মেরুদণ্ড সোজা রাখা জরুরি –এই বাক্যটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃৎ হলেও, শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রেও শব্দগুলি সমান ভাবে প্রযোজ্য। কারণ একটি বাড়িকে মজবুত রাখার জন্য যেমন পিলার বা স্তম্ভগুলিকে শক্তপোক্ত করে তুলতে হয়, ঠিক তেমনই, শরীরের পিলার, অর্থাৎ মেরুদণ্ডকেও সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হবে। একটা সময় ছিল যখন শুধু বয়স বাড়লেই মেরুদণ্ডের সমস্যা হতো মানুষের, কিন্তু এখন তরুণরাও মেরুদণ্ডের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ এবং প্রতিকার কী, সেই বিষয়ে জানিয়েছেন ডা. অমিত হালদার।
এখন তরুণ-তরুণীরাও মেরুদণ্ডের বা Spinal Cord-এর সমস্যায় ভুগছেন। এর কারণ কী?
মাত্র এক দশক আগেও মেরুদণ্ডের সমস্যা শুধু বয়স্ক মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গেছে, কুড়ি থেকে তিরিশ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীরাও অনেকে স্পাইনাল রোগের শিকার হচ্ছেন। বেশিরভাগই ভুগছেন লো ব্যাক পেইন-এর সমস্যায়। আর এই সমস্যার শিকার হওয়ার অন্যতম বড়ো কারণ, একটানা অনেকটা সময় কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা এবং মডার্ন লাইফস্টাইল।
এই Spinal Cord সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
লাইফস্টাইল-এর কিছু পরিবর্তন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে মেরুদণ্ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরুর আগে কিছু পরামর্শ মেনে চললে রোগভোগের সম্ভাবনা কমবে।
ভঙ্গিমার সংশোধন ও সক্রিয় উপবেশনঃ ভুল ভাবে দীর্ঘসময় বসা বা চলাফেরা করায় পিঠ ও ঘাড়ে চাপ পড়ে, যা একসময় ক্রনিক পেইন-এ পরিণত হয়। পড়ার টেবিলে অনকক্ষণ কাজ করা বা বসে থাকার সময় লক্ষ্য রাখা উচিৎ, পিঠ যেন সোজা থাকে ও চেয়ার বা সিটের ব্যাকরেস্টে বিশ্রাম পায়।
কম্পিউটারের লেভেল ঠিক রাখাঃ দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজের সময়ে তার উচ্চতা ঠিক রাখা প্রয়োজন। কম্পিউটারের উচ্চতা খুব বেশি বা খুব কম হলে তা ব্যথার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। আদর্শ উচ্চতা হল– কনুই যেন টেবিলে থাকে ও চেয়ার যেন টেবিলের খুব কাছে থাকে, যাতে কি-বোর্ডের জন্য ঝুঁকতে না হয়। ল্যাপটপ ব্যবহারের সেরা উপায় হল টেবিল ব্যবহার করা। বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার পিঠে ও ঘাড়ে নানারকম ‘মাস্কুলোস্কেলেটাল স্ট্রেন’ ডেকে আনতে পারে। বসা অবস্থায় কাজের মাঝে ব্রেক নিতে হবে ছ একই ভঙ্গিমায় অনেকক্ষণ বসে থাকলেও পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এজন্য প্রতি ১৫ মিনিট পর ৩০ সেকেন্ডের ‘ব্রেক’ নেওয়া উচিত। আর ব্রেকের সময় সটান দাঁড়ানো, একটু হাঁটাহাঁটি করা বা হালকা ভাবে হাত-পা ছোড়া দরকার।
‘এরগনোমিক্স ম্যানুয়াল’ মানা উচিতঃ ভারী জিনিস তোলা বা নীচু হয়ে ঝোঁকার সময় সঠিক শারীরিক ভঙ্গিমা বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রতিদিনের জীবনে উপযুক্ত শারীরিক কর্মতৎপরতার প্রশিক্ষণ দরকার, যাতে ‘লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপ্স’-এর মতো অসুস্থতা এড়ানো যায়। এছাড়া, সঠিক খাদ্য গ্রহণে অনীহা, মানসিক চাপ, আর্থরাইটিস-এর মতো ‘ডিজেনারেটিভ বোন ডিজিজ’ এবং অন্য কিছু বিষয়কেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে, তরুণ প্রজন্মের ব্যাক পেইন-এর মোকাবিলা করা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, পিঠ ও ঘাড়ের জন্য ঠিকঠাক ব্যায়াম ও সূর্যের পর্যা৫ আলোতে থেকে ভিটামিন ডি লেভেল বৃদ্ধির মাধ্যমে। লোয়ার ব্যাক পেইন দীর্ঘকাল চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা উচিত নয়। কারণ, তা সারাজীবনের জন্য সার্ভিক্যাল স্পাইন ও স্পাইনাল মাসল-এর স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।