প্র: আমার বয়স ৪৫৷ একটি কর্পোরেট সংস্থায় প্রায় ২৬ বছর কর্মরতা৷ কাজের দক্ষতা অর্জন করে, পদাধিকার বলে আমি এখন উচ্চ পদে আসীন৷ কিন্তু ইদানীং একটা সমস্যা হচ্ছে৷ আমি চট করে মেজাজ হারিয়ে ফেলছি৷ অধস্তনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি৷ পরে অনুতাপ হচ্ছে৷ কখনও কখনও তাদের ডেকে পরে ক্ষমাও চেয়েছি৷ কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে অনেক চেষ্টা করেও রাগকে সংযত করতে পারছি না৷ একটু কাজের চাপে থাকি৷ হতে পারে মেজাজ হারানোর সেটা একটা কারণ৷ কিছু উপায় বলুন নিজেকে নিয়ত্রণ করার৷

 

উ: রাগ ও দুশ্চিন্তা হল প্রতিটি মানুষের নিজের চিন্তা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ। একটু সচেতন হলেই আপনি এই দুটোই কমাতে পারেন। অসলে রাগ কখনও আমাদের উপর এসে ভর করে না। আমরাই একে ডেকে আনি।  আমাদের প্রতিকূলে কোনও কিছু যেমন কারও কথা, আচরণ কিংবা কাজে অবহেলা দেখলে আমরা মনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। আসলে আমাদের নিজেদের মতো কাজের পারফেকশন অন্যদের মধ্যেও খোঁজার চেষ্টা করি৷ অশানুরূপ ফল না পেলে আমাদের মন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

যে-কোনো মানুষের শরীরেই রাগ থাকে, তবে অতিরিক্ত রাগ হলে সেটা অস্বাভাবিক। এটাকে বলে  ইমপালস কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার৷ যারা কোনও কারণ ছাড়াই রাগে ফেটে পড়েন,  অস্বাভাবিক আচরণ করেন, পরে ভুল বোঝেন। অপনি একা নন, আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা এই রোগে ভুগছেন।এর পেছনে লুকিয়ে থাকে কোনও না কোনও মানসিক বা সামাজিক সমস্যা। অতিরিক্ত রাগ শরীরে নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে। পারিবারিক, সামাজিক জীবন ও পেশাগত জীবনকে ব্যাহত করে।

কোনও কিছুর প্রভাব যখন আপনার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে তখনও আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয় রাগের মাধ্যমে৷ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন৷ নিউরোট্রান্সমিটারের ইমব্যালেন্স যেমন, মস্তিষ্কে সেরোটিনের অভাব হলে রাগ বেড়ে যায়। এছাড়া অস্বাভাবিক বিষণ্নতা, অতিরিক্ত টেনশন,  বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার—এগুলিও রাগের কারণ হতে পারে৷ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, এই জাতীয় কিছু আপনার আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করান এবং উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করুন৷

তবে আমার মতে রাগ মনের ভিতর পুষে রাখার চেয়ে সেটা প্রকাশ করে ফেললে তা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু অফিস কাছারিতে এটা করাটা দস্তুর নয়৷ তাহলে এই রাগের প্রতিকার কী?  যখন আপনি বুঝবেন যে আপনি মেজাজ হারাতে চলেছেন, তখন অবিলম্বে নিজের নিঃশ্বাসের দিকে মন দিন এবং চিন্তা করুন যে কেন? ঠিক কী কারণে আপনি রাগ করছেন? আপনার কি রাগ করাটা জরুরি? আপনি তো রাগ কমাতে চান! তখন অন্যকে এবং নিজেকে ক্ষমা করে দিন। দশ অবধি মনে মনে গুনুন৷ আস্তে আস্তে মনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাবেন৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...