যদি কোনও শিশুর মেরুদণ্ড বিকৃত হয়ে যায়, তাহলে শুধু তার শারীরিক গঠনই পরিবর্তিত হয় না—প্রভাব পড়ে তার আত্মবিশ্বাস, চলাফেরা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের উপরও। আর তাই এই সমস্যার সমাধানের উদেশ্যে, সম্প্রতি ‘অপারেশন স্ট্রেইট স্পাইন’ (OSS) এবং ‘কলকাতা স্পাইন ডিফরমিটি সার্জারি ওয়ার্কশপ’-এর আয়োজন করেছিল ‘জগন্নাথ গুপ্ত ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল’ (JIMSH)।
এটি এমন একটি মানবিক উদ্যোগ, যা শিশুদের ভবিষ্যৎ আলোকিত করবে। শুধু তাই নয়, যারা এতদিন ভেবেছিলেন, এই চিকিৎসা তাদের নাগালের বাইরে, সেইসব গরিব পরিবারগুলোর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হবে। আসলে, এটি শুধু একটি চিকিৎসা কর্মসূচি নয়, বরং এক মহৎ স্বাস্থ্যসেবার আন্দোলন, যেখানে অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি ও মানবতা একসঙ্গে মিলিত হয়ে মেরুদণ্ডের বিকৃতির সমস্যা দূর করবে। আর এই ‘অপারেশন স্ট্রেইট স্পাইন’ (OSS) এবং ‘কলকাতা স্পাইন ডিফরমিটি সার্জারি ওয়ার্কশপ’-এর জন্য বিশ্ববিখ্যাত স্পাইন সার্জন, অ্যানেসথেটিস্ট এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একত্রিত হয়েছিলেন কলকাতা-য়। আর এঁদের যৌথ প্রয়াসে, শুধু মেরুদণ্ডের বিকৃতি সংশোধন-ই নয়, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিশুদের স্বাভাবিক জীবন এবং সম্মান।
JIMSH-এর চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কুমার গুপ্ত প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে কোনও বিশেষ সুবিধা হিসেবে দেখি না—এটি সকলের মৌলিক অধিকার। ‘অপারেশন স্ট্রেইট স্পাইন’ আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি বহন করে, যা নিশ্চিত করে যে, কোনও শিশু যেন শুধুমাত্র আর্থিক অসুবিধার কারণে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমরা কৃতজ্ঞ এই আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দলটির প্রতি, যাঁরা তাঁদের মূল্যবান সময় ও দক্ষতা উজাড় করে দিয়ে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আমরা চাই--প্রত্যেক শিশুই উঁচু হয়ে দাঁড়াক, গর্বের সঙ্গে হাঁটুক এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ুক।’
এই বহুমুখী চিকিৎসা মিশনে যে-সব আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের অবদান অনস্বীকার্য, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডা. আলাএলদিন আহমদ (ফিলিস্তিন), অধ্যাপক (ডা.) মাস্সিমো বালসানো (ইতালি), ডা. গিরীশ স্বামী (যুক্তরাজ্য), ডা. নবীন সি. মুরলী (যুক্তরাজ্য) এবং অন্যান্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা, যেমন মিস জ্যাকলিন ক্রিচলি, মিস চেরি, মি. জাজি প্রোমিল্ডা এবং সার্জিও চেচেল্লি (যুক্তরাজ্য)। তাঁরা তাঁদের মূল্যবান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে, মেরুদণ্ডের বিকৃতি-যুক্ত শিশুদের জন্য বিনামূল্যে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করছেন, যা এই উদ্যোগের প্রধান আদর্শ, সহমর্মিতা ও আরোগ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে রইল।