শেষ পর্ব
গিরিডি স্টেশন আসতেই শুভায়ুর মন থেকে দুর্গার কথা কর্পূরের মতোই উবে গেছিল। তার কারণ পাটনার মতো অজানা অচেনা জায়গায় গিয়ে কোথায় উঠবে, কোথায় থাকবে সেটাই ছিল তখন চিন্তার বিষয়। কথায় বলে জীব দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। তা না হলে সেদিন ট্রেনের কামরায় গেরুয়াবসন পরা এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে তাদের দেখা হবে কেন? কেন সেই সন্ন্যাসী দুই বন্ধুর ভাবগতিক দেখে সন্দেহের বশে বলে উঠলেন, ‘তোমরা কি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে?’
শোভন বলেছিল, ‘হ্যাঁ। আপনি ঠিকই ধরেছেন।'
—কিন্তু কেন? সন্ন্যাসী আবার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন।
শোভনের মুখ থেকে সব শুনে তিনি বলেছিলেন, 'আমাদের রাঁচিতে একটা আশ্রম আছে। সেখানে মিশনের সেবামূলক কাজ যদি করতে চাও তাহলে আমার সঙ্গে যেতে পারো। ওখানে তোমাদের থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। আর যদি সেখানে ভালো না লাগে, তাহলে আমি তোমাদের আটকাব না।’
এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে কে? আশ্রমে তিনমাস অজ্ঞাতবাসে থাকার পর শোভনের আর মন টিকল না। কলকাতার ছাত্র রাজনীতির হাতছানি তাকে অস্থির করে তুলল। শুভায়ুরও বাড়িতে ফেরার জন্য মন টানছিল। শেষে দুই বন্ধু রাঁচির পাট তুলে চলে এল গ্রামের বাড়িতে।
শুভায়ু ফিরে এসে ভর্তি হল কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে, আর শোভন মেতে রইল রাজনীতির আখড়ায়। রাঁচি থেকে ফিরে আসার পর শুভায়ু দুর্গার সঙ্গে আর দেখা করেনি। কারণ শোভন যাকে ভালোবাসে, সেখানে ভাগ বসাতে তার মন ওঠেনি। তার কাছে তখন প্রেমের চেয়েও বড়ো ছিল শোভনের বন্ধুত্ব। যদিও দুর্গার সঙ্গে নিভৃতে একটু কথা বলার জন্য, তার গায়ের সুগন্ধটুকু পাওয়ার জন্য শুভায়ুর মনপ্রাণ উতলা হয়ে উঠত। কিন্তু শোভনের কথা ভেবে সে নিজেকে দুর্গার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। দুর্গা পথে ঘাটে যতবার কথা বলার চেষ্টা করেছে, সে এড়িয়ে গেছে। একবার জয়নগরের চড়কের মেলায় হঠাৎ তার সঙ্গে দুর্গার দেখা হয়ে গিয়েছিল।