রামু ছাড়াও পাড়ায় আরেকজনের সাথে তাদের কথা হয়। পাড়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সাধনবাবুর ছোটো ছেলে রন্টু। রন্টু যখন স্কুল থেকে ফেরে, প্রতিদিন জানলা খুলে দাঁড়ায় ছায়া। ওকে দেখে। ওর দিকে তাকিয়ে হাসে। রন্টুও হাসে। মাঝে মাঝে ছায়া নীচে এসে দাঁড়ায়৷ কথা বলে। ওকে কেক বিস্কুট চকোলেট দেয়। কিন্তু কখনও ওকে ভেতরে ডাকে না।

একদিন রন্টু নিজেই ঢুকে পড়ে। নীচে সিঁড়ির দরজাটা খোলা ছিল। ওপরে উঠে যায়। ওপরের ঘরের দরজাটাও খোলা। ও একবার ডাকে ছায়াদি। কেউ উত্তর দেয় না। রন্টু দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে দ্যাখে মেঝেতে ধুলো জমে আছে। যেন অনেকদিন কেউ ঝাঁট দেয়নি। ঘরের ভেতর থেকে কেমন একটা গন্ধ আসছে— ওষুধ, ওষুধ গন্ধ। হাসপাতালে ঢুকলে যেমন পাওয়া যায়। রন্টু হঠাৎ ভয় পায়। সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।

—কি রন্টু, কোথায় যাচ্ছ? কেন এসেছিলে?

চমকে ফিরে তাকায় রন্টু। সিঁড়ির ওপর মনোময় দাঁড়িয়ে। সরু চোখে তাকিয়ে আছে। রন্টু ভয়ে ভয়ে বলে, ‘ছায়াদির কাছে এসেছিলাম।” –এসো, ওপরে এসো, মনোময় ডাকে। রন্টু ওপরে উঠে আসে।

—ছায়া, রন্টু এসেছে। ছায়া কোথা থেকে বেরিয়ে আসে। এসেই রন্টুকে দেখে থমকে দাঁড়ায়৷ কেমন কঠিন গলায় বলে, কেন এসেছিস? –দু’দিন স্কুল ছুটি ছিল। তোমায় দেখিনি তাই। মাথা নীচু করে রন্টু বলে।

পাগল ছেলে একটা। দু’দিন দেখেনি তাই ছুটে এল। বলতে বলতে রন্টুর চুলে হাত ঢুকিয়ে নেড়ে দেয় ছায়া। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে কী দেখে। তারপর নীচু হয়ে তার গালে একটা চুমু খায়।

মনোময় হঠাৎ বলে রন্টু, তুমি ম্যাজিক শিখবে?

—ম্যাজিক! তুমি ম্যাজিক জানো? রন্টু অবাক হয়।

—জানি। মনোময় অদ্ভুত ভাবে হাসে।

—কী ম্যাজিক জানো?

—এই ধরো তোমাকে আমি ভ্যানিশ করে দিতে পারি। তোমাকে আর কেউ দেখতে পাবে না। কি রন্টু, মজা হবে না?

—তুই যা রন্টু, ছায়া বলে। তার গলাটা আবার কঠিন শোনায় আর কখনও এই বাড়িতে আসবি না।

সেদিন রাতে প্রতিবেশিনী শুনতে পায়—

—রন্টুকে তুমি আদর করলে?

—তো কী হল?

—ওকে চুমু খেলে?

— তো?

—আমাকে দিয়ে বুঝি আর মন ভরছে না?

—বাজে কথা বলবে না। ও আমার ভাই!

নীচু গলায় হাসি শোনা যায়।

—ভাই নয় বলো তোমার ভাইয়ের ছায়া।

আবার একদিন আসে রন্টু। সিঁড়িতে উঠে ডাকে, ছায়াদি। কোনও উত্তর নেই। কী ভেবে সে ভেতরে ঢুকে যায়। বেডরুমের দরজায় চলে আসে— বিছানায় তখন মনোময় ও ছায়ার শরীর পরস্পরের সাথে মিশে যাচ্ছে!

রন্টু হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে!

হঠাৎ করেই বুঝি ওরা বুঝতে পারে। ছায়া তাড়াতাড়ি উঠে নাইটিটা পরে নেয়। মনোময় শান্ত ভাবে প্যান্ট পরতে পরতে বলে, ‘এদিকে এসো রন্টু।” রন্টু নড়ে না।

ছায়া ওর পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে, নরম গলায় বলে, ‘ভয় নেই রন্টু!” তারপরেই ব্যস্ত গলায় বলে, “তোর হাত কাটল কী করে?” রন্টুর হাতের কনুই থেকে রক্ত গড়িয়ে নামছে। রন্টু করুণ মুখে তাকায় বলে, মাঠে খেলতে গিয়ে পড়ে গেছিলাম। বাবা বকবে।

—বকবে না, কেউ বুঝতে পারবে না বলতে বলতে মনোময় উঠে আসে। তোমার হাতটা দাও রন্টু, রক্ত পরিষ্কার করে দিই।

—না, তুমি ওকে ছোঁবে না, ছায়া বলে।

—না কেন? ওর হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেব। ওষুধ দিয়ে দেব।

—না। এবার প্রায় চিৎকার করে ওঠে ছায়া। কেমন অস্বাভাবিক গলায় বলে চলে— যা রন্টু, যা বলছি, বাড়িতে গিয়ে ডেটল লাগিয়ে নিবি। রন্টু ছুটে পালায়। পেছন থেকে মনোময়ের হাসির শব্দ ভেসে আসে।

—তুমি তো ওকে ভয় পাইয়ে দিলে ছায়া।

এর কয়েকদিন পরের ঘটনা। যথারীতি চায়ের দোকানে সবাই এসেছে। গল্প হচ্ছে। তার মধ্যেই সবার চোখ চলে যাচ্ছে সামনের বাড়ির জানলায়। ঘরে আলো জ্বলেছে। এখনই ছায়াছবি শুরু হবে। তারপরেই হঠাৎ করে ঘরের আলোটা নিভে গেল, নিভে গিয়েই আবার জ্বলে উঠল।

ক্রমশঃ……

অঙ্কনঃ লেখক

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...