-কোনও দাম্পত্যে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেই আসে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে যেখানে মানি রিলেটেড ভ্যালুও সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা হয়। কেউ হয়তো খুব বুঝেশুনে খরচা করে আর কেউ হয়তো ভবিষ্যতের কথা চিন্তাই করে না। কারও কাছে সেভিংস এবং ফিন্যান্সিয়াল গোল মিট-আপ করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট করে রাখাটা খুব জরুরি আর কেউ কেউ দিনের দিন বাঁচাটা প্রেফার করে। এই ধরনের মানসিকতার লোকেরা মনে করে ভবিষ্যতের ব্যবস্থা কিছু একটা হয়ে যাবে ঠিকই।
বিয়ের পরেই একে অপরের সঙ্গে ভালো করে চেনা পরিচিতি হয়ে গেলেই উচিত, নিজেদের মানি রিলেটেড ভ্যালু সম্পর্কে আলোচনা করা এবং উভয়ের ফিনান্সিয়াল গোল সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। এরই সঙ্গে লক্ষ্যে পৌঁছোবার একটা রোডম্যাপ উভয়ে মিলে ঠিক করে নেওয়া উচিত এবং লক্ষ্য স্থির রেখে সঞ্চয় করার একটা প্ল্যান করে রাখুন।
সঞ্চয় কতটা করবেন লক্ষ্য স্থির করুন
টাকার আমদানি হতে থাকলে মানুষ হাওয়ায় উড়তে আরম্ভ করে। চাহিদা বেশি হলেও সবকিছুই মনে হয় মুঠোর মধ্যে এবং দামি জিনিস কেনার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু দম্পতিদের মনে রাখা উচিত অর্থের আমদানি সবসময় একইরকম না-ও থাকতে পারে। পরিবার শুরু করার সময় দু’জনের মিলিত রোজগার হঠাৎ-ই একক রোজগার হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিনা কারণে মোটা অঙ্কের চাকরি খোয়াতে হতে পারে। সুতরাং প্রথম থেকেই দম্পতিদের কিছুটা করে আর্থিক সাশ্রয় করা উচিত যাতে প্রয়োজনের সময় সেটা কাজে আসতে পারে।
বাজেট করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটা ফেল করে কারণ কী কী খরচা সামনে রয়েছে তার উপর বেস করে খরচা করাটা আমরা ঠিক করে নিই। তারপর বেঁচেবর্তে থাকলে জমাবার কথা চিন্তা করি। কিন্তু সংসারে খরচা করার কোনও সঠিক সীমা থাকে না। যে-কোনও সময় নতুন নতুন খরচা করার পরিস্থিতি মাথাচাড়া দিয়েও ওঠে।
সব থেকে ভালো হয় যদি প্রথমেই ‘সেভিং বাজেট’ ঠিক করে নেওয়া হয়। প্রতি মাসে এটা ঠিক করে নেওয়া উচিত। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয়, ‘পে ইওরসেল্ফ ফার্স্ট’। এই কনসেপ্ট-এর পিছনে রয়েছে সরকারের ট্যাক্স, ব্যাংকের সুদ, রেস্তোরাঁর বিল এবং অন্যান্য সমস্ত খরচা মেটাবার পর দেখা যায় সব থেকে নেগলেকটেড পার্সন-টা কিন্তু আপনি নিজে, যে কিনা কিছুই পায়নি। সুতরাং নিজের মাসিক উপার্জন থেকে প্রথমেই কিছুটা অর্থ আগেই সঞ্চয় করে রাখুন লক্ষ্য স্থির রেখে এবং অবশিষ্ট অর্থ থেকে নির্দ্বিধায় খরচ করুন।
কতটা সঞ্চয় করছেন সেটা বড়ো কথা নয়, সঞ্চয় শুরু করাটাই মোস্ট ইম্পর্টেন্ট। উপার্জনের ১ শতাংশ দিয়েও শুরু করা যেতে পারে এবং তারপর ধীরে ধীরে সেটা বাড়িয়ে অনায়াসে ৫ থেকে ১০ শতাংশ করে তোলাই যায়। এটুকু সঞ্চয় করতে কারও কিছু অসুবিধা হবার কথা নয়। এরপর উপার্জনের ২৫ শতাংশ জমা করার মানসিকতা গড়ে তোলা উচিত।
এর ফলে কিছুদিন পরেই লক্ষ্য মিট-আপ করার জন্য, সঞ্চিত অর্থ যথেষ্ট পরিমাণ হয়ে উঠবে এবং অন্যান্য খাতেও টাকা বিনিয়োগ করার মতো পরিস্থিতিও গড়ে উঠবে।