জাত ধর্ম নির্বিশেষে আইন সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। হিন্দু বা মুসলিম যে-ধর্মেরই হোক, মহিলাদের একটা বড়ো অংশ এখনও স্বাবলম্বী নয়। ফলে পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থার নিজস্ব সামাজিক নিয়মকানুনেরর প্রতিবন্ধকতা নিয়েই আমাদের সমাজ চলে। ভারতীয় সমাজে পরিবর্তন আনতে চলেছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড। এই বিষয়ে তার্কিক মত বিনিময় হতেই পারে কিন্তু বাস্তব চিত্রটা একেবারেই আলাদা। হিন্দু পারিবারিক নিয়মশৃঙ্খলা এখনও পৌরাণিক ভাবধারায় বিশ্বাসী। এখানে নিয়ম ঠিক করেন ধর্মগুরু আর পাণ্ডা পুরোহিতরা।
এখনও হিন্দু পরিবারে বিয়ে হয় ঠিকুজিকুষ্ঠি মিলিয়ে। জাতপাত নিয়ে বৈবাহিক সমস্যা লেগেই থাকে। ১৯৫৬ এবং ২০০৫-এ প্রধান আইন বলবত হওয়া সত্ত্বেও ক’জন কন্যা, পিতার সম্পত্তির ভাগ পান? কতগুলো পরিবার বৈষম্যের উর্ধ্বে উঠে পুত্র এবং কন্যার মধ্যে বিভেদের মানসিকতা মুছে ফেলতে পেরেছেন? বিবাহের পর স্বামীর গৃহে চলে যাওয়ার পৌরাণিক রীতি কি আজও ভাঙতে পেরেছে মেয়েরা? মুসলমান পরিবারে একাধিক বিবাহের জেরে জনসংখ্যা বাড়ছে এও যেমন সত্যি, তেমন কেউ কি নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করতে পারবেন যে হিন্দু পরিবারে ২-এর বেশি সন্তান গ্রামেগঞ্জে এখনও জন্মায় না!
আইনের পরিবর্তন যে-কোনও সমাজের মানসিকতার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে হওয়া উচিত। মানসিকতায় আমরা এখনও বহু শতাব্দী পিছিয়ে। সেই জন্য ইসরোর চেয়ারম্যান সফল ভাবে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব দেন একটি মন্দিরকে, সেখানে পূজাপাঠের দ্বারা তাঁর প্রার্থনা সফল হওয়াকে।
তিন তালাক রোধ করা গেছে বলে কি মহিলারা বিবাহবিচ্ছেদ আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে? হিন্দু মহিলারা বছরের পর বছর ধরে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের দারস্থ হওয়া থেকে কি মুক্তি পেয়েছে? বিধবা হওয়া বা বৈবাহিক সূত্রে বিচ্ছিন্না মহিলাদের যদি আজও বেশি বয়সে মথুরা বৃন্দবনে আশ্রয় নিতে হয়, তাহলে কোন সমাজের কোন আইনি সাম্যের কথা আমরা ভাবছি?
আইনি পরিবর্তন এনে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মহিলাদের পঠনপাঠনের সুযোগ প্রসারিত করা হোক। যারা ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তাদের আজও দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে মুখ বন্ধ করা হয়। ইউনিফর্ম সিভিল কোড-এর প্রাসঙ্গিকতা তখনই থাকবে যখন এর দ্বারা ইউনিফর্ম ম্যানেজেবিলিটি এবং ইউনিফর্ম অ্যাকসেসেবিলিটি কোড তৈরি করা সম্ভব হবে।