এখন আর সেই যুগ নেই যে, টাকার জন্য সন্তান মা-বাবার অধীনে থাকবে। একটা সময় ছিল যখন অনেক বয়স পর্যন্ত টাকাপয়সা খরচ করার অধিকার পেত না সন্তান। কর্মহীন থাকাকালীন টাকার জন্য মা-বাবার কাছে হাত-পাততে হতো এবং উপার্জন করতে শুরু করলেও, সেই টাকা মা-বাবার হাতে তুলে দিতে হতো সংসার চালানোর জন্য। এর কারণ, বেশিরভাগই তখন যৌথ পরিবার ছিল এবং সাংসারিক রীতিনীতিও ওইরকমই ছিল। অবশ্য এই রীতিনীতিতে বিয়ের পর যেমন টাকাপয়সা খরচ করার স্বাধীনতা পুরোপুরি থাকত না ছেলের, ঠিক তেমনই এর একটি ভালো দিকও ছিল। বিয়ের পরও ছেলে যদি কর্মহীন হয়ে পড়ত কিংবা আয় কমে যেত, তখন মা-বাবা দায়িত্ব নিয়ে সন্তানের সেই আর্থিক দুরাবস্থা কাটিয়ে তোলার দায়িত্ব নিতেন।
কিন্তু এখন সময় বদলেছে। যৌথ পরিবার ভেঙে ছোটো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ এইসব সংসারেও কিন্তু খরচ কম হয় না। বরং যৗথ পরিবারে রান্না, বৈদ্যুতিক প্রভৃতি খরচ পরিবারের সমস্ত উপার্জনশীল সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে যেত । এখন আর তা সম্ভব নয় ছোটো পরিবারে। এক্ষেত্রে স্বামী অথবা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সংসার চালান। আর এই সংসার চালানোর দায়িত্ব একজন না নিয়ে দু’জনে নিলে কী সুফল পাবেন এবং কীভাবে নেবেন এই দায়িত্ব, তা জেনে রাখা জরুরি।
বিয়ের আগের উদ্যোগ
কথায় বলে, বিয়ের আগে উপার্জনের সময়টুকু এবং বিয়ের পরে সন্তানের জন্মের আগের সময়টুকু জীবনের সেরা সময়। কারণ, এই সময় দায়িত্ব কম কিন্তু বেশি আনন্দ উপভোগ করা যায়। এই আনন্দ যেমন আর্থিক স্বাধীনতার (বিয়ের আগে), ঠিক তেমনই শারীরিক ও মানসিক সুখলাভেরও (বিয়ের পরে সন্তান হওয়ার আগে)। কিন্তু এরজন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তা সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। যেমন, বিয়ের আগের উপার্জন থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে হবে। এই টাকার পরিমাণ এতটাই হবে যে, তা দিয়ে বিয়ে এবং
হনিমুন-এর খরচ, সন্তানকে সঠিক ভাবে পৃথিবীর আলো দেখানোর খরচ প্রভৃতি সামলানো যায় ঠিক ভাবে।
যদি আগাম পরিকল্পনা না নিয়ে বিয়ে এবং খরচ করেন, তাহলে কী পরিস্থিতি সঙ্গীন হতে পারে।
লভ্-ম্যারেজ-এর কাপলরাও এই একই ভুল করে থাকেন অনেক সময়। মহা ধূমধামে বিয়ে সেরে তারপর হনিমুন পর্ব কাটিয়ে, অনেকেই পড়েন বিপুল আর্থিক সংকটে । এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বিয়ের আগে থেকেই প্ল্যান করা উচিত হবু দম্পতিদের।টাকা বাঁচানোর জন্য বিয়ের রিসেপশন পার্টি একসঙ্গে করা, হনিমুন-এর বাজেট কমানো ইত্যাদি বিষয়গুলো দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্পন্ন করুন। শুধু তাই নয়, অনেক দম্পতি হনিমুন-এর খরচ দু’জনেই বহন করেন এবং এক্ষেত্রে বিষয়টি স্বামীর কাছে লজ্জারও নয়। কারণ, প্রথম থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই আর্থিক অংশীদারিত্ব খুবই স্বাস্থ্যকর।
বিয়ের পরের আর্থিক উদ্যোগ
বিয়ের পরের খরচের জন্য বিয়ের আগেই হবু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলোচনা এবং বোঝাপড়া করে নেওয়া উচিত। এতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা কমবে, সাংসারিক জীবনে আর্থিক সংকটে পড়তে হবে না এবং দাম্পত্যসুখ বজায় থাকবে। এরজন্য প্রথমে দু’জনের উপার্জনের পরিমাণ যোগ করুন। এরপর তার থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ টাকা সঞ্চয়ের জন্য রাখুন। এটাই সঠিক পদ্ধতি। খরচের পর সঞ্চয়ের কথা ভাবা ভুল। কারণ, খরচের কোনও শেষ নেই। অতএব, সঞ্চয়ের পর উপার্জনের বাকি ৭০ শতাংশ টাকা বিভিন্ন খাতে খরচের জন্য বরাদ্দ করুন। যেমন– খাওয়ার খরচ, পোশাকের খরচ, বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট-এর মেন্টেনেন্স-এর খরচ, বিদ্যুতের বিল, টিভি কেবল-এর খরচ, মোবাইলের খরচ, অফিসে যাতায়াতের খরচ, অতিথি আপ্যায়নের খরচ, স্বাস্থ্যবিমার খরচ, ইনকাম ট্যাক্স, প্রপার্টি ট্যাক্স, গৃহ-পরিচারকের বেতন প্রভৃতি। এরসঙ্গে অবশ্যই আনুষাঙ্গিক খাতে কিছু টাকা ধরুন এবং সেই খাতের যে-টাকা বেঁচে যাবে তা ভ্রমণের জন্য এবং অন্যান্য বিনোদনের জন্য সঞ্চয় করুন। আর এভাবে যদি দু’জনে মিলেমিশে যাবতীয় খরচের এবং সঞ্চয়ের দায়িত্ব নেন, তাহলে দেখবেন আপনাদের দাম্পত্যজীবন সুখময় হয়ে উঠবেই। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, বিয়ের পর কিছুদিন দাম্পত্যসুখ ভোগের পর সন্তানের জন্ম এবং শিক্ষাখাতের জন্য, ব্যয়-বরাদ্দ করতেই হবে এবং তা স্বামী-স্ত্রীর মোট আয়ের অন্তত ৪০ শতাংশ হওয়া উচিত।