পরিস্থিতির ফেরে হঠাৎই পরিবারে আবার অপরিহার্য হয়ে ওঠেন একদা ব্রাত্য হয়ে যাওয়া সুভাষিণী। খুঁজে পান হারানো সময়গুলো এবং এমন এক বহুমূল্য সম্পদ, যা জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বহুদিন।

তিনদিন টানা বৃষ্টির পর আজ কমেছে। রোদ দেখা দিয়েছে বাড়ির আনাচেকানাচে। সকলের আগে এ বাড়িতে ওঠে ছোটোবউ মাধবী। কারণ তার ছেলেকেই স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করিয়ে দিতে হয়। বারোমাস তার মর্নিং স্কুল।

এরপর একে একে বাড়ির অন্যেরা উঠবে। ওর শাশুড়ি অবশ্য অনেক আগেই ওঠেন। খুব প্রয়োজন না থাকলে তিনি ভিতরের দিকে আসেন না। এই সময়টা তিনি ‘ঠাকুর গোপালকে’ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

লোকে বলে, সারাদিন কেমন যাবে তা বোঝা যায় দিনের শুরু দেখেই। বেশ তো রোদ ঝলমলে সকাল আজ। কিন্তু রাঁধুনি বা সারাদিনের কাজের মেয়ে কেউ তো এখনও এল না। প্রতিদিন রান্নার মেয়ে সরমা এসে সবাইকে চা দেয়। আজ এত দেরি করছে কেন?

একে একে সবাই উঠে এসেছে মাধবীর শোরগোল শুনে। এখন এতগুলি লোকের চা-ই বা করে কে? গতকালের বাসনও তো কম নয়। সেগুলিই বা মাজে কে? তারপর অন্যান্য কাজ তো আছেই। কে করবে এত সব? গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে বড়োবউ। সে বলে, ‘তাইতো এত দিন জলে ভিজে এলি, আর আজকের দিনেই নেই। দুটোর একটাও তো আসতে পারত। এখন কী হবে?’

বড়োকর্তা বলে, ‘বাসনগুলো বরং কুয়োতলাতে নামিয়ে দাও। আমি আর সমু মিলে মেজে ফেলি। তোমরা কেউ চা-টা করার ব্যবস্থা করো।”

বড়োবউ বলে, ‘তারপর এতগুলো লোকের রান্না করবে কে? আমার খুব মাথা ধরেছে। মেজোবউয়ের শরীর তো গতকাল থেকেই খারাপ। সেজোবউয়ের তো এখন বেডরেস্ট চলছে, আর ছোটোবউ সে তো কখনও এসব কাজ করে না। তারচেয়ে আজ তোমরা হোটেলে খাওয়ার ব্যবস্থা করো। যে যার খেয়েদেয়ে অফিসে চলে যাও।’

‘ছেলেমেয়েদের কী হবে? ওরা কোথায় খাবে? তোমরাই বা কী করবে? তার চেয়ে ভাতটা বসিয়ে দাও কেউ একজন। ফ্রিজে তো মাছ আছে। স্রেফ ঝোল-ভাত। মা তো নিজেই নিজেরটা করে নেন।’ কথাগুলি বলে মেজোভাই সুরেন। মেজোবউ বিনতা বলে, ‘তা সরমার কামাই করার মতো কী হল? বলেও তো যেতে পারত।’

‘হয়তো শরীর খারাপ হয়ে থাকবে। জলে ভিজে ভিজে এসেছে তো এ ক’দিন।

‘কাজের মেয়ের হয়ে কথা বোলো না তো। আর চাপা, সে-ই বা এল না কেন? আসলে আগে থেকে ঠিক করে আসেনি। জব্দ করছে।’ সেজোবউ কথাগুলি বেশ ঝাঁঝের সাথেই বলে। এভাবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বেলা ক্রমশ বেড়েই চলে।

মেজোবউ অতিকষ্টে এতগুলি লোকের চা করে এনেছে। সবারই এক চিন্তা, এত কাজ হবে কীভাবে। চার জনের সবারই দুটি করে ছেলেমেয়ে। সেজোবউয়ের তো আবার হবে। সেজোভাই শুভ বলে, ‘বড়দা তুমিই বরং ভাতটা বসিয়ে দাও। ভাতের সঙ্গে কয়েকটা আলু ছাড়িয়ে দিয়ে দাও। আমি মশলা বেটে দিচ্ছি। তারপর মাছের ঝোলটা যা হোক করে হয়ে যাবে। নুন একটু দেখেশুনে দিতে হবে। সত্যি এবাড়ির বউগুলির আর রান্নার ক্ষমতা নেই। বরং আর একটি লোকের ব্যবস্থা করো।’

(ক্রমশঃ…)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...