গত সপ্তাহে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে সমর, মদের নেশায় চুর হয়ে একটা ওর চেনা-পরিচিত ক্যাসিনোতে যায়। ওখানে ও প্রায়ই যেত তাই ক্যাসিনোর মালিক ওকে খেলার জন্য দুই লক্ষ টাকা ধারও দেয়। কিন্তু সমর একঘন্টার মধ্যেই পুরো টাকা হেরে যায় এবং তার পরেও আবার টাকা ধার দেওয়ার জন্য ক্যাসিনোর মালিককে জোরাজুরি করতে থাকে। কিন্তু ওখানকার মালিক আর টাকা ধার না দিয়ে সমরকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দেন আগের দুই লক্ষ টাকার ধার মেটাবার জন্য। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে বচসা হয় এবং পরিস্থিতি মারমারি পর্য‌ন্ত পৌঁছোয়। মারামারির মধ্যে সমরের হাতে ক্যাসিনোর মালিক খুন হয়ে যায়। ফলে খুনের চার্জ গিয়ে পড়ে সমরের উপর। ও কোনওমতে ওখান থেকে পালাতে পারলেও উপস্থিত সকলেই ওকে খুন করতে দেখেছিল। ফলে পুলিশের কাছেও ওর বিরুদ্ধে যথেষ্ট ছিল।

প্রণতি এবার একটু গম্ভীর হল। প্রণতির চোখে কিছুটা অনুকম্পা প্রকাশ পেল কিনা ঠিক বুঝতে পারল না সঞ্চিতা। আরও কিছু শোনার অপেক্ষায় নিঃশ্বাস প্রায় আটকে উঠছিল সঞ্চিতার। প্রণতি নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল। আবার বলতে আরম্ভ করল, এবার নিজেকে একটু শক্ত করো সঞ্চিতা, কারণ এখন আমি যেটা বলতে যাচ্ছি সেটা তুমি নিশ্চয়ই স্বপ্নেও কোনওদিন ভাবোনি। তোমাকে বিয়ে করার ছয়মাস আগে সমর একটি জার্মান মেয়েকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু মেয়েটি দুতিন মাস পরেই স্বামীর চালচলন ঠিক নয় বুঝে ওকে ছেড়ে চলে যায়। এখনও পর্য‌্যন্ত আইনত ওদের ডিভোর্স হয়নি। সেজন্য তোমার বিয়ে কতটা আইনসিদ্ধ সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সম্ভবত সেই কারণেই তোমার গর্ভপাত করানো হয়েছে, যাতে তোমার আর বাচ্চার জন্য ও সমস্যায় না পড়ে।

সমর ছেলেটি একেবারে ধোঁকাবাজ একটা ছেলে। ওকে দয়া করার কোনও মানেই হয় না। তুমি যেমন করে পারো এই বিয়েটা থেকে বেরিয়ে এসো। আমার পরিচিত উকিলের সঙ্গে আমি কথা বলছি, দেখি তিনি কী পরামর্শ দেন। কাল দুপুরে সমরকে কোর্টে তোলা হবে। আমি আমার উকিলের সঙ্গে ওখানে যাব। তুমি এখন বাড়ি যাও। তোমার যত জিনিস, গয়না, টাকা-পয়সা— সব নিয়ে আমার বাড়ি চলে এসো। এখানে তোমার একটা জিনিসেও কেউ হাত দেবে না। কেস মেটা না পর্য‌্যন্ত তুমি আমার বন্ধু, বোন হিসেবে এই বাড়িতেই থাকবে আমার কাছে।

চোখের জল মুছে সঞ্চিতা মাথা নেড়ে প্রণতিকে নিজের সম্মতি জানাল এবং ধন্যবাদ জানিয়ে প্রণতির বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।

নিজের বাড়িতে এসে সঞ্চিতা শাড়ি, জামাকাপড়, গয়না যা যা ছিল সব দুটো সুটকেসে ভরে নিল। গয়নাগুলো সব ঠিক আছে দেখে একটু আশ্চর্যও হল। ওর কাছে যা টাকা ছিল, জরুরি কাগজপত্র, পাসপোর্ট-ভিসা সব ব্যাগে ভরে নিয়ে সারা বাড়িটা একবার চোখ বুলিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে প্রণতির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।

 

পরের দিন সমরকে কোর্টে হাজির করা হল। সঞ্চিতা, প্রণতি উকিলের সঙ্গে ওখানেই উপস্থিত ছিল। সঞ্চিতা এবার সমরের মুখোমুখি হল, জিজ্ঞেস করল কেন একটা মেয়েকে ও এভাবে ধোঁকা দিল? সমরের কাছে কোনও উত্তর ছিল না। শুনানি হয়ে যেতে পুলিশ ওকে নিয়ে চলে গেল।

প্রণতির সাহায্যে সঞ্চিতা জার্মান মেয়েটির সঙ্গেও দেখা করল। সমরের সব ঘটনা শুনে মেয়েটিও অবাক হয়ে গেল। সমরের হাত থেকে রেহাই পেতে মেয়েটি কথা দিল সঞ্চিতাকে সবরকম ভাবে ও সাহায্য করবে।

সবার আশ্বাস পেয়ে সঞ্চিতা অনেকটাই চিন্তামুক্ত হতে পারল। ওর মনে হল সমরের হাত থেকে সহজেই ও মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু সমরের কেস-টার নিষ্পত্তি হতে দেড় বছর গড়িয়ে গেল। ওর দশ বছরের সাজা হল। সঞ্চিতা এবার ডিভোর্স পেপার সাইন করাতে সমরের সঙ্গে দেখা করল। সমর শেষপর্য‌্যন্ত বিনা বাক্যব্যয়ে সমস্ত কাগজে সাইন করে দিল। অবশেষে সঞ্চিতা স্বাধীনতার স্বাদ পেল। এর জন্য প্রণতিকে ও বার বার ধন্যবাদ জানাল।

এতদিনে সমরের কুকীর্তির কথা বনানী পিসি আর নিজের মা-বাবাকে জানিয়েছে সঞ্চিতা। সকলেই প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেলেন। বনানীও সঞ্চিতার মা-বাবার থেকে ক্ষমা চাইলেন সঞ্চিতার এখানে বিয়ে ঠিক করার জন্য। যদিও এটাতে তাঁর কোনও দোষই ছিল না। তিনি নিজেও সমরের এই চারিত্রিক অবনতির কথা জানতেন না। কারণ সমর তাঁকেও অন্ধকারে রেখেছিল। সঞ্চিতার মা-বাবাও ওনাকে ক্ষমা করে দিলেন। একে অপরকে দোষারোপ করে আর লাভ কী?

দিনকয়েক পরে সঞ্চিতা মুম্বই এয়ারপোর্টে নামলে ওকে স্বাগত জানাবর জন্য ওর মা-বাবার সঙ্গে বনানী পিসিও হাজির হলেন। প্রণতির সাহায্য নিয়ে সঞ্চিতা পেরেছিল সমরের ভালোমানুষি চেহারাটা থেকে মিথ্যার মুখোশটা টেনে খুলে দিতে। সকলের সামনে ওর আসল চেহারাটা প্রকাশ করে দিতে। মুখোশধারি এরকম হাজার হাজার সমর সর্বত্র রয়েছে। সাহসের সঙ্গে সেই মুখোশ টেনে সরিয়ে দিতে মেয়েদেরই আজ এগিয়ে আসার দরকার।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...