হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরে কাকলিকে খুব একটা খারাপ লাগল না অরিত্রর। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটা চায়ের দোকানে বসে কাকলিই প্রথম কথা শুরু করল। বলল, “আপনাকে কষ্ট না দিয়ে আমার উপায় ছিল না, অরিত্রবাবু। আমার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেননি তো আপনারা?”
—না। আপনাকে খোলাখুলি বলি,আমরা কলকাতায় এসে আরও দুটি মেয়েকে দেখেছি। —পছন্দ হলে ওই দুটি মেয়ের একটিকে বেছে নিন। আমাকে বিয়ে করবেন না অরিত্রবাবু।
বিস্ময়ে অরিত্রের মুখ হাঁ হয়ে গেল। মা-বাবার কাছে অরি্ত্র শুনেছে ঈর্ষাবশত কুচুটে পাড়াপড়শিরা বেনামি চিঠি লিখে বা ফোন করে কোনও মেয়ের বিয়ে ভাঙিয়ে দিত আগের দিনে। কিন্তু নিজের বিয়ে ভাঙতে মেয়ে নিজেই এসে হাজির! নিশ্চয়ই ও অন্য কাউকে ভালোবাসে। হয়তো পাড়ার কোনও দাদা হবে। কিন্তু এটা তো ওকে ফোনেও বলা যেত।
—এ কথাটা বলার জন্যই কি আমাকে এতদূর ডেকে আনা জরুরি ছিল? একটু বিরক্ত হয়েই বলল অরিত্র।
—না, আমি আপনাকে চোখ মেরে দিয়েছিলাম তার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইতেই আপনাকে ডেকে আনলাম। কাকলি দুই হাত জোড় করে মাথা ঝুঁকিয়ে ক্ষমা চাইল ওর কাছে।
অরিত্র বুঝতে পারল না কাকলি নাটক করছে না সত্যিই দুঃখ প্রকাশ করছে ওর ফিচলেমির জন্য।
—তা আমাকে দেখে চোখ টিপলেন কেন বলুন তো?
—আপনাকে এক নজর দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি, আমরা যাকে সত্যিকার ‘ভালো ছেলে' বলি তাই। হঠাৎ কীরকম বদবুদ্ধি মাথায় চেপে গেল, চোখ টিপে দিলাম। আপনারা চলে যাবার পরে মনে হল শেষ পর্যন্ত যদি আপনি আমাকে পছন্দ করে বসেন তবে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে আর সেটা ঠেকাতেই এখানে ছুটে আসা।
—আপনি আমাকে ধন্দের মধ্যে ফেলে দিলেন। একদিকে আমাকে ভালো ছেলে বলছেন, অন্যদিকে আপনাকে বিয়ে করতে নিষেধ করছেন... আসল ব্যাপারটা কী খুলে বলুন দেখি?
চায়ে চুমুক দিয়ে কাকলি বলল, ‘আসলে আমি আপনার মতো ভালো ছেলের বউ হতে চাই না। আমার হিস্ট্রি জিওগ্রাফি কোনওটাই ভালো নয়। পাড়ার একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, সেটা এতদূর গড়িয়েছিল যে শেষে অ্যাবর্শন করাতে হল। ও আমাকে ডিচ্ করে আমারই এক কলেজের বান্ধবীকে পয়সার জন্য বিয়ে করল। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাদা-বউদি ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে আমার ছবি আর বায়োডাটা দিয়ে দিয়েছিল। এই নিয়ে তিনবার নিজের বিয়ে ভাঙলাম আমি। অন্যকে ঠকাতে মন চায় না যে, কী করব বলুন?'