ইন্টারভিউয়ের পরে কোথায় যাবে? বাড়িতে?’ ইন্টারভিউয়ের বাইরে বেরিয়ে এই সমস্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন! মনে মনে তল খুঁজে পাচ্ছিল না ঋতম! আশ্চর্যের বিষয় চাকরি দিতে বসে মহিলা একের পর এক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন অথচ বাকিরা কেউ কোনও কথা বলছেন না। ঋতম ধরেই নিয়েছিল ওনার হাতেই সবকিছু। তাই বাকিরা নিশ্চুপ। যাই হোক চাকরিটাও তো তার দরকার। কাজেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

‘না টিউশন পড়িয়ে তবে বাড়ি ফিরব।’

‘কোথায় থাকো?’

“এখান থেকে ঠিক আধ কিলোমিটার দূরে গুরুজির আশ্রমে থাকি।’

“ওহ্ আচ্ছা সদানন্দ গুরুজির আশ্রমে? বহুবার গিয়েছি। আর তোমার মা?’

“মা অসুস্থ। মাসখানেক হল আশ্রমেরই হাসপাতালে ভর্তি।’

“ঠিক আছে, এবার তুমি যেতে পারো।’

কথাটা শোনামাত্রই শরীর রিরি করে ওঠে ঋতমের। ভাবে দু-এক কথা শুনিয়ে তারপর যাবে। কিন্তু বড়োদের অনাদর করতে তো সে শেখেনি তাই কোনওমতে সামলে নেয় নিজেকে।

ফাইল হাতে নিয়ে বেরোতে বেরোতে ভাবতে থাকে ‘সে তো চাকরিটা পাবে না ভেবে উঠেই পড়েছিল, তাহলে আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে বসানো কেন? যত্ত সব। একটাও তো কাজ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করল না। আর তার কী যে হল, গড়গড় করে সেও সব পেটের কথা বলে বসল। মনে মনে নিজেকেই দোষারোপ করতে থাকে সে। এ-পৃথিবীতে বরাবরই দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার হয়ে এসেছে। ভাবতে ভাবতে ইন্টারভিউ রুম থেকে বেরিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়াতেই পিয়োন বলে গেল, ‘কোথায় যাচ্ছেন। একটু পরেই ইন্টারভিউ-এর ফল জানানো হবে। শুনে যাবেন।’

কী এক অজানা প্রত্যাশায় বসে পড়ে বেঞ্চের এক কোণায়। কিছুতেই ওই মহিলাকে মাথা থেকে বের করতে পারছে না সে। হঠাৎই মনে পড়ে যায় তাকে প্রথম একঝলক দেখেই মহিলা কেমন যেন চমকে উঠেছিল। তারপর থেকেই তো… মাথা গুলিয়ে যাচ্ছিল ঋতমের।

অন্যসময় ইন্টারভিউয়ের ফলাফল নিজেই জানিয়ে দেন কাকলি। সেদিন যে কী হল ডিসিশন নেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজারের উপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ড্রাইভারের আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন না। এর আগেও বেশ কয়েকবার আশ্রমে এসেছেন। বাচ্চাদের জন্য প্রতিবার হাজারো গিট সঙ্গে করে এনেছেন। তবে এইবারের উদ্দেশ্যটা বোধহয় একটু আলাদা।

আশ্রমের গেটের ভিতর গাড়ি থামিয়ে সোজা ম্যানেজমেন্টের ঘরে। এই আশ্রমে মোটা টাকা ডোনেশন দেওয়ার কারণেই ওনার বেশ দহরম-মহরম। কাকলি-র খোঁজখবর নেওয়ার পর একজন তাকে ছেড়ে গেল কাকলির ঘরের কাছে। ঘরে ঢোকার আগে একটু ইতস্তত করলেন বটে, কী বলবেন? কেন তিনি এখানে এসেছেন? উত্তর পাওয়ার আগেই চোখে পড়ল শীর্ণকায় এক মহিলা বেড-এ শুয়ে আছেন। ওটাই ঋতমের মা কাকলি। দেখে মনে হল তার সম্পর্কে একদিন তিনি যা শুনে এসেছেন তার থেকে এক বর্ণও কম নয়। রোগের কারণে গায়ের রং খানিক চেপে গেলেও দীপ্তির ছটা আজও অব্যাহত। চুলে খানিক পাকও ধরেছে তবু টানাটানা চোখ আর টিকোলো নাকের কাছে সে-সব সামান্য খুঁত চোখে পড়ার মতো নয়। খানিক তাকিয়ে থাকার পর ধীর পায়ে তার সামনে গিয়ে হাসলেন কাকলি। একজন অচেনা অপরিচিত মহিলাকে হাসতে দেখে উঠে বসলেন তিনি। “আমি তো ঠিক….!’

“আমি কাকলি ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মালিক কাকলি।’

নামটা শুনে ঋতমের মা কাকলিও মৃদু হেসে বললেন, ‘আমার নামও তো কাকলি। কিন্তু আপনি আমাকে কীভাবে…?’

“আপনার ছেলে আমার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল।’

“ঠিক বুঝলাম না। চাকরির জন্য গেল আর আপনি…

(ক্রমশ…)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...