ফ্যামিলি ফ্লোটার স্বাস্থ্যবিমা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের খরচ ছাড়াও হাসপাতালে ভর্তির পরের খরচা, ওষুধের খরচ, ডাক্তারের ফিজ এবং সবরকম স্বাস্থ্যপরীক্ষা এই বিমার অন্তর্ভুক্ত। ফ্যামিলি ফ্লোটার স্বাস্থ্যবিমা যোজনা সাধারণত একজন ব্যক্তি, তার জীবনসঙ্গী এবং তাদের সন্তানদের কভারেজ দেয়। কিছু কিছু বিমা কোম্পানি অবশ্য বিমা যে-করাচ্ছে তার আশ্রিত মা-বাবা, ভাই-বোন এবং শ্বশুর-শাশুড়িকেও কভারেজ দেয়।

লিমিট / সাব লিমিট-এর প্ল্যান নেবেন না

অনেক Health Insurance পলিসি-তে হাসপাতালে রুমের ভাড়ার টাকার একটা সীমা দেওয়া থাকে। যেখানে এরকম লিমিট দেওয়া থাকে, সেই পলিসি না নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। এটা আপনার ওপর নির্ভর নয় যে, আপনার চিকিৎসার সময় আপনাকে কোন রুমে রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেরকম গুরুতর সমস্যা হলে বেশ কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন পড়তেই পারে। এই অবস্থায় যে-বেড বা রুম অ্যাভেলেবল থাকে সেটাই নিতে হয়। হাসপাতালকে বলা যায় না যে, রোগীকে সস্তার বেড-এ শিফ্‌ট করান। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানি যদি খরচার জন্য কোনও সাব লিমিট মেনশন করে দিয়ে থাকে, তাহলে পেশেন্ট পার্টির জন্য সেটা খুবই অসুবিধাজনক। স্বাস্থ্যবিমা কেনার সময় বা রিশেপ করাবার সময় এই সাবধানতাগুলি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এবং এরকম পলিসি কিনবেন না।

আজীবন রিনিউ করার সুবিধা

এমন পলিসি বাছুন যেটা সারাজীবনে যে-কোনও সময় রিনিউ করা যাবে। আসলে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের অসুখ ঘিরে ধরে। বেশিরভাগ সময় ততদিনে অফিস থেকে কর্মবিরতিরও সময় চলে আসে। তখন চিকিৎসার জন্য জমাপুঁজিতে হাত না দিয়ে আর উপায় থাকে না। সুতরাং এই খেয়ালগুলি রাখাও খুবই জরুরি।

করোনা কবচ

করোনা অতিমারির জন্য আলাদা করেও বিমার ব্যবস্থা আছে। আইআরডিএআই-এর নির্দেশমতো বিমা কোম্পানিগুলি করোনা স্পেশাল পলিসি লঞ্চ করেছে। করোনা কবচ হিসেবে এটি পরিচিত। এর জন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার অর্থ ধার্য করা হয়েছে। এই পলিসি শর্ট টার্ম-এর জন্য সাড়ে তিন মাস, সাড়ে ছয় মাস এবং সাড়ে নয় মাসের জন্য করা যেতে পারে।

বাড়িতে চিকিৎসা করালে বিমার লাভ

বর্তমানে করোনার মতো সংক্রামক অসুখে অনেক বিমা কোম্পানি, বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর খরচও কভার করছে। এছাড়াও সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ভর্তি হওয়া রোগীরও চিকিৎসার খরচ কভার করছে। বিমা করাবার সময় আপনার বেছে নেওয়া কোম্পানি এই সুবিধা দিচ্ছে কিনা দেখে নিন।

অতিমারি যেন কভার করে

অধিকাংশ Health Insurance করোনার মতো অতিমারি কভার করে ঠিকই কিন্তু কোনও কোনও পলিসি কভার করেও না। পলিসির কাগজপত্র পুরো পড়ে তবেই পলিসি নিন। ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার মনীষা অগ্রওয়াল জানালেন, পলিসি নেওয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস খেয়াল রাখা একান্ত দরকার, যেমন ক্যাশলেস পলিসি সবথেকে ভালো।

ক্যাশলেস পলিসি

ইনশিয়োরেন্স পলিসি ক্যাশলেস কিনা দেখে তবেই কিনুন। ক্যাশলেস ইনশিয়োরেন্স পলিসির সুবিধা হল পলিসি হোল্ডারকে হাসপাতালের বিল মেটাবার দরকার পড়ে না। সোজাসুজি হাসপাতাল ইনশিয়োরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে।

Health Insurance নেওয়ার সময় দেখে নেওয়া দরকার, যে-শহরে আপনি থাকেন সেখানকার বড়ো এবং ভালো সুবিধাযুক্ত হাসাপতালগুলি, ক্যাশলেস হাসপাতালের লিস্টে সূচিবদ্ধ আছে কিনা। এর ফলে অসুস্থ হলে কোনও সমস্যায় আপনাকে পড়তে হবে না। স্বাস্থ্যবিমার সবরকম সুবিধা আপনি পেয়ে যাবেন।

ক্লেম সেটলমেন্ট

যে বিমা কোম্পনির ক্লেম রেশিও ভালো অর্থাৎ অধীকতর ক্লেম সেটল করেছে এবং আপনার সমস্ত প্রয়োজন মেটাতে যেটি সক্ষম, সেই কোম্পানি থেকেই পলিসি করান।

রিফিল বেনিফিট-এর বিকল্প

যদি আপনার ৫ লক্ষ টাকার পলিসি থাকে এবং সেই টাকা একটা কোনও অসুস্থতার কারণে খরচ হয়ে গিয়ে থাকে এবং তিনমাস বাদে আবার নতুন কোনও অসুখ হয়ে থাকলে, পরিস্থিতির সামাল দিতে এমন পলিসি বাছা উচিত যাতে রিফিল- এর অপশন আছে। যাতে দ্বিতীয় অসুখেও আপনি চিকিৎসার টাকা বিমা কোম্পানি থেকে পেয়ে যান।

কো-পেমেন্ট এড়িয়ে চলুন

কিছু কিছু প্ল্যানস-এ কো-পেমেন্ট-এরও সুযোগ থাকে অর্থাৎ অসুখের চিকিৎসায় যতটা মোট খরচ হয়েছে তার কিছু শতাংশ পলিসি হোল্ডারকেও দিতে হয়। অনেক প্ল্যান্‌স এমনও আছে যেখানে ৬০+ ব্যক্তির জন্য বিশেষ করে কো-পেমেন্ট- এর অপশন জুড়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ বিমা কোম্পানি খরচের পুরো অর্থ বহন করবে না, কিছুটা পেশেন্ট পার্টিকেও দিতে হবে। এই ধরনের প্ল্যান কখনও নেবেন না, নিয়ে থাকলেও বদলে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

টপ-আপ প্ল্যান

পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বহু বিমা কোম্পানি টপ-আপ প্ল্যান সংযোজন করেছে। ধরে নিন আপনার ৫ লক্ষ টাকার ইনশিয়োরেন্স আছে। এতে দেড়-দুই হাজার টাকার সামান্য অঙ্ক যোগ করলেই অ্যাডিশনাল ৫ লক্ষ টাকার টপ-আপ আপনি পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ অলরেডি রানিং পলিসি ৫ লক্ষ টাকার রয়েছে আর তাতে ৫ লক্ষ টাকার টপ-আপ করিয়ে নেওয়া হলে মোট ১০ লক্ষ টাকার বিমা কভার পাওয়া যাবে। অবশ্যই এতে বেশি লাভবান থাকবেন।

সব বিমা কোম্পানির নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। স্বাস্থ্যবিমা করাবার আগে জেনে নেওয়া দরকার পলিসি কতটা এবং কী কী কভার করছে। যে পলিসি-তে সবরকম টেস্ট-এর খরচ, অ্যাম্বুলেন্সের খরচ কভার করা রয়েছে— এমন পলিসি নেওয়া উচিত। যাতে আপনার পকেট থেকে একটা টাকাও খরচ না হয়।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...