নতুন বিয়ের পর অনেক দম্পতি-ই স্বচ্ছ ভাবে নিজেদের মধ্যে টাকা নিয়ে অথবা উভয়ের রোজগার নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে না। অনেক সময় ট্রান্সপেরেন্সির এই অভাব সুখী দাম্পত্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজন হচ্ছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি ভাবে নিজেদের রোজগার, সঞ্চয় এবং কোথায় কে কী ভাবে ইনভেস্ট করতে আগ্রহী সে বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা এবং সেই মতো লক্ষ্যে এগিয়ে চলা।

লক্ষ্য স্থির করুন

প্রথম থেকেই দম্পতিদের কিছুটা করে আর্থিক সাশ্রয় করা উচিত যাতে প্রয়োজনের সময় সেটা কাজে আসতে পারে। সব থেকে ভালো হয় যদি প্রথমেই ‘সেভিং বাজেট’ ঠিক করে নেওয়া হয়। প্রতি মাসে এটা ঠিক করে নেওয়া উচিত। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয়, ‘পে ইওরসেল্ফ ফার্স্ট’। এই কনসেপ্ট-এর পিছনে রয়েছে সরকারের ট্যাক্স, ব্যাংকের সুদ, রেস্তোরাঁর বিল এবং অন্যান্য সমস্ত খরচা মেটাবার পর দেখা যায় সব থেকে নেগলেকটেড পার্সন-টা কিন্তু আপনি নিজে, যে কিনা কিছুই পায়নি। সুতরাং নিজের মাসিক উপার্জন থেকে প্রথমেই কিছুটা অর্থ আগেই সঞ্চয় করে রাখুন লক্ষ্য স্থির রেখে এবং অবশিষ্ট অর্থ থেকে নির্দ্বিধায় খরচ করুন। Money Management করার ফলে কিছুদিন পরেই লক্ষ্য মিট-আপ করার জন্য, সঞ্চিত অর্থ যথেষ্ট পরিমাণ হয়ে উঠবে এবং অন্যান্য খাতেও টাকা বিনিয়োগ করার মতো পরিস্থিতিও গড়ে উঠবে।

লক্ষ্যে পৌঁছোতে ইনভেস্ট করুন

দম্পতিদের উচিত বিনিয়োগের লক্ষ্য শর্ট, মিডিয়াম এবং লং টার্ম—এই তিন ভাগে ভাগ করে নেওয়া। সেভ এবং ইনভেস্ট করে গাড়ি কেনা (২ বছরের মধ্যে গাড়ি কিনে নেওয়া যায়) হল শর্ট টার্ম গোল। ফ্যামিলি স্টার্ট করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট করা (স্ত্রী চাকরি ছেড়ে দিলে এবং সংসারের খরচা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকলে) অথবা বাড়ি কেনার জন্য ডাউন পেমেন্ট করতে টাকা বাঁচানো হল মিডিয়াম টার্ম গোল (২ থেকে ৫ বছর)। এছাড়া সন্তানের এডুকেশন এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা এবং চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর জীবন অতিবাহিত করার জন্য সেভ করা হচ্চে লং টার্ম গোল (৫ বছরের বেশি সময়ের জন্য)।

এই তিনটি টার্ম ছাড়াও আরও একটা ফান্ড তৈরি করার খুব দরকার যেটা থেকে ভবিষ্যতের অনিশ্চিয়তা বা অঘটনের জন্য টাকা জমানো হবে। হঠাৎ চাকরি চলে গেলে, অ্যাক্সিডেন্টের জন্য সাময়িক কর্মবিরতি হলে, এই ফান্ড থেকে টাকা তুলে কিছুদিন অনায়াসে চালানো যায়। এই ফান্ড যে ব্যক্তি করছেন, সেই ব্যক্তির জন্য ৬ মাসের নিজস্ব সমস্ত খরচা যাতে ইএমআই, ইন্সিওরেন্স পলিসির প্রিমিয়াম এবং অন্যান্য ফিক্স খরচাগুলো ধরে নিয়ে যত টাকা হয় তার সমান সমান অর্থ এই ফান্ডে রাখাটা খুব জরুরি। দুই মাসের সঞ্চয় সেভিংস অ্যাকাউন্টে রেখে দেওয়া উচিত, যাতে প্রয়োজন পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে তোলা যায়। আর বাকি টাকাটা লিকুইড মিউচুয়াল ফান্ডে রাখা বাঞ্ছনীয় যেখান থেকে ১ দিনের নোটিশে টাকা তুলে নেওয়া যেতে পারে।

এক্সপিরিয়েন্স-এর উপর ইনভেস্ট করুন

আজকের ফাস্ট মুভিং ওয়ার্ল্ড-এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সময় দেওয়াটা খুব জরুরি। প্রয়োজনে এক্সপিরিয়েন্স-এর উপর ভরসা রাখুন এবং কোয়ালিটি টাইম পারচেস করতে ইনভেস্ট করুন। ফান্ড তৈরি করুন এবং অ্যাক্টিভিটি প্ল্যান করুন যাতে দুজন মিলেই এনজয় করতে পারেন। এই ফান্ড দিয়ে বিশ্বভ্রমণ করতে পারেন, বাঞ্জি জাম্পিং, ডিপ সি ডাইভিং ইত্যাদি করতে পারেন। আগে থেকে প্ল্যান করুন। একটা ফিক্স অ্যামাউন্ট প্রতি মাসে লিকুইড ফান্ডে সরিয়ে রাখুন যাতে বেড়াতে যাবার মুখে স্ট্রেস নিতে না হয় ফান্ড জোগাড় করার জন্য।

অ্যাসেট তৈরি করতে ধারে ডুববেন না।

অ্যাসেট করার জন্য লোন নিতে গেলে নিজের লিমিট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। কারও গাড়ি এবং বাড়ির উপর নেওয়া টোটাল লোন অ্যামাউন্ট-এর ইএমআই, ওই দম্পতির গ্রস ইনকামের ৩০ শতাংশ হওয়া উচিত। এর বেশি হওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। এতে ক্যাশ ফ্লো সমস্যা হতে পারে। উপার্জন অনুযায়ী এবং স্টেবল জব থাকলে সেই অনুযায়ী গাড়ি, বাড়ি কিনুন।

পর্যাপ্ত ইন্সিওরেন্স থাকা খুব জরুরি

লাইফ ইন্সিওরেন্স : পরিবারে আপনার উপর নির্ভরশীল কেউ থাকলে (যার স্ত্রী চাকরি করে না, বয়স্ক নির্ভরশীল মা-বাবা, সন্তান) দম্পতির উচিত পর্যাপ্ত লাইফ ইন্সিওরেন্স করিয়ে রাখা। টার্ম ইন্সিওরেন্স পলিসি কিনুন (অনলাইন পলিসির দাম কম) লাইফ ইন্সিওরেন্স-এর প্রয়োজন মেটাতে। ইনভেস্টমেন্ট ওরিয়েন্টেড ইন্সিওরেন্স প্রোডাক্ট, যেগুলিতে বছরে হাই প্রিমিয়াম দিলেও পর্যাপ্ত লাইফ কভার পাওয়া যায় না, সেগুলিতে বিনিয়োগ করবেন না। আপনার ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানার-ই বলে দেবে কতটা কভার আপনার প্রয়োজন, আপনার উপর যিনি নির্ভরশীল তার কত ইনকাম, আউটস্ট্যান্ডিং লায়াবিলিটি, ফিউচার ফিন্যান্সিয়াল গোল ইত্যাদি সব কিছুর হিসেবনিকেশ করে।

হেল্থ ইন্সিওরেন্স : কোম্পানি থেকে হেল্থ ইন্সিওরেন্স প্রোভাইড করলেও, উভয়ের জন্য ইন্ডিভিজুয়াল হেল্থ ইন্সিওরেন্স করানো খুব দরকার। এছাড়াও অ্যাক্সিডেন্ট কভার এবং ক্রিটিক্যাল ইলনেস পলিসিও কিনে রাখা যায় বেশি প্রোটেকশনের জন্য। হেল্থ পলিসি কেনার আগে উচিত একজন ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানার-এর অ্যাডভাইস নেওয়া অথবা অনলাইন ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং প্ল্যাটফর্মের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে যাতে নতুন দম্পতি যুগল নিজেদের একটা রোডম্যাপ ছকে ফেলতে পারেন আর্থিক স্বাধীনতা পাওয়ার লক্ষ্যে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...