—তুমি ঠিকই বুঝেছ নমিতা, আমেরিকা যাওয়া তো অনিবার্য কারণ এটা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত আর ওনাকে তো জানোই, ওনার আদেশ কেউ অমান্য করলে সেটা উনি অপমান বলেই ধরে নেন। ওনার আদেশ না শুনে কোম্পানিতে থাকার থেকে কোম্পানি ছেড়ে চলে যাওয়া ভালো হবে, সপাট উত্তর পল্লবীর।

—আপনি যেটা ভালো মনে করেন ম্যাডাম, ধীর স্বরে উত্তর দিল নমিতা। কিছু পেতে গেলে কিছু তো হারাতেই হয়।

নমিতার উত্তর শুনে পল্লবী ভিতরে ভিতরে চমকালেও বাইরে ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে নমিতার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন ওকে দেখে পল্লবীর দয়া হচ্ছে।

—নমিতা এমনও তো হতে পারে, এখন একটা আবেগের বশে সবকিছুই তুমি হারিয়ে ফেললে। তোমার কথা শুনেই মনে হয়েছে সঞ্জয় তোমাকে পছন্দ করেছে তুমি চাকরি করো বলে। এখন যদি এত বড়ো পদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কেরিয়ার বিসর্জন দিয়ে সাধারণ মেয়েের মতো গৃহবধূ হয়ে যাও, তাহলে তো সঞ্জয়ের তোমাক বিয়ে করারই আর কোনও কারণ থাকবে না। যাই-ই সিদ্ধান্ত নাও না কেন খুব ভেবেচিন্তে নিও। চট করে কোনও কাণ্ড ঘটিয়ে বোসো না। আজ বরং তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও, পল্লবী বলল।

নমিতা তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এল। পল্লবীর কথাগুলো ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, সত্যিই তো ম্যাডাম তো ঠিকই বলেছেন। সঞ্জয় পরিষ্কারই বলে দিয়েছিল ওর ঘরোয়া নয়, কেরিয়ার মাইন্ডেড বউ চাই। বিয়ে জন্য কেরিয়ার নষ্ট করা সঞ্জয় পছন্দ করবে না আবার বিয়ে দিন পিছিয়ে দিতেও দুই পরিবারের কেউই রাজি হবে না। টাকাকড়ি খরচ করে সব হল, ক্যাটারার অগ্রিম বুক করা হয়ে গেছে। নমিতা কী করবে ভেবে দিশেহারা বোধ করছিল। বাড়িতে মা-বাবাও কেউ ছিলেন না। নমিতা মনের বোঝা হালকা করতে ছোটো ভাইয়ে ঘরে ঢুকে দেখল ও পড়ায় ব্যস্ত রয়েছে। দিদিকে ঢুকতে দেখে নিখিল জিজ্ঞাসু চোখে নমিতার দিকে তাকাতে নমিতা ভাইকে সব খুলে বলল।

—দিদি, তোর পল্লবী ম্যাডাম তোর ইমোশন, তোর পার্সোনাল লাইফটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে তুই অফিসে কী করে কাজ করবি শুধু তাই নিয়ে চিন্তা করছে আর এদিকে সঞ্জয়েরও তোর থেকে বেশি তোর চাকরিটাই পছন্দ অর্থাৎ তোর খুশি, আনন্দ, ইমোশনের কারও কাছেই কোনও দাম নেই। নিখিল কিছুটা চিন্তা করেই কথাগুলো বলল।

—তাহলে তুই বা কেন এই হৃদয়হীন লোকগুলোর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করবি? ছেড়ে দে চাকরি আর এটা যদি সঞ্জয়ের পছন্দ না হয়, তোর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিতে চায় তাহলে ভাঙতে দে। এই স্বার্থপর লোকগুলোর জন্য বৃথা জীবন নষ্ট করিস না। আজ নয়তো কাল ঠিক আবার চাকরি পাবি এবং যোগ্য বর জুটতেও সময় লাগবে না।

নমিতা জিজ্ঞেস করতে চাইছিল, এটার কী গ্যারান্টি যে ও আবার মনের মতো পাত্র পাবেই? এরকম না হয় যে ব্যক্তিগত অহংকার বজায় রাখার চক্করে রেণুদিদির মতো একলা চলো রে-র রাস্তাই ওকে বেছে নিতে হল। মনে মনে শিউরে উঠল নমিতা। ও জানে আমেরিকা না গেলে বা চাকরি ছেড়েও দিলে ওর মা-বাবা বা শ্বশুর-শাশুড়ি বিন্দুমাত্র রাগ করবেন না। আপত্তি যদি কারও থাকে সঞ্জয়েরই থাকতে পারে। নমিতা কিছুক্ষণ চিন্তা করল, ঠিক করল সঞ্জয়ের সঙ্গে সরাসরি এ বিষয়ে কথা বলবে। ফোনে সঞ্জয়কে সবকিছু জানিয়ে নমিতা ওকে দেখা করার জন্য অনুরোধ করল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...