সারা বিশ্বের বেশিরভাগ মা-বাবারা তাদের সন্তানদের উচ্চতা এবং ওজনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নজরে রাখেন। কিন্তু সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ যখন ব্যহত হয়, তখন পিতামাতার মধ্যে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তোলে। আর এই পিছিয়ে থাকার ব্যবধানটি খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সহ বিভিন্ন জীবনযাত্রাজনিত কারণের সঙ্গে যুক্ত। বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা, বয়স অনুযায়ী কম কিংবা বেশি ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন সত্যিই উদ্বেগের বিষয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুসারে, সারা পৃথিবীতে ৫ বছরের কম বয়সি ১৪৯ মিলিয়ন শিশুদের বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম ছিল। বিশ্বব্যাপী শৈশবের খর্বাকৃতি শিশুর মোট সংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রয়েছে ভারতে, যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সি খর্বাকৃতির শিশুও রয়েছে।
খর্বাকৃতি বা বেঁটে মানুষের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। এই প্রভাবের মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য। এটি শিশুদের জীবনে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে বাধা হতে পারে। শরীরে পুষ্টির জোগান সঠিক না হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি, বুদ্ধির ঘাটতি, আচরণগত সমস্যা, হাড়ের স্বাস্থ্য হ্রাস এবং পেশীর ভর হ্রাসের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
সঠিক পুষ্টি বাচ্চাদের বেড়ে উঠতে, শিখতে, উন্নতি করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলি পূরণ করতে সাহায্য করে। শিশুদের সঠিক পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের মতো ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্টসের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে এবং আরজিনিনের মতো মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টসের প্রয়োজন। অ্যাবট’স নিউট্রিশন–এর (বিজনেস) মেডিকেল অ্যান্ড সায়েন্টিফিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. গণেশ কাধে এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘বৃদ্ধি এবং বিকাশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পুষ্টি। তাই সমস্ত ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্ট এবং মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট সমন্বিত সুষম পুষ্টি গ্রহণের দিকে অভিভাবকদের মনোনিবেশ করা উচিত।’ অপুষ্টি সমাধানের জন্য অ্যাবট সেন্টার ফর নিউট্রিশন সমস্যার সমাধান সহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অপুষ্টি কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বহিরাগত বিশেষজ্ঞ এবং অংশীদারদের সহযোগিতায়, সেন্টারটি শিশুদের জন্য অপুষ্টি সনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে চলেছে।
এই বিষয়ে পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট প্রফেসর পেড্রো অ্যালারকন জানিয়েছেন, ‘খর্বাকৃতি (স্টান্টিং) এমন একটি অবস্থা, যার প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পুষ্টির ফাঁক পূরণ করতে পারে বা খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির শোষণ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এমন খাবার খাওয়াতে হবে বাচ্চাদের। প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজগুলি একটি শিশুর বৃদ্ধির প্রধান চাবিকাঠি। তাই কখনও কখনও ৫০% পর্যন্ত ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্কের মতো পুষ্টি যেসব খাবার থেকে পাওয়া যায়, সেই খাবার খাওয়াতে হবে শিশুদের।’
কলম্বিয়া এশিয়া হসপিটাল–এর কনসালটেন্ট পেডিয়াট্রিক ডা. শুভাশিস রায় জানিয়েছেন, ‘রাজ্য স্তরের এনএফএইচএস রিপোর্ট ২০১৯-২০২০ অনুসারে, যেখানে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের ৩৩.৮ শতাংশ খর্বকৃতির শিশু। এরমধ্যে অনেক শিশু রক্তাল্পতায় ভুগছে। সঠিক বৃদ্ধির জন্য, শিশুদের ম্যাক্রো এবং মাইক্রো পুষ্টির একটি ভালো মিশ্রণ প্রয়োজন যা পাঁচটি খাদ্য গ্রুপ থেকে আসে। যেমন– শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিন, দুধ এবং খাদ্যশস্য। তাই, অভিভাবকদের উচিত সুষম খাদ্যের মিশ্রণ প্রদান করা, যা নিশ্চিত করে যে, স্বাস্থ্যকর সামগ্রিক বৃদ্ধির জন্য শিশুরা প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজগুলি পাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে অভিভাবকদের জেনে রাখা প্রয়োজন, যারা দামী ফল খাওয়াতে পারবেন না তাদের সন্তানদের, তারা কলা এবং পেয়ারা-র মতো ফল অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায় এমন ফল এবং শাক-সবজি খাওয়াতে পারেন।’