প্রীতি আর শর্মিলা দু’জনেই তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বিকেলে পার্কে আসে, বাচ্চারা যাতে খেলাধুলো করতে পারে। প্রীতির ছেলে আকাশ যতক্ষণ পার্কে থাকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলোয় মেতে থাকে। সব খেলায় আকাশের অংশগ্রহণ করা চা-ই চাই। কিন্তু শর্মিলা বুঝতে পারে না ওর ছেলে রনি ১৫-২০ মিনিট খেলে এসেই কেন হাঁপিয়ে পড়ে, এসে মায়ের পাশে বসে থাকে। হাজার বলেও আর ওকে খেলতে পাঠাতে পারে না শর্মিলা।
একদিন প্রীতি জিজ্ঞেস করাতে শর্মিলা উদাস হয়ে বলল, ‘সত্যি আমার ছেলেটা এরকম কেন বলতো। তোর ছেলে কত অ্যাক্টিভ, স্ট্রং— এত দৌড়াদৌড়ি করেও হাঁপায় না আর আমার ছেলেটার কোনও কিছুতেই মন নেই। অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে আর গ্রোথও বয়স হিসেবে ঠিকমতো হচ্ছে না। বয়সে রনি, আকাশের থেকে ১ বছরের বড়ো-ও।’
প্রীতি, শর্মিলার কথায় সায় দিল, ‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। আকাশ অসম্ভব অ্যাক্টিভ, চুপচাপ কখনও বসে থাকে না। পড়াশোনা থেকে শুরু করে খেলাধুলোতে, ও তুখোড়। তবে এর একটা কারণ এ-ও হতে পারে যে, আকাশ যখন ছোটো ছিল তখন থেকেই আমি ওর Diet সম্পর্কে খুবই খেয়াল রাখতাম এবং এখনও আমি ওর ডায়েটে সবসময় পুষ্টিকর খাবারই দিই।’
“কিন্তু রনি খাবার নিয়ে ভীষণ ঝামেলা করে। ওর নিজের পছন্দের কিছু খাবার ছাড়া আর অন্য কিছু খেতে চায় না। অথচ জাংক ফুড যত ইচ্ছে দাও, কিছুতে না নেই। বাধ্য হয়ে ওর পেট ভরানোর জন্য রোজ চাউমিন, পিৎজা, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্লাই— এই সবই করে দিই’, শর্মিলা বলে।
“কিন্তু শর্মিলা, তুই তো ওর ক্ষতি করছিস। এতে তো ওর শরীরে পুষ্টিকর কিছু যাচ্ছেই না। এখন থেকে যদি শরীরে পুষ্টির অভাব থেকে যায় তাহলে ভবিষ্যতে ওর শারীরিক, মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে। অল্প বয়স থকেই নানারকম অসুখে ভুগবে। বাচ্চা যেটা খেতে চাইবে, সেটাই যে দিতে হবে এটা তোকে কে বলেছে? রনিকে এমন Diet দেবার চেষ্টা কর, যেটা ওর শরীরে পুষ্টি জোগাবে।’ প্রীতি বান্ধবীকে বোঝায়।
“ও যদি খেতে না চায়?’
“তাহলে খাওয়ানোর পদ্ধতি বদলা। ধরে নে, ও ডাল খেতে পছন্দ করে না কিন্তু ডালে প্রাটিন আছে। সেক্ষেত্রে ডাল পিষে ধোসা, চিলা বানিয়ে দিতে পারিস। ওর মধ্যে নানারকম টাটকা সবজি যেমন গাজর, ক্যাপসিকাম, বিনস, টম্যাটো, শাক কুচি কুচি করে কেটে ব্যাটারের সঙ্গে মিশিয়ে সুস্বাদু উত্তাপম বানিয়ে খাওয়াতে পারিস। সেটা পুষ্টিকরও হবে। দুধ যদি খেতে না চায় ছানা তৈরি করে খাওয়া বা ছানার তরকারি করে খাওয়া। দুধের মধ্যে চকোলেট, হরলিকস মিশিয়েও খাওয়াতে পারিস। টাটকা শাকসবজি সুস্বাদু ভাবে রান্না করে খাওয়া। এমন ভাবে পরিবেশন কর যাতে দেখতেও আকর্ষণীয় লাগে। পরোটার মধ্যে, সবজির পুর ভরেও খাওয়াতে পারিস।”
অনেক বাচ্চাই খাওয়া নিয়ে খুব ঝামেলা করে। কিন্তু মায়ের দায়িত্ব হল, বাচ্চাকে হেলদি খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করা। শৈশব থেকেই বাচ্চার শরীরের খেয়াল রাখা একান্ত জরুরি। এতে ভবিষ্যতে বাচ্চার শরীরস্বাস্থ্য এবং ইমিউনিটি সিস্টেম মজবুত হবে। যে-কোনও সংক্রমণ অথবা অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করার শক্তি পাবে শিশু। গ্রোয়িং এজ-এ বাচ্চার দরকার সঠিক এবং ভরপুর পুষ্টি, যাতে প্রোটিন, ভিটামিন-এর মতো পুষ্টিকর তত্ত্ব মজুদ থাকে।
যদি বাচ্চার ডায়েটে এগুলির অভাব হয় তাহলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা মাথা চাড়া দিতে পারে। প্রথমে জানতে হবে আপনার বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ডায়েটে কী কী পুষ্টিকর উপাদান রাখা জরুরি এবং তার জন্য কোন কোন খাবার বাচ্চার ডায়েটে রাখা উচিত।