চারদিক পাহাড় আর তার গায়ে ছোটো বড়ো সবুজ গাছ এবং রং-বেরঙের ফুলের নকশা— মনে হয় গাছেরা নানা রং দিয়ে ছবি এঁকেছে। পাহাড়ের মাঝে মাঝেই সমতল জায়গায় বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ হয়েছে আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ের ঢালে কমলালেবু, ন্যাসপাতি, পীচ ও অনেক ফলের গাছ কমলা, হলুদ, লাল রঙে সেজে আছে। ওপরে উজ্জ্বল নীল আকাশে মেঘেরা খেলা করতে করতে কখনও নীচে নেমে আসছে। চোখ ফেরানো যায় না।
পাহাড়ের ধাপে ধাপে ছবির মতো সুন্দর সাজানো বাড়ি। আর রাতেরবেলায় যখন বাড়িগুলোতে ও রাস্তায় আলো জ্বলে ওঠে সে এক অপূর্ব দৃশ্য— সব মিলিয়ে এক আশ্চর্য প্রকৃতি এবং প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে থাকা রূপকথার শহরের টানেই আমাদের আসা শিলং-এ।
Shillong উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ও পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর এবং মেঘালয় রাজ্যের রাজধানীও। এটি খাসি পাহাড়ের প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। এক সময় এটি প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ পরিবারদের জন্য শিলং একটি জনপ্রিয় পাহাড়ি রিসর্ট ছিল। শিলঙে এখনও প্রচুর ব্রিটিশ ধাঁচে নির্মিত কান্ট্রিহাউজ দেখতে পাওয়া যায়।
শিলং-এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪-৫ হাজার ফুট। সারাবছরই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা। শিলঙের বাড়িগুলি কাঠের তৈরি বিশেষ করে খাসিদের বাড়িগুলি খুব সাজানো নানারকম ফুলের গাছ দিয়ে। শিলং শহরটি মাতৃতান্ত্রিক। খাসি মেয়েদের সমন্বয়ে গঠিত যারা সমস্ত রকমের কাজ যেমন অফিসে কাজ করেন আবার কেউ সবজি বিক্রি করেন, কেউ মাছ বিক্রি করেন, কেউ-বা দোকান চালান।
শিলঙে বাইরে ও অভ্যন্তরে প্রচুর দর্শনীয় আকর্ষণ রয়েছে। তবে আমরা যে-সব জায়গা ঘুরেছি তার মধ্যে উমিয়াম লেক, এলিফ্যান্ট জলপ্রপাত, Shillong-পিক, গলফ লিংক, ওয়ার্ডস লেক, অল সেন্টস চার্চ, লেডি হাইদারি পার্ক, পুলিশ বাজার। এছাড়া গিয়েছি চেরাপুঞ্জি, মৌসিনরাম।
শিলং যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশন থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস ট্রেনে করে গুয়াহাটি নামতে হয়। আমরা ৫ দিনের জন্য দুটি পরিবার একসাথে শিলং ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম অক্টোবর মাসে, দুর্গা পুজোর শেষে। মনোরম আবহাওয়া। সরাইঘাট এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে রাত দশটায় ছেড়ে পরদিন সকাল দশটায় গুয়াহাটি পৌঁছোল। গুয়াহাটি থেকে Shillong যাওয়ার জন্য বাস, ট্যাক্সি, টাটাসুমো আছে। সফরে ছয়জন ছিলাম তাই টাটাসুমো বুক করে শিলং-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
শিলং যখন পৌঁছোলাম বেলা তখন ২টো। আগে থেকে বুক করে রাখা বিএসএনএল-এর গেস্ট হাউসে উঠলাম। গেস্ট হাউসে সব জিনিসপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বেলা চারটে বেজে গেল। একটু বিশ্রাম নিয়ে ‘পুলিশ বাজার’ গেলাম।
পুলিশ বাজার শিলঙের একটা বিখ্যাত জায়গা যেখানে ভালো হোটেল এবং খাবার দোকান, পোশাক পরিচ্ছদ ও নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দোকান আছে। কিছুসময় ঘুরে ‘সেন্টার পয়েন্ট’ হোটেলের রেস্টুরেন্টে ছোলা বাটুরা ও কফি খেয়ে সন্ধেবেলায় গেস্ট হাউসে ফিরে আসলাম। শিলঙে সারাদিন দোকান খোলা থাকে আর রাত আটটার মধ্যে সব দোকান বাজার বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিনের ঘোরার স্পট প্ল্যান করে ঘুমিয়ে পড়লাম।