সন্দীপ ব্যানার্জী ছোটোবেলা থেকেই দিল্লিতে মানুষ। বাবা দিল্লিতে এসেছিলেন কলকাতা থেকে চাকরি নিয়ে। তারপর দিল্লিতেই থেকে যান। মা-ও দিল্লিতে এসে চাকরি করতেন একটা স্কুলে। সন্দীপের জন্মের পর থেকেই ওকে ভালো স্কুলে পড়ানো হয়েছে। সন্দীপ পড়াশোনাতে খুব ভালো। কিন্তু ছোটোবেলা থেকেই সন্দীপের পুলিশে চাকরি করার একটা প্রবল ইচ্ছে ছিল।
আসলে সন্দীপের আর এক ভাই ছিল কিন্তু ছোটোবেলায় হঠাৎ তাকে একদিন কে বা কারা অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর থেকে সেই ভাইয়ের আর কোনও খোঁজ তারা পায়নি। সন্দীপের মা, সাধনাদেবীও কেঁদে কেঁদে কঙ্কালসার হয়ে গেছেন। সন্দীপের খুব ইচ্ছে ছিল যে, পুলিশের বড়ো পোস্টে তাকে চাকরি পেতেই হবে। এবং একদিন সেই ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার রহস্য ঠিক উদ্ধার করবে।
সন্দীপের সেই ইচ্ছে একদিন সাফল্যের মুখ দেখল। সন্দীপ সরাসরি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে পুলিশের চাকরিটাও পেয়ে গেল। চাকরি জীবনেও বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল বহু কেস ঘাঁটতে ঘাঁটতে কিন্তু তবুও যেন মনে শান্তি ফিরে আসেনি। সন্দীপের এই পরিশ্রমের জন্য পুলিশ মহলে বেশ নাম-ডাকও হয়েছে। পুলিশ পদকও পেয়েছে।
সন্দীপ কিছুদিন আগেই নতুন দিল্লির কালকাজি থানার স্টেশন হাউস অফিসার হিসেবে ট্র্যান্সফার হয়ে এসেছে। জায়গাটা চিনতে ও বুঝতে একটু সময় লাগবে। হঠাৎ একদিন সকালে রাম সিং কনস্টেবল এসে খবর দিল কালকাজি বস্তিতে একটা মার্ডার হয়েছে। সন্দীপ আর দেরি না করে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাজির হল। যে-দৃশ্য দেখল তা সন্দীপকে রীতিমতো নাড়া দিয়ে দিল। দেখল আড়াই বছরের একটি শিশুর মৃতদেহ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাম সিং- কে বলল কাপড়টা তুলে মুখটা দেখাতে। সে দৃশ্যটা আরও মর্মান্তিক।
পুলিশের চাকরিতে বহু মৃতদেহ দেখেছে কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে কখনও পড়তে হয়নি। দেখল শিশুটির বুক চিরে কে বা কারা হৃৎপিণ্ডটা বের করে নিয়ে গেছে। সন্দীপ এ দৃশ্যটা আর সহ্য করতে না পেরে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল। রাম সিং-কে বলল বডিটা পোস্টমর্টমে পাঠাতে। শিশুটির মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল যে, গতকাল রাতে তারা যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন কে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তা তারা কেউ জানে না।
কয়েকদিন আগেই ওরা এই নতুন ঠিকানার ঘরে উঠে এসেছে। এরা কম টাকায় বস্তিতে এই ঘরটা পেয়েছে। এতে দরজার ছিটকিনিটাও নেই। ছিটকিনিটা ভাঙা, তাই রাতে ঘর খোলাই ছিল। এ নিয়ে তারা কখনও মাথা ঘামায়নি। ভেবেছিল ঘরে তো কিছুই নেই তাই কী আর চুরি হবে!
সন্দীপ থানায় ফিরে এসে কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে বসে রইল। কীভাবে এগোবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। বস্তির আশেপাশে সিসিটিভি-র ফুটেজ ও মা-বাবার মোবাইল থেকেও কিছু খুঁজে না পেয়ে ওই এলাকার ইনফরমারদের ডেকে সবাইকে পালা করে আক্রান্ত বাড়িটার ওপর নজর রাখতে বলল। সারা বস্তিতে খুঁজেও কোনও সিসিটিভি পাওয়া গেল না।
রাম সিং বলল— “স্যার, এদের সবার ঘরে টিভি আছে কিন্তু সিসিটিভি কেউ লাগায়নি কারণ এখানে ওটার প্রয়োজন হবে না বলেই ওদের ধারণা।’
সন্দীপের বার বার নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিল। যে করে হোক এই কেসটার আসামিকে খুঁজে বের করতে হবে। না হলে মনে শান্তি পাচ্ছে না। মিডিয়া এই খবরটাকে বেশ ফলাও করে প্রকাশ করবে এতে কোনও সন্দেহ নেই। থানায় বলে দিল মিডিয়াকে কেউ যেন কোনও ইন্টারভিউ না দেয়। থানার অফিসারদের সবাইকে বলে দিল সবাই যেন নিজেদের সোর্স লাগিয়ে খবর জোগাড় করে আনে। যে করেই হোক হত্যাকারীর খোঁজ তার চাই। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আজ পর্যন্ত এমন হয়নি যে তাকে হার স্বীকার করতে হয়েছে। আজও সে হারতে চায় না। ওই এলাকায় যত ক্রিমিনাল ছিল সবার ফাইল খুলে বসে গেল। অফিসারদের বলল, ওই সব ক্রিমিনালদের থেকে খোঁজ নিতে। এখানে আবার বিভিন্ন দল আছে গুণ্ডাদের। সবার থেকেই খবর নিতে হবে।
(চলবে)