রাত যখন দুটো বাজে একটি ট্রেন জোরে হুইশেল বাজাতে বাজাতে স্টেশন ছাড়ে, ঠিক তখনই ব্যালকনির গ্রিল কেটে কাচের জানলা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে আরও একজন। সে দরজার সামনে এসে দেখে দরজা লক করা কিন্তু তালা অ্যাসিড দিয়ে নষ্ট করা। দরজায় নক করে তৃতীয় জন, ঠক্ ঠক্ ঠক্।
প্রথম চোর আওয়াজ শুনে— ক্যাডারে? ভূত-টুত নাকি! না এই বাড়ির লোক?
দ্বিতীয় চোর— দাঁড়া দেখতাছি! এগিয়ে দেখে দরজার সামনে পিঠে ব্যাগ নিয়ে আরও এক চোর হাজির।
দরজা খুলে প্রথম চোর বলে— তুইও কী চোর?
তৃতীয় জন— কেন কী মনে হইতাছে?
দ্বিতীয় চোর— না মানে…
প্রথম চোর— তোরা কী করে জানলি এই বাড়িতে কেউ নাই বাইরে গ্যাছে?
তৃতীয় চোর— আমি সবরকম খুঁজ নিইয়া আইছি।
দ্বিতীয় চোর— আর কী করে বুঝলি যে এই ঘরে উন্য চোর ঢুকছে?
তৃতীয় চোর— বুঝুম না! এই লাইনে আজকা বিশ বছর, আর দ্যাখলাম তো বাইরের তিনটা তালাই অ্যাসিড অ্যাটাক! ব্যস সুন্দেহ দূর।
তৃতীয় চোর— বুঝলি? আমরা তিনজনে চুরির মাল সব তিন ভাগ করি, ভোর হইতে আর বেশি দেরি নাই। আর দ্যাড় ঘন্টার মতো আছে। তার আগেই আমাদের এই বাড়ি ছাড়তে হইবো।
প্রথম ও দ্বিতীয় চোর— হ্যাঁ ঠিক কথা কইছিস।
চুরির জিনিসপত্র ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে প্রথম চোর বলে ফ্রিজে কী আছে দ্যাখ তো, বাইর কর, খুব খিদা পাইতাছে আমার। দ্বিতীয় চোর ফ্রিজ খুলে দেখে তাতে শরবত, আইসক্রিম বার, পায়েস, কেক আর দামি কিছু বিদেশি মদ রাখা আছে।
তৃতীয় চোর— আমারও খুব খিদা পাইতাছে রে। আজকা শালা সব খামু বাইর কর!
তিনজনে ফ্রিজে রাখা খাবার সব কিছু খেয়ে শেষ করে এবং মদের শেষ বিন্দুটুকুও ছাড়ে না। মদ খেয়ে দ্বিতীয় আর তৃতীয় চোর একদম মাতাল হয়ে যায়। তিন জনের কাড়াকাড়িতে প্রথম চোরের ভাগে মদের পরিমাণ একটু কম পড়ে। আর সেজন্য প্রথম চোর কম মাতাল হয়। ফ্রিজের সব কিছু খেয়ে তৃতীয় চোর বলে এত বুড়ো ঘর, শালা মুকমলের মুতো বিছানা! একটু রেস্ট নিয়া নি।
বিছানায় শোয়া মাত্রই তৃতীয় চোর নাক ডাকতে আরম্ভ করে গড় গড় করে, ঘুমে একেবারে অচেতন। দ্বিতীয় চোর— এই তো জীবন যাক না যেদিকে য্যাতে চায় মুন, গান গাইতে গাইতে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নাক ডাকতে থাকে।
এদিকে প্রথম জনের ঘুম এলেও একটু কম মাতাল হয়েছে বলে সে অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে তিন জনের চুরি করা মালপত্র, টাকা পয়সা, সোনার গয়না, হিরের নেকলেস সব নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে, দরজা বাইরে থেকে ভালো করে লক করে বাইরে বেরিয়ে আসে। উদ্দেশ্য নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছে সাধারণের মতো হাবভাব নিয়ে মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে ভোরের ট্রেন ধরে এলাকা থেকে চম্পট দেবে।
সকালের পাখির কিচিরমিচির শুনে বিছানা থেকে ধড়ফরিয়ে উঠে পড়ে ওই দুই চোর। তাকিয়ে দেখে চুরি করা ওদের ভাগের জিনিস নেই। ঘরও বন্ধ বাইরে থেকে। দ্বিতীয় চোর বলে, বুঝলি ওই চোর ব্যাটা আমাদের ডবল ক্রস করছে। উঁকি দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখে প্রায় জনা পঞ্চাশেক লোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হাতে লাঠি নিয়ে, হই হট্টগোল চলছে।
পাবলিকের মার দুনিয়ার বার— ভেবেও ব্যালকনির ভাঙা জানলা দিয়ে দুজনে লাফ দেয় এবং গিয়ে পড়ে একদম লোকের মাঝখানে। আর যাবে কোথায়! দুম ধাড়াক্কা ঘুষি, লাথি, লাঠির মার সব পড়ে গিয়ে ওই দুই চোরের গায়ে।
পুলিশ এসে চোর দুটোকে প্রশ্ন করে— বল চুরির মাল কোথায় পাঠিয়েছিস? চোরেরা বলতে পারে না সে কথা। পুলিশ বুঝে নেয় চোরেদের কথা মিথ্যে, ওরা সব জানে। রাজীব সেনও ওনার কাজ সম্পূর্ণ করে সকালে পৌঁছে যান নিজ বাসস্থানে। পুলিশ চোরেদের ধরে নিয়ে যায় এবং চুরির দায়ে ওই দুই চোরের জেল হয়।
এরপর সাজা খেটে জেল থেকে ছাড়া পায় ওই দুই চোর। ছাড়া পেয়ে ওই দুই চোর, প্রথম চোরের প্রতি ক্ষোভ-বিদ্বেষে ফেটে পড়ে। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে করেই হোক এর বদলা নিতে হবে। না হলে চোর সমাজে তাদের মান থাকবে না! তাই তারা প্রথম চোরের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা একাজে সফল হয়। প্রথম চোর এবং তার গ্যাং-এর সবকিছু তথ্য সংগ্রহ করে তারা থানায় যায়। থানায় গিয়ে প্রথম চোরের ঠিকানা আর ওদের গ্যাংয়ের গোপনীয় তথ্য সব ফাঁস করে দেয়। সেই সূত্র ধরে পুলিশ গ্রেফতার করে ওদের লিডার-সহ আরও ত্রিশ-চল্লিশজনের তিনটি গ্যাং-কে।
এলাকায় চুরি যাওয়া মূল্যবান সব জিনিস পুলিশ উদ্ধার করে। জনসাধারণও চুরি যাওয়া জিনিষপত্র ফিরে পাওয়ায় যারপরনাই আনন্দিত। এই ব্যাপারে সকলে পুলিশকে ধন্যবাদ জানায়। চোরেদের সম্পূর্ণ গ্যাং গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় তারপর থেকে ছোটো-বড়ো সব ধরনের চুরির ঘটনা একরকম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। লোকজনের মন থেকেও আতঙ্ক দূর হয়। এরপর এলাকাবাসীও শান্তিতে বসবাস করতে শুরু করে।
(সমাপ্ত)