—বিয়ে তো কখনওই স্থগিত করা যাবে না। পরিষ্কার জানিয়ে দিল সঞ্জয়। তবে বিয়ের জন্য চাকরি ছেড়ে দাও বা চাকরির জন্য বিয়ে, এর কোনওটাই আমি বলব না। কারণ আমি চাই না তোমার নিজের এই সিদ্ধান্তে সারাজীবন পস্তাতে থাকো। নমিতা, জীবনে সবকিছু নিজের ইচ্ছেমতো হয় না বা করা যায় না। পরে গিয়ে তোমার মনে হতেই পারে, এই কাজটা যদি সেদিন না করতাম তাহলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না। এই চিন্তা তোমার ভবিষ্যৎ নরক করে তুলতে পারে। সঞ্জয় নমিতাকে বুঝিয়ে বলে।

—তাহলে আমি এখন কী করব? নিজেকে এতটা অসহায় আগে কোনওদিন মনে হয়নি নমিতার।

—বিয়ে করে আমিও তোমার সঙ্গে আমেরিকা চলে যাচ্ছি। হনিমুনে কোথাও তো যেতেই হতো, তাহলে আমেরিকা নয় কেন? তুমি নিজের কাজ কোরো আর আমি আমার ব্যাবসা সংক্রান্ত কাজগুলো করে নেব। এখানকার ফ্যাক্টরি ছেড়ে যতদিন আমার পক্ষে থাকা সম্ভব ততদিন থেকে যাব তারপর দেশে ফিরে তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা করব।

—কিন্তু তাতে তো সময় লাগবে। বিয়ে পরই এভাবে আলাদা থাকা কি ভালো দেখাবে?

—ঠিকই বলেছ কিন্তু পরিস্থিতি বিচার করে যা মনে হচ্ছে তাতে এক কাজ করতে পারো। কোম্পানির কাজ তুমি কতদিনের মধ্যে সেরে ফেলতে পারবে তা একবার ভালো করে ভেবে দ্যাখো। তারপর কোম্পানিকে জানাও এতদিনের মধ্যে তুমি ওদের কাজ করে দিতে পারবে এবং কাজ শেষ হলে একদিনও তুমি আর আমেরিকায় থাকবে না।

এর মধ্যে সময় সুযোগ হলে আমিই চলে যাব তোমার কাছে, কিছুদিন কাটিয়ে আসব। তোমার সুযোগ হলে নিজের খরচাতেই তুমি চলে আসতে পারো। এটা হচ্ছে মানিয়ে নেওয়ার যুগ নমিতা, গম্ভীর হয় সঞ্জয়। পরিস্থিতি বুঝে সেইমতো নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই এখন চলার রাস্তা, সেখানে ব্যক্তিগত অহং দেখাবার কোনও পথ নেই। সময়ে হিসেবটা যদি একবার বুঝতে পারো তাহলে দেখবে সময় তোমার অনুকূলেই চলছে।

—তুমি ঠিকই বলেছ সঞ্জয়। কিন্তু আর সকলে আমাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে কি! আশঙ্কা কাটাতে পারে না নমিতা।

—সকলে বলতে যদি দুটো পরিবার আর তোমার অফিসের কথা বলো, তাহলে পরিবারের সকলকে বোঝাবার দাযিত্ব আমার আর তোমার স্বামী যদি নিজের খরচে তোমার সঙ্গে আমেরিকা যায় তাহলে অফিসে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পল্লবী ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলে দ্যাখো ওনার কি প্রতিক্রিয়া হয়। তারপর চিন্তা করা যাবে, বলে সঞ্জয় উঠে দাঁড়াল। ফ্যাক্টরির কাজ মধ্যেখানে ছেড়ে চলে এসেছি।

পল্লবী নমিতার সব কথা মন দিয়ে শুনল। অফিসে এর আগে এরকম ঘটনা কোনওদিন ঘটেনি তাই অফিসরুলস-এ কিছু দেওয়া নেই। তবে এটাতে ম্যানেজমেন্ট কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে সেটা এখনি বলতে পারছি না নমিতা। তবে সঞ্জয় যেটা বলেছে তাতে আমার নিজের মত আছে। নমিতার শুকনো মুখ দেখে পল্লবী সান্ত্বনা দেয়, তোমাকে আশ্বাস দিচ্ছি নমিতা আমার পক্ষে যতটা সম্ভব তোমায় সাহায্য করব। ম্যানেজমেন্টকে বোঝাব সঞ্জয়ের মতো জীবনসঙ্গী, চাকরির খাতিরে ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। সেটা যেমন বোকামি হবে তেমনি কোম্পানিকেও বুঝতে হবে তোমার মতো কর্মীকে ছাড়িয় দেওয়াও তোমার প্রতি অন্যায় করা হবে। তোমাকে অবশ্যই চান্স দেওয়া উচিত।

পল্লবীর প্রচেষ্টায় ফার্স্ট জুনের জায়গায় এক সপ্তাহ পরে স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা যাওয়ার অনুমতি পেয়ে গেল নমিতা। কিন্তু ওকে বন্ড সই করতে হল যে আমেরিকার অফিস যতদিন না ঠিকমতো কর্মক্ষম হচ্ছে, ততদিন নমিতা কোনও ছুটি নিতে পারবে না এবং দেশে ফিরেও একটা সময়সীমা অবধি ওকে অফিসে থাকতে হবে, অফিস ছাড়তে পারবে না।

—চাকরি যখন করতেই হবে তখন বন্ড সই করে দাও কিন্তু একটা শর্তে যে তুমি মেটারনিটি লিভ নিতে পারবে। বিয়ে যখন হবে তখন সন্তান তো আসবেই আর সেটা সঠিক সময় আসা দরকার। সঞ্জয় পরামর্শ দিল।

নমিতা শর্তের কথা পল্লবীকে জানাল।

—মেটারনিটি লিভ নেওয়া তো আমাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার নমিতা। পল্লবী হাসল!

—ওটা পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। তবে এই অধিকারের অপব্যবহার আমেরিকায় থাকাকালীন দয়া করে কোরো না।

ওদের সিদ্ধান্ত অর্থাৎ নমিতা আর সঞ্জয়ের মত নিয়ে পরিবারের লোকজন কিছুটা অখুশি হলেও সঞ্জয়ের বোঝানোতে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠল। আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি আর বিয়ে বাড়ির জমজমাট পরিবেশ নমিতার মনের সব শঙ্কা এবং চিন্তা দূর করে দিল। ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্নে নমিতার বর্তমান স্বর্ণালি আভায় ঝলমল করে উঠল।

( সমাপ্ত )

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...