মা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেয় দিশা। কিন্তু বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি কিংবা কর্মক্ষেত্রের সম্মানপ্রাপ্তির কথা দিশা এখনও ভুলতে পারেনি। পুষ্পিতার বিষয়টা আবার অন্যরকম। ও কর্মহীন। কিন্তু চায়, সমাজে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে। তাই বন্ধুদের নিয়ে সবসময় আনন্দে মেতে থাকে সে। রিয়া আবার খুব ভালো রাঁধুনি। স্বামী-সন্তানকে ভালো খাবার খাওয়াতে পারলেই তার মানসিক শান্তি এবং রান্নার প্রশংসা পেলেই সে ভীষণ খুশি।
আসলে যে-যার মতো আনন্দে থাকতে চায়। তাই, ভালোলাগার বিষয় যাই হোক, উপলক্ষ্য কিন্তু একটাই— আনন্দলাভ। কারণ আমরা মনে-মনেই বাঁচি বেশি। অতএব, জীবনের সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে, মানসিক শান্তি এবং আনন্দলাভের চেষ্টা করতে হবে। কারণ, জীবনকে আরও আনন্দময়, আরও সুন্দর করতে হলে, সংকল্প নিতেই হবে এবং সেই সংকল্পের সূচনা হোক ২০২৬ সালের শুরু থেকেই।
পরিকল্পনা জরুরি
প্রথমে আপনার পরিকল্পনাগুলি নথিভুক্ত করুন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। আর পরিকল্পনামাফিক উপকরণ এবং সময় বরাদ্দ করুন। কর্মসাফল্য পেতে অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, তাই আগে থেকেই মজুত করুন অর্থ। কোনও কাজ নিশ্চিন্তে সম্পূর্ণ করতে হলে, পরিকল্পনামাফিক যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত।
কর্ম প্রাধান্য
ভাগ্য নয়, কর্ম পাক প্রাধান্য। মনে রাখবেন, সফল ব্যক্তি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না, কর্মময় জীবনযাপন করেন। তাই সুযোগ পাওয়ার জন্য বসে থাকবেন না, সুযোগ করে নেবেন। ‘কাল করব’ বলে কাজ ফেলে রাখলে, মহাকাল পার হয়ে গেলেও সে কাজ আর হবে না। অতএব, কাজ শুরু করুন এখনই এবং কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করুন। সাময়িক বাধা এলেও নিরাশ হবেন না, অপেক্ষা করুন, বাধা কাটবেই। কারণ, ঝড় ওঠে, আবার থেমেও যায়। তাই, সাময়িক বাধা অতিক্রম করতে পারলেই জয় সুনিশ্চিত। নতুন বছরের শুরুতে তাই নিজের কাজকে প্রাধান্য দিন।
আত্ম-বিশ্লেষণ
আয়নার সামনে দাঁড়ান। দেখুন নিজেকে। কী কী দোষগুণ আছে তা বিশ্লেষণ করুন। দোষগুলিকে কাটানোর চেষ্টা করুন এবং গুণগুলির কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস বাড়ান। প্রয়োজনে অন্যদের (শুভাকাঙ্ক্ষী) থেকে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন আপনার কী কী দোষগুণ আছে। কারণ, নেগেটিভ পয়েন্টস না কাটালে, পজিটিভ কাজ আটকে যেতে পারে। অতএব, নিজেই নিজের সমালোচনা করুন এবং অন্যের থেকে সমালোচনা শুনে নিজেকে শুধরে নিন।
সামাজিকতা
টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সামনে অহেতুক দীর্ঘ সময় ব্যয় না করে, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন। যত মানুষের সঙ্গে মিশবেন, ততই আপনি জ্ঞানবুদ্ধিতে সমৃদ্ধ হবেন, উপকার পাবেন। শুধু তাই নয়, অন্যের গুণগুলি নিতে পারলে আপনি আরও গুণী এবং স্মার্ট হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন, কূপমণ্ডূকরা কল্পনার জগতে বাস করে, কিন্তু সামাজিকতা বাস্তবের মুখোমুখি করে।
গুরুত্বের বিচার
গুরুত্ব অনুযায়ী কাজের তালিকা তৈরি করুন। কারণ, সঠিক গুরুত্ব মানেই সঠিক সাফল্য। এর ফলে বাজে কাজে সময় নষ্ট হবে না। আপনার জীবনের উপযোগী এবং লাভজনক কাজগুলিকে তালিকার শীর্ষে রাখুন। ঠান্ডা মাথায় নিজের কাজের গুরুত্ব নিজেই বিচার করুন।
স্বাস্থ্য সচেতনতা
স্বাস্থ্যই সম্পদ। শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে, একসময় সব ধনসম্পদ হারাতে হতে পারে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে। শরীরচর্চা করুন। খাদ্যতালিকায় রাখুন শাক-সবজি এবং ফল। পান করুন পর্যাপ্ত জল। আর ফার্স্ট ফুড থেকে সরিয়ে রাখুন নিজেকে।
পারিবারিক আনন্দ
নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দে থাকুন সর্বদা। সময় পেলেই আড্ডা-গল্পে মেতে থাকুন। বছরে অন্তত দু’বার বেড়াতে যান পরিবারের সবাইকে নিয়ে। তাই বছরের শুরু থেকেই টাকা জমাতে থাকুন।
আয়-ব্যয়ের হিসাব
একটা খাতা কিংবা ডায়ারি হাতে নিন। প্রথমে আপনার বাৎসরিক আনুমানিক আয়ের পরিমাণ লিখুন। এবার প্রতি মাসের খরচ লিখুন। যেমন সংসার খরচ, সন্তানের শিক্ষাখাতে খরচ, জামাকাপড় কেনার খরচ, ঋণ শোধের ব্যাপার থাকলে তার খরচ (ইএমআই), যাতায়াতের খরচ, অতিথি আপ্যায়নের খরচ, বিমার খরচ, উৎসব-অনুষ্ঠান প্রভৃতির খরচ হিসাব করুন।
এরপর সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে দেখুন আর কত টাকা আপনার হাতে থাকছে। এবার সেই মতো ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য টাকা জমান এবং কিছু টাকা রাখুন শখ-আহ্লাদ পূরণের জন্য। নতুন বছরে এটুকু করতে পারলে, আপনি থাকবেন মানসিক চাপমুক্ত এবং জীবনযাপন করতে পারবেন নিশ্চিন্তে।
গ্রুমিং জরুরি
কেরিয়ার কিংবা ব্যাবসা— যেটাই করুন না কেন, পার্সোনাল গ্রুমিং অত্যন্ত জরুরি। নিজের অ্যাটিটিউড ও সৌন্দর্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। যা-ই করুন, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন, টেনশন ফ্রি থাকুন, এনার্জেটিক থাকুন।
কর্মকাল দীর্ঘ করার প্রস্তুতি
যারা নিজেরা ব্যাবসা করেন, রিটায়ারমেন্ট-এর ভাবনা তাদের মাথায় স্থান দিলে হবে না। আগের প্রজন্মের বয়ঃজ্যেষ্ঠদের থেকে বুদ্ধি নিন এবং নিজের আধুনিক মনস্কতা ও কারিগরির সহায়তায় তা বাস্তবায়িত করুন। এই ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। অসম্ভব ধৈর্য এবং অধ্যবসায় লাগে নিজের ব্যাবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। কারণ, সাফল্যের আসল শর্তই হল মনের সন্তুষ্টি। সাফল্য অর্জন করলে মনে যেমন আনন্দ আসে, তেমনই পরিশ্রম করার ইচ্ছাও বাড়ে। আজকাল মেয়েরা যে ব্যাবসাক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছে, তার অন্যতম কারণ হল তাদের ধৈর্য এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা।
সাফল্যের মন্ত্র
সাফল্যের শীর্ষে এসেও যতটা সম্ভব নিরহংকারী জীবনশৈলী অবলম্বন করুন। ফ্যাশন, গয়না, খাওয়াদাওয়া, ভ্রমণ— সবকিছুকেই গুরুত্ব দিন, সম্মান করুন। গান শুনুন, বই পড়ুন, রিল্যাক্সড থাকুন। আর পরিশ্রম করা থেকে কখনও পিছপা হবেন না। এটাই সাফল্যের শেষ কথা।
সম্পর্কের ভারসাম্য
একটা সম্পর্কে ভালোবাসাই কি শেষ কথা? নাকি সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চাই আরও কিছু? আত্মবিশ্লেষণও জরুরি। সব শেষ করার আগে আরও একবার ভেবে দেখুন।
মনে রাখবেন, ভালোবাসা এক অদ্ভুত শক্তি, যার জোরে গোটা পৃথিবী টিকে আছে। সেটা হতে পারে মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার ভালোবাসা, বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা প্রভৃতি। ভালোবাসা হলো এক ধরনের আবেগ, যা মনকে আবিষ্ট করে। সেই অনুভূতি সেই মুহূর্তকে ভালো লাগায়, সেই ভালোলাগা মানুষ বার বার পেতে চায়।
আসলে ভালোবাসার সম্পর্কের নির্দিষ্ট কোনও নাম নেই। এটির ব্যাপ্তি বিশাল। আপনি যে-নামের সঙ্গেই একে জুড়ে দেবেন, তাকেই সে পূর্ণতা দেবে। তবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে সম্পর্কের এই জাদুর কাঠি, সবচেয়ে বেশি কার্যকর নারী ও পুরুষের প্রেমের মধ্যে।
শুধু জানা দরকার, ব্যালেন্সড রিলেশনশিপ রাখা যাবে কীভাবে? কারণ, ভালোবাসার মূল কথা বোঝানো সম্ভব নয়। ছোটো ছোটো অনুভূতিমালা ঘিরেই তৈরি হয় ভালোবাসা। কারও জন্য অপেক্ষা, কারও হাত শক্ত করে ধরে থাকা, ছায়াসঙ্গীর মতো থাকতে পারা, এমনকী খাবার ভাগ করে খাওয়া— সবই তো ভালোবাসা।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল— ভালোলাগা থেকেই একটি সম্পর্কের শুরু, যার রেশ টেনে তৈরি হয় ভালোবাসা। এর চূড়ান্ত প্রাপ্তি ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে একসঙ্গে সংসার পাতা। কেউ কেউ মনে করেন, বৈবাহিক সম্পর্কে আচরণে পরিবর্তন আসে। অনেক বদভ্যাসও দূর হয়। এমনকী মাদকাসক্তরাও আসক্তি-মুক্ত হতে পারে ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে। বিবাহের সম্পর্ক দায়িত্ববোধ তৈরি করে। তখন ভালোবাসা রূপান্তরিত হয় মায়ায়।
অনেক সময় আবার সঙ্গীকে বুঝতে ভুলও হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে… নাহ! এভাবে আর চলছে না। মনে হচ্ছে সবকিছুই শেষ। কিন্তু প্রথমেই হাল ছেড়ে দেবেন না। সঙ্গীকে বোঝার সময় নিন। দু’জনে কয়েকটা দিন একসঙ্গে একান্তে কাটিয়ে আসুন, সব ব্যস্ততা-কে ‘গুড বাই’ বলে। হতে পারে পরস্পরকে সময় দিতে না পারাই আপনার ও আপনার সঙ্গীর মধ্যে দূরত্বের কারণ। তাই, নিজের কাউন্সেলিং নিজেই করুন।
সম্পর্কে যৌনতার গুরুত্ব
জানেন তো, সেক্স ঠিক ছাইচাপা আগুনের মতো। একটু উসকে দিলেই উত্তাপ তীব্র হয় আর গুরুত্ব না দিলে অশান্তি বাসা বাঁধে নীরবে। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বাভাবিক যৌনতৃপ্তির জন্য দু’জনের কমপ্যাটিবিলিটি প্রয়োজন। আর কমপ্যাটিবিলিটি বা সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হলে চাই— ‘কৌশল’। তাই, কৌশল রপ্ত করতে হবে। আর এই কৌশল হল— যৌনসুখ লাভের ইচ্ছেকে জাগিয়ে রাখা।





