লিভ-ইন রিলেশনশিপ-এর পক্ষে আমরা যা-ই লিখি কিংবা বক্তব্য রাখি না কেন, আজও এই ধরনের সম্পর্ক সঠিক ভাবে বৈধতা পায়নি। তাই, এই ধরনের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ভয়ংকর-ই বলা যায়। এমনকী যে-দু’জনের মধ্যে এই সম্পর্ক গড়ে উঠছে, তারা নিজেরাও আপসে কোনও আইনি চুক্তি করতে পারে না।
অবশ্য লিভ-ইন রিলেশনশিপ-এ আরও একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে, যদি তাদের কোনও সন্তান হয়। কারণ, এমন রিলেশনশিপ-এ বাচ্চার বায়োলজিক্যাল ফাদার-এর নাম নথিভুক্ত করতে চায় না মিউনিসিপালিটি, কর্পোরেশন কিংবা আদালত। অথচ সাধারণ বিবাহিত দম্পতির সন্তান যদি অন্য কারও স্পার্ম থেকেও হয়, তাহলে তা বৈধ ধরে নিয়ে সমস্ত আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়! এক্ষেত্রে স্পার্ম ডোনার-এর কোনও অধিকার বাচ্চার উপর না থাকলেও, আইনি মতে বিবাহিত দম্পতির অধিকার থাকে পুরোমাত্রায়।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই যে, লিভ-ইন রিলেশনশিপ-এ থাকা মেয়েটির উপর পুরুষ যদি কোনও অন্যায় অত্যাচার করেও, তাহলে তার জন্য ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর ধারা প্রয়োগ হয় না। এক্ষেত্রে শুধু আইপিসি-র সাধারণ ধারায় মারামারির কেস হতে পারে। এতে জামিন অযোগ্য ধারা যেমন প্রয়োগ করা যায় না, ঠিক তেমনই গ্রেফতারের কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। আইনি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের মধ্যে অনেকে লিভ-ইন রিলেশনশিপকে পছন্দ করেন না আবার অনেকে বিষয়টিকে তেমন কোনও গুরুত্বও দিতে নারাজ।
তাহলে কি লিভ-ইন রিলেশনশিপ-এর বিষয়ে কোনও আইন তৈরি হওয়া দরকার? ‘না’। কারণ, আইনি বৈধতা দিলেই তা সাধারণ বিয়ের মতোই হয়ে যাবে, যা লিভ-ইন রিলেশনশিপ-এ থাকা মানুষগুলো চান না। তবে এক্ষেত্রে কিছু চুক্তির বৈধতা দিলে হয়তো ভালো হবে বলে মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, চুক্তি করা থাকলে কোনও কুমতলবি মহিলা, অন্তত পুরুষ সঙ্গীটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করতে পারবে না। সেইসঙ্গে, এই চুক্তির আরও একটা ভালো দিক আছে বলে মনে করেন অনেকে। যেমন— যৌথ ভাবে কেনা কোনও জিনিস দু’ভাগে ভাগ করে নিতে পারবেন যদি সম্পর্ক না টেকে। এছাড়া, চুক্তি থাকলে বিচ্ছেদের পর বাচ্চার দায়িত্ব উভয়কেই নিতে হবে এবং বাচ্চার সঙ্গে ভিজিটিং রাইটস-ও থাকবে পুরুষ সঙ্গীটির।
পুরাণে এমন লিভ-ইন রিলেশনশিপ-এর প্রচুর নিদর্শন আছে। এই যেমন মেনকা এবং বিশ্বামিত্র- র লিভ-ইন সম্পর্কের জেরে হওয়া সন্তান শকুন্তলা। এই শকুন্তলা আবার দুষ্মন্ত-র সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পর পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তবে ওই মিলনের পর দুষ্মন্ত-র সঙ্গে শকুন্তলা-র সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটলেও, তিন বছর পর দুষ্মন্ত তাদের সন্তান ভরতকে আপন করে নিয়েছিলেন। তাই এই লিভ-ইন রিলেশনশিপ-কে পাপ বলা ঠিক হবে না। এই সম্পর্ক যেমন সামাজিক নয়, ঠিক তেমনই অনৈতিকও নয়। শাহ রুখ খান অভিনীত ‘জওয়ান’ ছবিতেও এমনই এক সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। অমিতাভ বচ্চন এবং অভিষেক বচ্চন অভিনীত ছবি ‘পা’-তেও বিদ্যা বালনের সন্তান জন্ম নিয়েছিল লিভ-ইন সম্পর্কের জেরেই এবং দর্শকরা এই ছবি দেখে প্রশংসাও করেছেন। সভ্য এবং উদার সমাজে এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু কিছু কট্টরপন্থি মানুষজন লিভ-ইন রিলেশনশিপ-কে মানতে চান না। কারণ তারা চায় মেয়েরা সীতার মতো লক্ষণগণ্ডির মধ্যে থাকুক।