মেঘ-কুয়াশা ঘেরা পাহাড়ি শহর Shillong। এক সময় ব্রিটিশ পরিবারগুলির বিশ্রামাবাস ও ছুটি কাটানোর জায়গা ছিল মেঘালয়ের এই পার্বত্য জনপদ। প্রথমদিনটা কাটল পুলিশ বাজার ঘুরে।
শিলঙে সারাদিন দোকান খোলা থাকে আর রাত আটটার মধ্যে সব দোকান বাজার বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিনের ঘোরার স্পট প্ল্যান করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে জল খাবার খেয়ে দুটো ট্যাক্সি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম শিলঙের সাইট সিয়িং করতে। প্রথমেই ওয়ার্টস লেক দেখলাম। লেকে গিয়ে আমরা নৌকাবিহার করলাম। অপূর্ব দৃশ্য। এরপর আমরা লেডি হাইদারি পার্ক গিয়েছি। এই পার্কে নানা রকমের বিভিন্ন রঙের ফুলের বাগান দেখবার মতো। পার্কের মধ্যে একটি ছোটো চিড়িয়াখানা ও একটি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মিউজিয়াম আছে। এরপর অল সেন্টস ক্যাথিড্রাল চার্চ ও বিখ্যাত গলফ মাঠ দেখলাম। গলফ মাঠটি ভারতের প্রথম ১৮-টি গহ্বর-যুক্ত গলফ কোর্স হিসাবে পরিচিত। এসব দেখতে দেখতে সন্ধে হয়ে গেল। দেখা শেষ করে এরপর আমরা গেস্ট হাউসে ফিরে এলাম।
তৃতীয় দিন স্নান করে জলখাবার খেয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম উমিয়াম লেক দেখতে। স্কটল্যান্ডের সমুদ্র শাখা বা হ্রদের সাথে তুলনাময়, উমিয়াম লেক শিলং থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে অবস্থিত। অর্থাৎ গুয়াহাটি থেকে Shillong শহরে পৌঁছোনোর ১৬ কিলোমিটার আগে উমিয়াম লেক। অন্য নাম বড়াপানি। এরপর আমরা এলিফ্যান্ট জলপ্রপাত দেখতে গেলাম। এই জলপ্রপাতটির নিকটে একটি হস্তী আকৃতির পাথর থাকায় এলিফ্যান্ট জলপ্রপাত নাম হয়েছে। যদিও পাথরটি এখন আর নেই। জলপ্রপাতটি তিনটি ধাপে রয়েছে। আমরা একদম নীচে সিঁড়ি পর্যন্ত নেমেছিলাম। অপূর্ব দৃশ্য। মনে হয় শুধু দেখতেই থাকি। প্রচুর ছবি তোলা হল। তারপর আমরা সোজা শিলং পিকে গেলাম। শিলং পিক থেকে পুরো শিলং শহরটা খুব সুন্দর দেখা যায়। শিলং পিক থেকে সোজা পুলিশ বাজার হয়ে গেস্ট হাউসে ফিরে এলাম।
শিলঙে শীতের পোশাক তো পাওয়া যায় তবে বেতের ও কাঠের সুন্দর সুন্দর ঘর সাজানোর জিনিসও পাওয়া যায় প্রচুর। দেখলাম কমবেশি সব টুরিস্ট-ই মেঘালয় এম্পোরিয়াম ও অসম এম্পোরিয়াম থেকে শীতের পোশাক-সহ বেত ও কাঠের জিনিস কেনাকাটি করতে ব্যস্ত। যাইহোক চতুর্থ দিনে চেরাপুঞ্জি যাব বলে মেঘালয় টুরিজমের বাসে সিট বুক করলাম।
সকালে স্নান সেরে ও জলখাবার খেয়ে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে চেরাপুঞ্জি যাবার বাসে চড়ে বসলাম। বাসে আরও অনেক পরিবার ছিল। যথাসময়ে বাস ছাড়ল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,২৬৭ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। চেরাপুঞ্জিতে আছে দেখার মতো বেশ কিছু জায়গা। প্রতিটি জায়গায় যাওয়ার পথে মনোমুগ্ধকর নানা ঝরনা ও পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে চোখ ও মন ভরে গেল।
Shillong থেকে চেরাপুঞ্জি যাওয়ার সময় ম্যাকডক ব্রিজের উপর থেকে অপূর্ব দৃশ্য দেখলাম। ম্যাকডক ব্রিজ পেরিয়ে রাস্তায় যেতে যেতে রামকৃষ্ণ মিশন গিয়ে মন্দির, মিউজিয়াম দেখলাম। তারপর ডুয়ান সিং ফলস, ড্যানথলেন ফলস, সাদং ফলস দেখে আমরা নোকালিখাই ফলস দেখতে যাই— এটি এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত। এই ফলসটি খাসি পাহাড়ের উপর ১,১৫০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এটি চেরাপুঞ্জির অন্যতম উচ্চতাসম্পন্ন ঝরনা।
এরপর আমরা ইকো পার্ক ও মসমাই কেভ দেখার পর সেভেন সিসটার ফলস দেখলাম। পর পর সাতটি ঝরনা পাহাড়ের গা বেয়ে নীচের দিকে পড়ছে। অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য। একটা কথা বলা হয়নি, সেটা হল আমরা অক্টোবরে বেড়াতে গিয়েও চেরাপুঞ্জিতে অল্প সময়ের জন্য বৃষ্টি পেয়েছিলাম। যাইহোক চেরাপুঞ্জি ঘুরে গেস্ট হাউসে পৌঁছোতে সন্ধে সাতটা বেজে গেল। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম কেন না পরের দিন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।
পঞ্চম দিনে গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় যাওয়ার ফ্লাইট ছিল বেলা একটায়। সকাল সাতটায় গেস্ট হাউসের সামনে বুক করা টাটাসুমো এসে গেল। আমরা Shillong ও চেরাপুঞ্জির সৌন্দর্য মনের মণিকোঠায় সঞ্চয় করে এক পাহাড়ি ও মেঘের রাজ্যের কিছু অবিস্মরণীয় স্মৃতি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।