রাত্রে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া করে অমিতাভ দেখল ওই একই এসএমএস তিনবার এসেছে। সে উত্তর দেবে না ভেবেও উত্তর দিল। সে লিখে পাঠাল ডায়ালেসিস কী এবং ওই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনামূলক কয়েকটি বইয়ের নাম।

পরের দিন সন্ধ্যায় অমিতাভ যখন ছাদে পায়চারি করছিল তখন আবার ওই অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল। সে ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপার থেকে মেয়েলি গলা এল, ‘আপনি যদি মৃণাল না হন তাহলে ডায়ালেসিসের ব্যাপারে জানলেন কী করে!’

অমিতাভ বলল, “আমি ডাক্তার। আমার নাম অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনার নাম কী? আপনি কী করেন?” মেয়েটি বলল, “আমার নাম প্রিয়া খাতুন। আমি একজন নার্স। আর জি কর মেডিকেল হসপিটালে কাজ করি।” অমিতাভ মেয়েটার গলার স্বরে একটু হকচকিয়ে গেল। হঠাৎই তার চোখে ভেসে উঠল আর জি কর হাসপাতাল আর পান্নার মুখটা। সে জোর দিয়ে বলল, “তোমার বাড়ি কি বহরমপুর ?”

প্রিয়া বলল, ‘হ্যাঁ।’ প্রিয়ার মুখ থেকে বহরমপুর শোনার পর অমিতাভর দৃঢ় বিশ্বাস হল প্রিয়াই পান্না। প্রিয়াকে যাচাই করার জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন সিনিয়র ডাক্তার ও নার্সদের নাম জানতে চাইল অমিতাভ। প্রিয়া সব ঠিক উত্তর দিল। প্রিয়ার সঙ্গে তার সেদিন ফোনে বেশ কিছুক্ষণ কথা হল।

কয়েকদিন প্রিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর অমিতাভ তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার নাম কি পান্না?” প্রিয়া অস্বীকার করল না। সে শান্তস্বরে বলল, ‘আমার ডাকনাম পান্না। ওই নামেই হাসপাতালের বেশিরভাগ লোক চেনে।” প্রতিদিন নিয়ম করে প্রিয়া অমিতাভকে ফোন করত। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের কথাবার্তা হতো। দেখতে দেখতে নভেম্বর মাস শেষ হয়ে গেল।

ডিসেম্বর মাসে অমিতাভর কাছে প্রিয়ার কোনও ফোন এল না। প্রিয়ার ফোন না পাওয়ায় তার ভিতর থেকে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ হতে লাগল। সে ভাবল, কাজের ব্যস্ততায় ফোন করার সময় না থাকতেই পারে প্রিয়ার। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সে একটা এসএমএস তো করতে পারত। অমিতাভ নিজে থেকে প্রিয়ার ফোনে বহুবার ফোন করে। প্রিয়া ফোন রিসিভ করে না। অমিতাভ অভিমানে ফোন থেকে প্রিয়ার নম্বরটাই ডিলিট করে দেয়। কিন্তু ইনবক্সে প্রিয়ার পাঠানো মেসেজগুলো থেকে যায়।

জানুয়ারির শেষের দিকে প্রিয়া একটি নম্বর থেকে ফোন করে অমিতাভকে। অমিতাভ অচেনা ওই নম্বর রিসিভ করে বলল, “কে বলছেন?’ প্রিয়া গলার স্বর নামিয়ে বলল, “চিনতে পারছেন না। আমি প্রিয়া। ফোনে আপনার সঙ্গে কথা বলতাম।’ অমিতাভর চিনতে ভুল হল না প্রিয়াকে। অমিতাভ বলল, ‘কী ব্যাপার! এতদিন কোনও পাত্তা নেই। এতগুলো দিন পর মনে পড়ল!’

প্রিয়া বলল, ‘আমার পরীক্ষা চলছিল। তাই একদম সময় পাইনি।’ যাইহোক সেদিন অনেকক্ষণ কথাবার্তা চলল দু’জনের। প্রতিদিন ফোনে নিয়ম করে কথাবার্তায় ধীরে ধীরে একে অপরকে ‘আপনি’, সম্বোধন ‘তুমি’-তে পরিণত হল। অমিতাভ-প্রিয়ার বন্ধুত্বও গাঢ় হল। বন্ধুত্ব যে দু’জনের অজান্তেই কখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে কেউ তা টেরও পায়নি। চার মাস এভাবেই কেটে গেল৷

মে মাসে অমিতাভ-প্রিয়ার বাক্যালাপ সম্পূর্ণ বন্ধ। প্রিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা না হওয়ায় অমিতাভর মন মেজাজ একেবারে ঠিক নেই। তার সবকিছু থেকেও বিরাট এক শূন্যতা সারা হৃদয় জুড়ে। সে শূন্যতা শুধুমাত্র প্রিয়াই পূর্ণ করতে পারে। প্রিয়া কোনও কারণ ছাড়া ফোন বন্ধ করায় তার খুব খারাপ লাগে। নিজেকে চরম অসহায় ও একাকী লাগে। অমিতাভ ভাবল যে প্রিয়া কি তাকে একেবারেই ভুলে গেল!

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...