বিয়ের আচার আনুষ্ঠানের আবহে বর-কনের নিজেদের একান্ত কিছু মুহূর্ত কাটানোর অবকাশই থাকে না৷ দু’জনে দু’জনকে জানার সবচেয়ে বড়ো সুযোগটা মেলে হনিমুনে গিয়ে।তাই নিরিবিলি কোনও জায়গায় কাটিয়ে আসুন দু-চার দিন।

আল্লেপ্পিকুমারাকম

আল্লেপ্পিকে বলা হয় ‘ভেনিস অফ দ্য ইস্ট’। কেরালার নিজস্ব চার্ম এই ব্যাকওয়াটার, পর্যটকদের দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটিয়ে আনে। এখানকার জলজীবনের অঙ্গ হতে, অন্তরঙ্গভাবে কাটিয়ে যেতে পারেন আপনার মধুচন্দ্রিমার দিনগুলি। কোচিন থেকে কেরল রোড ট্রান্সপোর্ট-এর বাসে আল্লেপ্পি পৌঁছে, কেরালার নিজস্ব সংস্কৃতির স্বাদ নিতে  হলে থাকতে পারেন হোমস্টে-তে। ‘চেরুমারা নেস্ট হোমস্টে এক্ষেত্রে নিরালাযাপনের এক মনকাড়া ঠাই। এটি নেহরু’স ফিশিং পয়েন্ট-এর খুব কাছে।

Alleppey travel

কেরালায় হনিমুন-এর আনন্দ উপভোগ করতে, একটি রাত অবশ্যই হাউসবোট স্টে নিন। এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। নেহরু’স ফিশিং পয়েন্ট থেকে শুরু হয় হাউসবোট ক্রুজ। দুপুর ১২টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত এই জলবিহারে পাবেন ভেম্বানাদ হ্রদে বেড়ানোর অনাস্বাদিত আনন্দ। নারকেল বিথি ছাওয়া পাড় ছাড়িয়ে জলযানটি আপনাকে নিয়ে ভেসে বেড়াবে লেক-এর পান্না-সবুজ জলে। কোথাও দেখতে পাবেন শ্যামল কৃষিক্ষেত্র, কোথাও গ্রাম্যজীবনের শান্ত রূপ। জায়গায় জায়গায় হাউসবোট নোঙর করবে, আর গ্রহণ করতে পারবেন টাটকা সি-ফুড-এর অনন্য স্বাদ। ভোরবেলায় সূর্যোদয় দেখতে দেখতে মশলা -চায়ে চুমুক দিয়ে উপভোগ করুন জীবনের রূপ-রস-গন্ধ!

পরদিনটা রাখুন কুমারাকম-এর জন্য। আল্লেপ্পি থেকে মুহাম্মা বোট জেটি পৌঁছে ‘থারাভাড়ু হেরিটেজ হোম’-এ কাটান মধুচন্দ্রিমার দ্বিতীয় অধ্যায়। কুমারাকম-এর নির্জন নিসর্গের সঙ্গে অন্যতম পাওনা এখানকার বার্ড স্যাংচুয়ারি ভ্রমণ।এখানে রয়েছে জলজ পাখির ইতিউতি বিচরণ৷ ছোট্ট ছিপ- নৌকোয় করে খাঁড়ি বেয়ে বার্ড ওয়াচিং-এর মজাই আলাদা।

 

দামনদিউ

Honeymoon in Daman and Diu

ভারতীয় পশ্চিম উপকূলের দুটি জনপ্রিয় ট্রাভেল ডেস্টিনেশন দামন ও দিউ। যেমন সুন্দর সমুদ্র -শহর, তেমনই বর্ণময় এর সংস্কৃতি ও পারম্পরিক ঐতিহ্য। বস্তুত দামন অবস্থিত গালফ্ অফ খাম্বাট অংশে এবং গুজরাতের কাথিয়াওয়াড়ের অনতিদূরের একটি দ্বীপ হল দিউ। দামন, যেতে হয় গুজরাতের ভাপি থেকে।

পর্তুগিজ সংস্কৃতির ছাপ নিয়ে আজও আপন মহিমায় উজ্জ্বল দামন। এই দ্বীপভূমি দুটি ভাগে বিভক্ত। মোটি দামন (বড়ো অংশ) এবং নইন দামন (ছোটো অংশ)। আপনার মধুচন্দ্রিমার সুন্দর মুহুর্তগুলো কাটান মোটি দামন-এর ঐতিহাসিক কেল্লা ভ্রমণে। সপ্তদশ শতকের চার্চ দেখে ব্রিজ পেরিয়ে চলে যান নইন দামন।

সেন্ট জেরোম-এর মূর্তি সম্বলিত তোরণদ্বার রয়েছে ওখানে আপনারই অপেক্ষায়। দামনগঙ্গা টুরিস্ট লজে থেকে, বেড়িয়ে নিন মিরাসল ওয়াটার পার্ক ও কড়েয়া লেক গার্ডেন। উপভোগ করুন দেভকা বিচের সৌন্দর্য। প্রেমের উদযাপনে সাক্ষী করুন সূর্যাস্তের কমলারঙা আলো।

সি-ফুড-এর মজা নিতে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে দিউ। বান্ডার রোড ধরে আপনার সফর চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সমুদ্রের ধার ঘেঁষা এই পথের ধারে আমোদপ্রমোদের নানা উপকরণ ছড়ানো। চাইলে একটি মোপেড বা স্কুটার ভাড়া করে নিন দু’জনে।

দিউ-এর কেল্লাটিও ঘুরে দেখার মতো। আরব সাগরের ধারে পর্তুগিজদের তৈরি এই অনন্য স্থাপত্য তাক লাগিয়ে দেয়। তিনদিকে সমুদ্র ঘেরা এই কেল্লায় বেড়াতে বেড়াতে কোথা দিয়ে সময় কেটে যাবে, টের পাবেন না। টুরিস্ট বোটে জলসফরে পৌঁছোন পানিকোঠা। ছোট্ট একটি লাইটহাউস, একসময় যা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। সেই আন্ডার-সি-টানেল এখন আর নেই বটে, কিন্তু স্থানটির রহস্যময়তা এখনও অক্ষুণ্ণ।

দেখার জন্য আরও আছে, নাগোয়া বিচ এবং এর অদূরে একটি অভয়ারণ্য। নাগোয়ায় ওয়াটার বাইক-এ চড়ে মজা নিন ওয়াটার স্পোর্টস্-এর। নাগোয়ার সি-শেল মিউজিয়ামটাও বেশ জনপ্রিয়। ঘোলা বিচ এবং গঙ্গেশ্বর মন্দিরও রাখতে পারেন আপনার ভ্রমণ তালিকায়।

তবে মধুচন্দ্রিমার মূল আনন্দই হল পরস্পরকে কাছ থেকে জানা। তাই যতটা পারেন পরস্পরকে সময় দিন, আনন্দে আদরে কাটিয়ে দিন এই অমূল্য মূহুর্তগুলো।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...