অর্ক মুখ বাড়িয়ে সিগারেট জ্বেলে নিয়ে তাকাল তার দিকে। ভয়াবহ ভূমিকম্প শুরু হল ঠিক তখনই। গোটা পৃথিবীটাই রসাতলে যাওয়ার মতো করে দুলে উঠল ভূমণ্ডল। চারপাশের বাড়ি ঘর
দুর দাড় ভেঙে পড়তে লাগল। নিমেষের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পাঁচতারা হোটেলটাও।
মাটির ফাটল বিশাল হাঁ হয়ে গিলে নিল গোটা হোটেলটাকে। অর্ক পলকে তলিয়ে গেল কোন
অতলে। সেই অতলে গিয়ে আছড়ে পড়ল একযুগ আগের ওর সেই সুকান্তদার বসার ঘরে। ফ্রেন্ড,
ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড সুকান্তদা।

মাথা নীচু করে ভেঙেচুরে বসেছিল অর্ক। যেন সে আর এ জীবনে নিজের পায়ে ভর দিয়ে মাথা
উঁচু করে দাঁড়াতেই পারবে না। সুকান্তদা বলল, “তুই কী বললি? রাজি হয়ে গেলি রাসকেল!”
সুকান্তদা একরাশ বিরক্তি ছুড়ে দিল অর্কর দিকে। অর্ক দেখল ওর সুকান্তদা খেপে ফায়ার হয়ে
গেছে। কী করবে ভেবে পায় না। সুকান্তদা এমনিতে খুবই ভালো মানুষ। কিন্তু এরকম মিনমিনে
ভাবটা একেবারেই বরদাস্ত করে না।

সুকান্তদার ঠোঁটে সিগারেট ঝুলছিল। ফস করে দেশলাই জ্বেলে ঝুঁকে দু'হাতের আড়ালে রাখা আগুনে সঁপে দিল ঠোঁটের সিগারেট। তারপর ভুরভুর করে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘তুই একটা
কাওয়ার্ড। জাস্ট কাওয়ার্ড। শালা ব্যাকবোনলেস। পুরুষ জাতির কলঙ্ক। আরে শালা প্রেমের
আবার শর্ত কীরে? এটা কি তোর চাকরি, যে একটা শর্ত চাপিয়ে দেবে? ও কী এমন মাধুরি
দীক্ষিত যে তোকে বলল, তোমাকে শচীন তেণ্ডুলকর হতে হবে, তাহলে আমি রাজি! বাঃ বাঃ
চমৎকার! তাও ভালো বলেনি যে তোমাকে মুখ্যমন্ত্রী হতে হবে। তবে আমি রাজি। তোকে যদি
তোর ওই আই মিন সুচন্দ্রার ভালো লাগত, তাহলে আপসে রাজি হয়ে যেত। তুই ল্যাং ল্যাং করে
পিছনে পড়ে আছিস, তাই তোকে নিয়ে জাস্ট ফান করেছে। এটা অসহ্য। ভাবতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে। ওকে পাওয়ার আশা তুই ছাড়।

অর্ক বলল, ‘সুকান্তদা, আমি মরে যাব। ওকে না পেলে আমি পাগল হয়ে যাব।”
‘অর্কর বয়স বাইশ। ফরসা। চকচকে দুধসাদা দুপাটি দাঁত। বেশ সুন্দর করে হাসতে, কথা
কইতে জানে। মানুষকে সহজেই আপন করে নিতে জানে। বেশ মায়া জড়ানো মুখটা। শিশুর
মতো সরল ওর মুখটার দিকে তাকালে বড়ো মায়া হয় রে। বলেন, সুকান্তদার মা।

মা মিথ্যে বলেন না। অর্কর মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে মায়ের কথা সত্যি মনে হল। তাই সুর
নরম করে সুকান্তদা বলল, তোকে মুখের ওপর একথা বলল?”

অর্ক বলল, হ্যাঁ, বলল। সুচন্দ্রা বলল, তুমি অ্যাট্রাকটিভ নো ডাউট। স্মার্ট, ওয়েল বিল্ট
ফিজিক। কিন্তু, তুমি বড্ড বেঁটে। আমার বেঁটে ছেলে পছন্দ নয়।”

আমি বললাম, ‘শচীনও তো বেঁটে। তাহলে তুমি ওর ফ্যান কেন? সারা ঘরের দেয়ালে শচীনের
ছবি সাঁটিয়ে রেখেছ কেন? আমি কিছু জানি না মনে করেছ? রিংকি আমাকে সব বলে।”

সুচন্দ্রা বলল, রিংকি কী বলে আমার নামে?”
আমি বললাম, ‘কী আবার বলবে? রিংকি বলেছে তুমি শচীনের নামে ফিদা। তুমি অস্বীকার
করতে পারো?

তখন ও বলল, ‘অস্বীকার করব কেন? আই লভ শচীন তেণ্ডুলকর। সবাই জানে। এতে তো
লুকোচুরির কিছু নেই।” তখন আমি বললাম, “আমার হাইটও তো শচীনের মতোই। আমিও
ক্রিকেট খেলি ক্যালকাটা বি ডিভিশনে। কম কী?”

সুকান্তদা ফের সিগারেট ধরাল। ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ইন্টারেস্টিং! শুনে সুচন্দ্রা কী বলল?”
অর্ক ম্লান নত মুখে বলল, “তখনই ও আমাকে শর্ত দিল। তার আগে বলল, কোথায় শচীন
আর কোথায় তুমি। শচীন বেঁটে। তুমিও বেঁটে। তবে আর কী? তোমাকেই শচীন বলে ডেকে
তোমার প্রেমে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তাই তো? আমাকে পাওয়ার খোয়াব যে দেখছ মিস্টার অর্ক মিত্র,
বলছি, পারবে ওর মতো টেস্ট খেলতে? পারবে শচীনের মতো ডবল সেঞ্চুরি করতে?

আমি বললাম, ‘আমি তো আর শচীনের মতো সোনার চামচ মুখে করে জন্মাইনি। জন্মালে
আমিও টেস্টে চান্স পেতাম।” শুনে সুচন্দ্রা ঠোঁট উলটে বলল, তাই নাকি? ঠিক আছে টেস্টে
চান্স না পাও, ক্যালকাটা মাঠে এ ডিভিশনে খেলে একটা ডবল সেঞ্চুরি করে দেখাও। পারবে?”
আমি বললাম, ‘পারব।’

তখন ও বলল, ‘তাহলে আমি রাজি। যেদিন ডবল সেঞ্চুরি করে দেখাবে সেদিন তুমি আমাকে
পাবে।”

আমি চ্যালেঞ্জটা অ্যাকসেপ্ট করেছি তোমার কথা ভেবে। তোমার তো অনেক জানাশোনা।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...