ভ্রমণ মানসিক চাপ কমানো এবং নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভালো উপায়। ছুটির সময়টা বাড়ির বাইরে গিয়ে কাটান। দেখবেন আপনি দৈনন্দিন ঝামেলা থেকে দূরে থাকবেন। ছুটি শেষে যখন ঘরে ফিরবেন; তখন একটা সতেজ বোধ এবং অনুপ্রেরণা কাজ করবে। দু-একদিন ছুটি পেলেই বেড়িয়ে পড়ুন কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে। হাতের কাছেই দু’রাত তিন দিনের ছোট্ট ছুটি কাটাবার  ডেস্টিনেশন-এর হদিশ দিচ্ছি আমরা৷

পলাশবাড়িমুরাডি

উইকএন্ড-এর জন্য মুরুডি আকর্ষণীয় ডেস্টিনেশন। জল-জঙ্গল-পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট স্টেশন মুরুডি। অল্প লাগেজ নিয়ে রেলপথে অনায়াসে চলে যেতে পারেন। মুরুডির মূল আকর্ষণ হল সবুজ জঙ্গুলে টিলা আর ড্যাম।

হাত বাড়ালেই বড়ন্তি হিল। ঠিক মাঝখানেই ছবির মতো ড্যাম। গা ঘেঁষে উঠে যাওয়া সবুজ পাহাড় ও নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি পড়েছে ড্যামের জলে। সানরাইজ ও সানসেটের সময় শান্ত সেই জলে, রঙের খেলা মনকে ভরিয়ে দেয়।

কলকাতা থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়ার এই ছোট্ট গ্রাম বড়ন্তি। শাল, সেগুন, মহয়া গাছের ছায়ায় ঘেরা নিবিড় অরণ্যের বুকে জনা বিশেক পরিবার নিয়ে এই গ্রাম। বড়ন্তি লাগোয়া ছোটো ছোটো টিলাকে সঙ্গী করে দাঁড়িয়ে এক আশ্চর্য হ্রদ মুরাডি। প্রচুর পাখি আর প্রজাপতির আনাগোনা এখানে। পূর্ণিমার রাতে চাঁদ যখন লুটোপুটি খায় হ্রদের জলে, মোহময়ী হয়ে ওঠে বড়ন্তি। প্রকৃতির এই রূপ ভোলার নয়। বড়ন্তি বর্ষায় বা শীতকালের একটা উইকএন্ড, প্রকৃতির কোলে কাটানোর জন্য দারুণ জায়গা। নিরিবিলিতে নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। গ্রামের বর্ণনা শুনেই আসার জন্য মনটা ছটফট করছে নিশ্চয়ই, বেশি কিছু ভাবার দরকার নেই দুদিন হাতে সময় থাকলেই হল। ব্যাগ গুছিয়ে রাতে হাওড়া চক্রঝরপুর প্যাসেঞ্জারে উঠে পড়ুন। সকালেই নেমে যাবেন আদ্রা, সেখান থেকে আসানসোল প্যাসেঞ্জারে মুরাডি। এখানে মোটামুটি নানা দামের ছোটো রিসর্ট পাবেন৷ মানভূম হলিডে হোমও থাকার জন্য বেশ ভালো।

মুরাডির যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই পাহাড়শ্রেণি। হাতে সময় থাকলে পঞ্চকোট হিল ও বিহারিনাথ হিলেও ঘুরে আসতে পারেন। শাল, মহুয়া, পিয়াল, পলাশের জঙ্গলের নিরিবিলির মধ্যে বেড়িয়ে পড়ুন। ভাগ্য ভালো থাকলে হাঁটার পথে সজারু, শেয়াল বা বনমোরগের দেখা মিলতে পারে।

নাম-না-জানা পাখির কলরবে ঘুম ভাঙা, ড্যামের ধারে বসে পাখিদের জলকেলি বেশ উপভোগ্য। দেখার মতো বহু জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুরাডির আনাচেকানাচে। শুধু মনের জানালাটা খুলে দিতে হবে। আসানসোল থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে মুরাডি।

মুরাডির থেকে পা বাড়ালেই পলাশবাড়ি। বসন্তকালে পলাশবাড়ি রীতিমতো রোম্যান্টিক। কটেজের জানালা আর বারান্দা থেকে যেদিকে চোখ যায়, শুধু লাল। ভোরের আলো-আঁধারির মধ্যে পলাশ ছড়ানো রাস্তায় হাঁটা, আজীবন রয়ে যাবে স্মৃতিপটে।

ইকো ইভেন্ট, অ্যাডভেঞ্চার, ট্রেকিং, ফিশিং, ট্রাইবাল ভিলেজ ভিজিট, ছৌ বা সাঁওতাল ডান্স— উইকএন্ড সফরের জন্য আর কী চাই। সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে সবুজের মাঝে গড়ে ওঠা কটেজ বেশ আকর্ষণীয়, কংক্রিটের জঙ্গলে থাকা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য। সবমিলিয়ে প্রকৃতির তারিফ করতেই হবে পলাশবাড়িতে পা রেখে।

কীভাবে যাবেন : হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে ভায়া ডানকুনি-ব্যান্ডেল শাখায় বর্ধমান- আসানসোল-মধুকুণ্ডা পেরিয়েই মুরাডি স্টেশন। মুরাডি থেকে পলাশবাড়ি মাত্র ৬ কিলোমিটার। গাড়ি, রিকশা নিয়ে পৌঁছে যান। গন্তব্যে।

কোথায় থাকবেন : বড়ন্তির সরকারি গেস্টহাউসেও থাকতে পারেন। না পেলে বেসরকারি হোটেলও রয়েছে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...