(পর্ব-২)
টেকো ওসি রামদাস টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে কথোপকথন শুরু করলেন।
—কী মশাই একেবারে রসের ভাণ্ডার হয়ে বসে রয়েছেন যে!
—হে, হে, তা যা বলেছেন, রস ছাড়া তো জীবন অচল। পৃথিবী তো রসেরই ভাণ্ডার। ফলের রস, তালের রস, আখের রস, খেজুর রস, রসগোল্লার রস…।
—থামুন, এইবার আমি আপনার দুটো রসগোল্লার রস বার করব!
ঘাড় নাড়লেন মোহিত দাস। অমিত সেন এবং আশেপাশের বাড়ির দু-চারজন মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।
—মনিকা কে? একেবারে বাজখাঁই গলায় খেঁকিয়ে উঠলেন পাঁচতলা থানার ওসি। নামটা শোনার পর মোহিত দাসের চেহারায় কোনও ভাবগতিক লক্ষ্য করা গেল না। সেটা দেখে আরও সুর চড়ালেন ওসি।
—স্পিক আউট, স্পিক আউট, টেল মি হু ইজ মনিকা। কিন্তু যাঁকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলা, সে ফ্যালফ্যাল করে শুধু সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। এইবার রামদাসবাবু পুলিশি বিক্রম দেখাতে তার হাতের লাঠিটা মোহিতবাবুর চিবুকে ঠেকিয়ে বললেন, ‘মনিকা, মাই ডার্লিং, শালা আপনার পিছনে এই লাঠি …!’ মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “স্যরি, ভেরি স্যরি, আসলে…।’ অন্য ছন্দে ফিরলেন তিনি।
মোহিতবাবুর আয়াকে আলাদা করে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে, অয়ন দাসের বাড়ির পজিশন ইত্যাদি দেখে ফিরে গেলেন ওসি রামদাস মণ্ডল। যাওয়ার সময় তার সনাক্তকরণ রিপোর্টও প্রকাশ করে গেলেন। এটা বয়সজনিত মানসিক দুর্বলতা। জীবনের চলার পথে এসব এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
অমিতবাবু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে হেসে উত্তর করলেন ওসি, ‘ভুল তো মানুষ মাত্রই করে, মিঃ সেন, না কি?’ বাদী পক্ষের অয়ন দাস নীচে দাঁড়িয়েছিলেন, তাকে এ ব্যাপারে আর বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দিয়ে আসল নাটকের মঞ্চ ছেড়ে জিপে উঠলেন ওসি।
মোহিতবাবুর সেই ঘটনা অনেক রজনী অতিক্রান্ত করেছে। কিন্তু আমিতবাবুর এইরকম ভুল মাঝে মাঝেই কেন হয়, তা তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না। ওসি রামদাসের কথা মতো মোহিতবাবুর সঙ্গে তুলনা করতে থকেন তিনি। কিন্তু অমিতবাবুর তো করোনা হয়নি। তাহলে? অমিতবাবুর স্ত্রী বিমলাও স্বামীর নানাবিধ অস্বাভাবিক ব্যবহারে নাজেহাল হয়ে যান। কিন্তু তার কিছুই করার নেই। তিনি নিরুপায়।
আজকের ঘটনাটাই ধরা যাক। বাড়ি থেকে মিনিট দশেক হাঁটাপথে ভগবানদাস পার্কে প্রত্যেকদিন সকালে একেবারে নিয়ম করে প্রাতভ্রমণে বেরোন অমিত সেন। সকালে টয়লেটে গিয়ে দেখেন জল নেই। তার মানে, মিউনিসিপালিটির কলের জল গতকাল রাতে আসেনি। এখন একমাত্র ভরসা ভূগর্ভস্থ জল। অমিতবাবু চাবি নিয়ে একতলায় পাম্প ঘরে সুইচটা অন করে হাঁটতে বেরিয়ে গেলেন। তাঁদের পেল্লাই ট্যাঙ্ক ভরতে প্রায় এক ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। ততক্ষণে তিনি বাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু ঘটনাটা যে এরকম ঘেঁটে বর্ণপরিচয়ের সব অক্ষর ধারণ করবে তা তিনি বুঝতে পারেননি। তাহলে কি তার মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর কার্যক্ষমতা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। তিনি কি অ্যালজাইমার রোগের শিকার! আজকাল কিছুই বুঝতে পারেন না অমিতবাবু। সেদিন মোহিবাবুর বাড়িতে এসে কেমন যেন একটা উপলব্ধি হল।
ভগবানদাস পার্কে দু-পাক চক্কর মেরে নিত্যদিনের মতো পার্কের বাঁধানো পাথরের বেঞ্চে বসে কপালভাতি প্রাণায়ম করছিলেন অমিত। কেষ্ট দাস আর তারক সিং এসে পাশে বসে পড়ল। কপালভাতি চটকে গেল। বিহারের ছাপরা থেকে কলকাতায় এসে একটা ওষুধের দোকানে কাজ করে তারক সিং।
ক্রমশ…