আমি ই-মেইলে উত্তর দিয়েছিলাম, “ইয়েস স্যর, তুমি যখন চাও তখন দেখা হবেই। তা আমার চাকরি থাকে আর যায়!” চাকরি অবশ্য যায়নি, আসলে আমার তখনকার বস ছিল শুভ’র খুব গুণমুগ্ধ আর বেনারসেরই মানুষ। ওনাকে যখন জানালাম শুভ’র ইচ্ছা তখন উনি আপত্তি তো দূরের কথা উনিই জোর করে আমাকে অফিসিয়াল টুর বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

মনে পড়ে, শুভ সেমিনারের গাড়ি নিয়ে স্টেশনে এসেছিল আমাকে নিয়ে যেতে। কী ভীষণ খুশি হয়েছিল ও। স্টেশনে ভিড়ের মাঝেও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘শোভন, আমি খুব খুশি তুমি এসেছ বলে।”

আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, ‘প্রফেসর পাণ্ডে ডেকেছে, আমি না এসে পারি?’

বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম কথাটা বলে। ও সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ও কে, প্রফেসর পান্ডে বলছে, কাম টু আমেরিকা টু ওয়ার্ক উইথ হিম।”

আমি ধরা পড়ে গিয়ে বলেছিলাম, “ওকে, সে দেখা যাবে। সব কথা কি স্টেশনেই বলবে না হোটেলে যাবে?”

—ওকে, বলে আমার হাত ধরে স্টেশনের বাইরে নিয়ে এসেছিল। কি ভীষণ একাগ্রতা আর ঘনিষ্ঠতা ছিল ওর মধ্যে তখন। সেমিনারের তিনটি দিন আমরা ছিলাম এক সঙ্গে। ট্রেনিং-এর দিনগুলোর মতো।

এলাহাবাদ ছেড়ে গাড়ি কখন অনেক দূর চলে এসেছে জানতেই পারিনি। পুরোনো দিনের মধুর স্মৃতিচারণে এতই মগ্ন ছিলাম। ক্রমে গাড়ির গতি কমে আসছিল। বোধহয় কোনও স্টেশন আসছে। কিন্তু হঠাৎ ব্রিজের আওয়াজ কানে আসতেই বুঝতে পারলাম আমাদের ট্রেন গঙ্গার ব্রিজে উঠে গেছে। অতএব, আমাদের গন্তব্যস্থল প্রায় এসে গেছে। আইরিনকে ডাকতে গিয়ে দেখি ও ইতিমধ্যেই উঠে তৈরি হয়ে নিয়েছে। বুঝলাম, আমি নিজের ভাবনায় আর স্মৃতি রোমন্থনে এতই মগ্ন ছিলাম যে আর কিছুই জানতে পারিনি। উঠে পড়ে, ওকে সুপ্রভাত জানালাম। ধন্যবাদ জানিয়ে ম্যাগাজিনটা ফেরত দিয়ে বাথরুমে গেলাম জামা-কাপড় চেঞ্জ করতে।

বাথরুম থেকে ফিরে আসতেই আইরিন আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি ড. পাণ্ডের উপর লেখা আর্টিকেলটা পড়ছিলেন?’

আমি মাথা নেড়ে সায় জানলাম, ‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে জানলেন?”

আমার জিজ্ঞাসার সরাসরি উত্তর না দিয়ে আইরিন এবার আমার মুখের দিকে সোজা তাকিয়ে বলল, ‘আপনি নিশ্চয়ই ড. পাণ্ডেকে জানতেন।’

আমি কয়েক ঘণ্টার অগোছালো সংসার আমার ছোটো ব্যাগটাতে গোছাতে গোছাতে বললাম, “শুভকে! একটা ঢোক গিলে বললাম, আই মিন, ড. পাণ্ডেকে কে না চেনে?’

এবার আইরিন এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কে? আপনি কি ড. শোভন মিত্র ?’

আমি ইতস্তত করছি দেখে আইরিন আবেগভরে আমার হাতদুটো ওর কাছে টেনে নিয়ে কান্নাভেজা গলায় বলল, “কেন না আমি জানি, এ পৃথিবীতে দু’জন মানুষ ড. পাণ্ডেকে ওই নামে ডাকে। একজন ওঁর বাবা যিনি আর বেঁচে নেই আর একজন ওর পরম বন্ধু ডক্টর শোভন মিত্র। আপনি নিশ্চয়ই ড. শোভন মিত্র। শুভঙ্কর প্রায়ই আপনার কথা বলতেন। বলতেন আপনি ওর থেকেও বেশি ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলেন। কিন্তু কেবল নীতি বা প্রিন্সিপ্যাল-এর কারণে আপনি ওর সঙ্গে বিদেশ যেতে রাজি হননি।”

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...