ব্যাংকগুলি ইদানীং ঋণ দেওয়ার জন্য সদা তৎপর হয়ে থাকে। মানুষের উচ্চাশা এখন আকাশচুম্বী। কেউ-ই তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ‘আরও চাই’-এর নেশায় তারা ঋণ নিতেও পিছপা নয়। আর এটারই সুযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলি তাদের বড়ো অঙ্কের ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলতে পারে আপনাকে।
এই প্রসঙ্গে মনে করানো যাক মুম্বইয়ের নামি আর্ট ডিরেক্টর নিতিন দেসাইয়ের কথা। ১৯৪২ আ লভ স্টোরি, হম দিল দে চুকে সনম, লগান, দেবদাস, যোধা আকবর প্রভৃতি বহু জনপ্রিয় ছবির তিনি ছিলেন আর্ট ডিরেক্টর। কাঠ, ফাইবার, প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে স্বপ্নের প্রাসাদ গড়ে তুলতে তাঁর জুড়ি ছিল না। কিন্তু নিতিন এমনই এক কাল্পনিক প্রাসাদ গড়ে তুললেন নিজের সাফল্যকে বাজি রেখে, যার জন্য তাকে নিজের জীবনটাই বলিদান দিতে হল।
২০০৫ সালে মুম্বইয়ের কর্জত রোড-এ প্রায় ৫২ একর জমি কিনে একটি বিরাট স্টুডিয়ো তৈরি করেছিলেন নিতিন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল এর দৌলতে তিনি আরও ধনী হয়ে উঠতে পারবেন। তাঁর কেরিয়ারের সেটা শীর্ষ সময় ছিল, ফলে এই সাফল্যের পাখায় ভর করে তিনি আরও উঁচুতে উঠতে চাইলেন। গোড়াতে বেশ কিছু ছবি ও ধারাবাহিকের শুটিংও হয়েছিল ওই স্টুডিয়োয়। কিন্তু নিতিনের শিল্পীমন যতটা সক্রিয় ছিল, ব্যাবসায়িক বুদ্ধি ততটা ছিল না। তাই অচিরেই তাঁর এই পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে এবং ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়েন নিতিন।
৫৮ বর্ষীয় নিতিনের উপর ২৫২ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চেপেছিল যা তাঁর সর্বস্ব বিক্রি করে দিলেও পরিশোধ হওয়া সম্ভব ছিল না। মেধাবী ইনোভেটিভ আর্ট ডিরেক্টরকে তাই বেছে নিতে হল গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর বিকল্প। তাই ঋণ নেওয়ার আগে নিজের ব্যবহারিক ও ব্যাবসায়িক বুদ্ধিকে কাজে লাগান। ব্যাংক আপনাকে সহজে ঋণ দেবে ঠিকই কিন্তু উশুল করার সময় আপনি যতক্ষণ না কাঙাল ও কঙ্কালসার হয়ে যাচ্ছেন— ততক্ষণ তারা আপনাকে এই নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে দেবে না।