এসে গেল রং-এর উৎসব—দোল বা হোলি। ছোটো থেকে বড়ো সব্বাই মেতে উঠবেন এই রং-এর খেলায়। কিন্তু সাবধানিরা রং-এর ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকলেও, এমন অনেকে আছেন, যারা জানেনই না কোন রং ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক আর কোনটা নয়। কিংবা ক্ষতিকারক জেনেও, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেন না।

আসলে বাজারে এখন অনেক রকম রং পাওয়া যায়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই যে, ভালোমানের রং-এর পাশাপাশি, ভেজাল এবং ক্ষতিকারক রং-ও বিক্রি হচ্ছে বাজারে। অর্গানিক রং-এর দাম যেহেতু একটু বেশি, তাই অনেকেই বাজার থেকে সস্তায় কিনে নিয়ে যান সিন্থেটিক রং। আর এইসব রং ব্যবহার করলে, ত্বকের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

তাই মনে রাখবেন, এইসব রাসায়নিক ও সিন্থেটিক রং-এর ব্যাবহারের ফলে আমাদের ত্বক, চুল ও চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অতএব, কোন রং কিনবেন এবং দোলের আগে কীভাবে ত্বকের পরিচর্চা করবেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শতরূপা মণ্ডল।

দোলের আগে কলকাতায় এক আলোচনাসভায় ডা. শতরূপা মণ্ডল জানিয়েছেন, সাধারণ আবির ও রং-এর মধ্যে লেড অক্সাইড, কপার সালফেট কিংবা পারদের মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক যৌগ থাকে। যা ত্বক, চুল ও চোখের ক্ষতি করতে পারে৷ তাই রং খেলার আগে থেকেই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। যেমন অর্গানিক কিংবা ভালোমানের রং কিনতে হবে, ঠিক তেমনই ত্বকেরও যত্ন নিতে হবে রং খেলার আগে ও পরে।

How to protect skin health pre and post 'Holi'
Dr. Satarupa Mandal

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, রং খেলার চার পাঁচদিন আগে কোনও ফেসিয়াল বা লেজার ট্রিটমেন্ট করা যাবে না। রং খেলার এক ঘণ্টা আগে  ত্বকে এমন ভাবে ময়েশ্চারাইজার লোশন কিংবা ক্রিম লাগিয়ে নিতে হবে, যাতে রং চামড়ার ভিতরে ঢুকতে না পারে এবং সহজে ধোয়া যায়। শুধু তাই নয়, অন্তত আধ ঘন্টা আগে ন্যূনতম এসপিএফ-৩০ অথবা তার উপরের সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন মুখে, এমনকি ঘাড়ে ও হাতে পায়ের খোলা জায়গায় লাগাতে হবে, যাতে  রং-এর ক্ষতিকারক প্রভাব এড়ানো যায়।

ব্র্যান্ডেড ময়েশ্চারাইজার ছাড়াও, ময়েশ্চারাইজার হিসাবে বিশুদ্ধ নারকেল তেলও লাগানো যায় ত্বকে। চুলের ক্ষেত্রেও চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত নারকেল তেল লাগিয়ে নেওয়া ভালো। চুলে যদি বিনুনি বা খোঁপা করে নিতে পারেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে কেমিক্যাল কিংবা রং-এর এক্সপোজার অনেক কম হয়। তার ফলে রং ধোয়ার সময় চুলে জট পাকিয়ে চুল পড়ার সম্ভবনা কমে যায়। আর চোখকে বাঁচাতে সানগ্লাস খুবই উপযোগী। কারণ,    চোখে সরাসরি রং লেগে ক্ষতি হওয়ার বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র সানগ্লাসই।

আরও একটি বিষয় এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, রং খেলার আগে থেকে বেশি করে জলপান করা ভালো। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে রং খেলায় মেতে থাকার জন্য অনেকে ওই সময় জলপান করেন না। আর উপযুক্ত পরিমাণ জলপান না করলে যেমন ত্বকের উপর কুপ্রভাব পড়তে পারে, ঠিক তেমনই ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভবনাও থাকে। অতএব, রং খেলার আগেই বেশি করে জলপান করে নিন।

আর রং খেলার পর বেশি দেরি না করে, ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ত্বক থেকে রং ধুয়ে নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে ক্ষার জাতীয় সাবান ব্যাবহার না করে, মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যাবহার করাই ভালো। সেইসঙ্গে, সাবান কিংবা জালি দিয়ে না ঘষে, বডিওয়াশ অথবা মাইল্ড সোপ ব্যাবহার করতে পারেন। পরিষ্কার হওয়ার পর, শুকনো টাওয়েল দিয়ে ভালো ভাবে সারা শরীর মুছে নিয়ে, অল্প ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে৷ এর পরেও যদি চামড়ায় কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে নিজে থেকে কোনও কিছু না করে, ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...