ভারতের পশ্চিম মুলুকে মহারাষ্ট্র। সনাতনী ঐতিহ্য, পুরাতত্ত্ব, রাজকাহিনি, সহ্যাদ্রি পর্বত, আরবসাগর, প্রস্রবন, হ্রদ, সৈকত, দুর্গ, জঙ্গল, মন্দির, গুহাকন্দর– বিপুলা মহারাষ্ট্রে রয়েছে সবই।

বিগত বছর দশেক মুম্বইয়ে থাকার সুবাদে প্রায়শই মুম্বই মহানগরতলির কাছেপিঠে অজস্র অবসরের তথা পর্যটকপ্রিয় স্থানগুলিতে চলে যেতাম সপ্তাহান্তিক ছুটিছাটায়। আবার মাঝে মাঝেই চলে আসতাম আরবসাগরের একেবারে কাছের সৈকতগুলিতে ভালোবাসা বিনিময় করতে। লক্ষ্মণের গণ্ডি মুছে কেবল বেরিয়ে পড়তে হবে। এবারের গন্তব্য হোক মুম্বইয়ের প্রায় নাগালেই আলিবাগ সৈকত ও আলিবাগের নিকটবর্তী আরও কিছু অসাধারণ সৈকত।

আলিবাগ সৈকত

আলিবাগ সৈকতে এসে ঢেউয়ের সঙ্গে ভাব জমিয়ে গল্প করি।  লবণাক্ত জল ধীর লয়ে এগিয়ে এসে পায়ের পাতা ভিজিয়ে ফিরে যায়। দূরত্ব তো আর তেমন বেশি কিছু নয়। মুম্বই থেকে গাড়ি ভাড়া করেই চলে আসা যায় দক্ষিণ মুম্বই থেকে মাত্র শ-খানেক কিলোমিটার দূরে অলিবাগ সৈকতে। রায়গড় জেলার ছোট্ট সৈকতশহর আলিবাগ। ঐতিহাসিক শহরও। মায়াময় সাগরবেলার ঈষৎ শক্ত বালির জমিতে পরতে পরতে আরবসাগরের অন্তরঙ্গতা কখনও আবার জোয়ার-ভাটার খেলা।

অর্ধচন্দ্রাকারে বাঁক খেলে গেছে সৈকতরেখায়।  বালিয়াড়ির বুকে ঝুঁকে আসা পাম ও নারকেলবীথির সারি ও তার নিরন্তর ছায়া। সৈকতভূমির অদূরেই ঢেউয়ের ছলাৎছলের ছিটে নিয়ে সাগরজলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস নিংড়ানো কোলাবা দুর্গ। মুম্বইকর ও পুণেকরদের উইক এন্ড গেটঅ্যাওয়ে আলিবাগ সৈকতের অন্যতম আকর্ষণও হল, মারাঠা বীর শিবাজিরাজ ভোঁসলে নির্মিত এই কোলাবা দুর্গটি। বহু ইতিহাসের সাক্ষর নিয়ে কোলাবা দুর্গটি অটুট আছে আজও।

আলিবাগ বেলাভূমি থেকে প্রায় কিলোমিটার খানেক দূরে সমুদ্রের মাঝে এই কোলাবা দুর্গ। ১৬৫২ সালে ব্রিটিশ ও পর্তুগিজ নৗসেনাদের উপর নজরদারি জারি রাখতে ও জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য, ছত্রপতি শিবাজি দুর্গটি নির্মাণ করেন। শিবাজি মহারাজের নৗসেনা-প্রধান সরখেল কানহোজি আংরে ছিলেন স্থানীয় রামনাথ গ্রামের বাসিন্দা। অতি বিশ্বস্ত ও দুর্গের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত কানহোজি আংরে, যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে প্রভূত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রসঙ্গত, কানহোজি নিজের নামে সেইসময় কিছু রৗপ্যমুদ্রার প্রচলন করেন। লোকমুখে উচ্চারিত ‘আলিবাগ রুপাইয়া’ তখন সেই অঞ্চলে কিছুকাল পর্যন্ত হিসেবনিকেশে ব্যবহূত হতো।

পঁচিশ ফুট উঁচু দুর্গের তোরণদ্বার দুটি। সমুদ্রের দিকে মুখ করে একটি, অন্যটি আলিবাগ সৈকত-শহরের দিকেই। রয়েছে তোষাখানা, শুঁড়িপথ, প্রাসাদ, উচ্চ আধিকারিক ও তাঁদের পরিবারের বসবাস স্থল, শস্যভাণ্ডার, যুদ্ধ সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার নিরাপদ স্থান। বহিরাগত শত্রুদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে বৃহৎ কামানগুলি ব্যবহূত হতো, তা আজও সারি দিয়ে রাখা আছে। কোলাবা দুর্গে ইতিহাসের ভাঁজে ভাঁজে ছুঁয়ে থাকা নানান কাহিনি। বিগত বহু যুদ্ধের সাক্ষী কোলাবা দুর্গ। কখনও কানহোজি আংরের নেতৃত্বে সিদ্দিদের যুদ্ধ। কখনও ব্রিটিশ ও পতুর্গিজ ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

আলিবাগ সৈকতে জোয়ার-ভাটার খেলা চলে উদয়াস্ত। এই খেলা আলিবাগের একান্ত নিজস্ব। সাগরজলে ভাটার টানে জল যখন কিছুটা মন্থর, সে সময় কোমরজল টপকে পায়ে হেঁটেই দুর্গে পৌঁছোনো যায়। ভাটা শুরু হতেই সৈকতে টাঙাওলাদের বিস্তর হাঁকাহাঁকি শুরু হয়ে যায়। ঘোড়ায় টানা টাঙাগুলি পৌঁছে দেয় দুর্গের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত। জোয়ারের সময় দুর্গে পৌঁছোনোর জন্য ডিঙি নৗকাই ভরসা। তবে বেশিরভাগ পর্যটকই এক্বাগাড়িতেই যাতায়াতের মনোরঞ্জন খুঁজে পান।

তিনদিক সাগরজলে ঘেরা, তাই স্থানীয় পর্যটকরা আলিবাগকে ভালোবেসে ডাকেন, ‘মহারাষ্ট্রের গোয়া’। মারাঠি শব্দ ‘আলিচাবাগ’ অর্থাৎ ‘আলিসাবেহের বাগান’। অতীতে স্থানীয় এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বেলে ইসর্যয়লি জিউস আলির নিজস্ব আম ও নারকেল বাগিচা থেকে স্থানীয়দের কাছে ‘আলিচাবাগ’ ক্রমে আলিবাগ হয়েছে। সৈকতে অঢেল বিনোদন ছাড়াও ঐতিহাসিক শহর আলিবাগে রয়েছে ১জ্জচ্০ সালে কনহোজি নির্মিত হিরাকোট দুর্গ।

কালো বাসল্ট পাথরের প্রাচীর নিয়ে দুর্গটি তৎকালে আংরের অস্ত্রাগার ছিল। এখন এটি রায়গড় জেলার সদর কারাগার হিসেবে ব্যবহূত হয়। শহরের ভেতর ‘ছত্রিবাগ’নামে পাথরের ছাতা আকৃতির সৌধ আছে। দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে  ম্যাগনেটিক অবজার্ভেটরি, এশিয়ার মধ্যে প্রথম ও সমগ্র বিশ্বে ১৩-তম। সৌরমণ্ডলের চৌম্বকগতি নিরীক্ষণ করা হয় এখান থেকে।

আলিবাগের প্রসিদ্ধ দত্তা মন্দিরটি রাষ্ট্রীয় কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্টিলাইজার কোম্পানির সহযোগিতায় নির্মিত। আলিবাগে ইন্দো-রাশিয়ান সৗহার্দ্যের প্রতীক হিসাবে একটি সৗধ আছে, রাশিয়ান অফনিসি নিকিতিনের ৫ঙ্ম০ বছর আগে পদার্পণের চিহ্নস্বরূপ। শহরের এইসব খুঁটিনাটি দ্রষ্টব্যস্থল দেখানোর ফাঁকেই অত্যুৎসাহী পর্যটকদের স্থানীয় অটোরিকশা চালকই দেখিয়ে দেবেন বলিউডের নানান সেলেব্রিটিদের মহার্ঘ্য সব অবসর কাটানো বাংলোবাড়িগুলিও।

আলিবাগের কিছুটা দূরেই আছে আরও অনেকগুলি সৈকত। সেগুলোও ঘুরে আসা যায় সহজেই। যেমন ৩ কিমি দূরে আকাশি সৈকত, ১৩ কিমি দূরে রেওয়ান্দা সৈকত, ৭ কিমি দূরে নাগাঁও সৈকত, ১৮ কিমি দূরে মান্ডোয়া সৈকত, ১১ কিমি দূরে কিহিম সৈকত। প্রতিটি সৈকতই নিজের মনোরম সৗন্দর্যের ডালি নিয়ে পর্যটক ভোলাতে সদা তৎপর।

কিহিম সৈকত

প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া এই কিহিম সৈকত। উজাড় করা একরাশ প্রকৃতি তার চারপাশে সৈকত জুড়ে নৈঃশব্দ্যের ঝাঁপি আগলে রাখে। আর মাথার ওপর পুরো আকাশ জুড়ে রোদ্দুরের নিস্তেজ আভা। সাগরপাড়ে বসে থাকাতেই আনন্দ-আরাম। সময় গড়িয়ে যায়।

মুম্বই থেকে মাত্র ১৩৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় কিহিম সৈকতে। বহু দূর পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে কিহিমের সাগরজলের ভরা সংসার। মিহি বালুতট। মাঝখানে মসৃণ যাত্রাপথের উলটোদিকেই কিহিম গ্রাম। নারকেল আর অন্যান্য গাছগাছালি ছাওয়া শান্তশ্রীমণ্ডিত সে গ্রামে গাছের সামান্য পাতা ঝরলেই যেন কোলাহল। স্থানীয় এলাকাবাসী মাছ ধরার জীবিকা ও ঘরকান্না নিয়েই থাকেন। সৈকত ধরে নগ্ন পায়ে হেঁটে চলা। তাতেই একরকমের উৎসব। এক ধরনের মন ভালো করে দেওয়া।

Beach near Alibag

নাগাঁও সৈকত

পর্যটকদের দেওয়া আদুরে নাম ‘মিনি গোয়া’। এমনই এক অনাঘ্রাতা সৈকত আরবসাগরের কোলে নাগাঁও। ছুটির দিনগুলো কাছেপিঠের স্থানীয়রা লং ড্রাইভে চলে আসেন, ভিড় জমান। সাগর উপকুলবর্তী নাগাঁও বিনোদনের ঝাঁপি আগলে রাখে।

৩ কিমি লম্বা সৈকত। আদিগন্ত নীলকান্তিতে জেগে ওঠা সাগর। লোনা হাওয়ার ঝাপটা। ইদানীং ছবির খাতা থেকে তুলে আনা চমৎকার কিছু কটেজ। পর্যটকদের আয়েশি আমেজে বিশ্রামের ঠেক। সাগরপাড়ে গাছগাছালির সমাহার। বর্ষার প্রখর সময়টুকু ছাড়া নাগাঁও সৈকতে হরেক ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা আছে। বাম্বার টিউব রাইড, জেট স্কাই রাইড, কায়াকিং, বানানা রাইড, প্যারাসোলিং, মোটরবোট। এছাড়াও রঙিন ঝালর দেওয়া টাট্টু ঘোড়া এবং ঝলমলে সাজানো হাওদায় চড়ে উটের পিঠে ভ্রমণে মেতে থাকেন নাগাঁও সৈকতে বেড়াতে আসা তামাম দর্শক।

কিছুটা দূরেই বিক্রম ইস্পাত কারখানা এলাকায় বিড়লা মন্দির। স্থানীয়দের দেওয়া নাম– ‘মিনি গোয়া-গোয়ালিবাগ’। শেষ নাম বিশেষণটিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় সৈকত আলিবাগ নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই রাখা, বলাই বাহুল্য।

আক্সি সৈকত

নাগাঁও ও আলিবাগের মধ্যে স্যান্ডউইচ হয়ে আছে আক্সি সৈকত। এখানকার শক্ত মাটিতে বাইক রাইডিং বেশ উপভোগ্য। সময় সাপেক্ষে বাইক ও খেলনাগাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা আছে। পরিচ্ছন্ন সৈকত আর অপরূপ সূর্যাস্ত উপহার দেওয়া নিয়েই আক্সির গরিমা।আক্সি আদপে ধীবর গ্রাম। মাছ ধরাই যাদের প্রাত্যহিক

রুজি-রুটি। বালিয়াড়ির ধারে বাঁধা রঙিন নৗকোগুলি। মূল সড়ক থেকে টালি বাঁধানো পথ গেছে সৈকত পর্যন্ত। সে পথে সার দিয়ে সিমেন্টের বসার জায়গা। গাছের ডালে আড়াআড়ি লটকানো দড়ির দোলনা কিছু। রয়েছে খাবার স্টলও। সৈকতের এক্বাগাড়ি চালকরা কাছে এসে অনুরোধ করছেন সওয়ার হওয়ার জন্য। আক্সি সৈকতটি হঠাৎই প্রখর ঢালু হয়ে সাগরে নেমে গেছে। ফলত সতর্ক থাকা জরুরি। যদিও সৈকতের নজরমিনারের টঙে বসে সজাগ নজর রাখেন সৈকতরক্ষীরা।

বোটিং, সূর্যস্নান, সমুদ্রস্নান উপযোগী। তবে আগেই বলেছি সমুদ্রস্নানে সতর্ক থাকতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার নিষেধ আছে, রঙিন পতাকা পোঁতা স্থলের ওপারে না যাওয়ার। পক্ষীপ্রেমীদের খুবই পছন্দের জায়গা আক্সি। নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের আড্ডা জমে শীতে। সিগাল, বার-টেল, ট্রোনস্, গডউইট, প্লোভার, ডানলিন, ওয়েসটার ক্যাচার ও বহুল রকমারি পাখিদের মৗরসিপাট্টা তখন আকাশি সৈকতে।

মুরুদ-জঞ্জিরা

আলিবাগকে পাশ কাটিয়ে আরও ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে মুরুদ। সর্পিল পথটিও অনুপম। ডানদিকে আরবসাগরকে রেখে পথ চলছে। কখনও পথের বাঁকে উধাও হয়ে যাচ্ছে সাগর, কখনও আবার ফিরে পাওয়া। মুরুদের পাথুরে সাগরবেলা ও নারকেলবাগিচার ছায়াঘেরা ধীবর গ্রামে রয়েছে পবিত্র ‘কোটেশ্বভরি ও ‘দত্তা’ মন্দির।

অতীতের স্মৃতিধন্য নবাব প্যালেসের খানদানি সাক্ষর এখন ভারত সরকারের রক্ষণাবেক্ষণে। মাত্র ৩ কিমি দূরেই রাজাপুরি ফেরিঘাট থেকে পালতোলা নৗকোয় জলদুর্গ ডিম্বাকৃতি জঞ্জিরা দুর্গ। এই কেল্লাটিকে ‘মুন ফোর্ট’ বা ‘চন্দ্রদুর্গ’ও বলা হয়। একসময় ভারতের পশ্চিম উপকূলে এটিকে সর্বাপেক্ষা সুরক্ষিত

সমুদ্র-দুর্গ হিসেবে গণ্য করা হতো। জঞ্জিরা দুর্গের স্থাপত্যশৈলী এমনই অভিনব প্রযুক্তিতে নির্মিত যে, দুর্গের একদম নাগালে পৌঁছোলেই প্রবেশতোরণটি নজরে আসে। আনুমানিক দ্বাদশ শতকে হাবসি রাজা সিদ্ধি জোহার এই দুর্গ স্থাপন করেন। আজ দুর্গের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। চারিদিকে আগাছার জঙ্গল। দুর্গের ভেতর রয়েছে মিষ্টি জলের তালাও, শিশমহল, দরবার মহল, কামান, তোপখানা, দরগাশরিফ, নজরমিনার, নকশাদার কাঠের দরজা ইত্যাদি।

মারাঠি শব্দ ‘অজিনকা’ মানে ‘অজেয়’। স্থানীয়রা প্রাচীন দুর্গটিকে বলেন অজিনকা। এমনকী শিবাজি-পুত্র শম্ভাজি বহুবার চেষ্টা করেছেন দুর্গটি জয় করতে। কিন্তু কখনওই সফল হতে পারেননি। মুরুদ-রাজাপুরি কিঞ্চিত উঁচু পাহাড়ি পথ থেকে অতলজলে অবস্থিত জঞ্জিরা দুর্গের অভিজাত রূপ ক্যামেরায় ধরে রাখার মতো।

Beach in Maharashtra

মান্ডোয়া সৈকত

মান্ডোয়ার নিরিবিলি সৈকতে আপনমনে খেলা করে ঢেউ। রায়গড় জেলার মান্ডোয়া একটি জনপ্রিয় ও পছন্দসই সৈকত।  মুম্বই থেকে মান্ডোয়া সৈকতের সড়ক দূরত্ব মাত্রই ১০১.৪ কিলোমিটার। নিয়মিত ফেরি যোগাযোগও রয়েছে মুম্বই-মান্ডোয়া। স্নানের উপযোগী সৈকত। বেশ কিছু খাবার স্টল, ডাব বিক্রেতা থাকলেও কী ভীষণ পরিচ্ছন্ন সৈকত। পর্যটকরা মূলত আসেন বিভিন্ন রকমের ওয়াটার স্পোর্টসের মজা নিতে। কায়াকিং, জেট স্কি রাইডিং, বাম্পার রাইড, বানানা রাইড আরও কত কী যে বিনোদন রয়েছে এখানে।

মান্ডোয়ার সফেদ বালিয়াড়ি ধরে হেঁটে যেতে মন্দ লাগে না। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দুইই মনোরম এখানে। ও হ্যাঁ, পুরোনো ও নতুন দুই ‘অগ্নিপথ’ সিনেমারই শুটিং হয়েছিল এই মান্ডোয়ায়। নতুন অগ্নিপথের কাঞ্চা চরিত্রটিকে যে গাছে ঝোলানো দৃশ্যটি গৃহীত হয়েছিল, অনিবার্য কারণে সেই গাছটিকে কেটে ফেলা হয়েছে।

রেভান্দা সৈকত দুর্গ

প্রতিটি বিকেল অসাধারণ নজির সৃষ্টি করে রেভান্দার সূর্যাস্ত দৃশ্যের। সাপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হতেই পারে রেভান্দা। নিপাট শান্ত ও পরিচ্ছন্ন সৈকতটির কালচে রঙা বালিয়াড়ি যেন একটু অন্যরকম। ঐতিহাসিক স্থল রেভান্দা। শিবাজির আমল থেকেই কুন্তলিকা নদী পাড়ের এই স্থানটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখন একটি ভগ্নস্তূপ মাত্র হলেও পাথরের মজবুত প্রাচীর দেখেই ঠাহর হয় রেভান্দা দুর্গটি একসময় যথেষ্ট জাঁকালো ও বিশাল স্থাপত্য ছিল। এখানকার প্রাচীন শিতলাদেবী মাতা মন্দিরটি পুনঃসংস্কার করা হয়। প্রায় দেড় হাজার সিঁড়ি টপকে পৌঁছোতে হয় পাহাড় শীর্ষে প্রসিদ্ধ দত্তা মন্দিরে। এই মন্দিরটি শিবাজির আমলে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ত্রিমূর্তি বিরাজ করছেন। মন্দির চত্বর থেকে সম্পূর্ণ রেভান্দার চিত্রপট ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো।

ইদানীং রেভান্দা সৈকতে ‘বিচ ক্যাম্পিং’ হয় বিভিন্ন প্যাকেজ-টুর কোম্পানির ব্যবস্থাপনায়। তাঁবুতে রাত্রিবাস, ক্যাম্প ফায়ার, বার-বি-কিউ ও হরেক আধুনিক আয়োজন থাকে। নব্য বয়সিদের খুবই পছন্দের ঠেক এই বিচ ক্যাম্পিং আসর।

কাশিদ সৈকত

মুম্বই থেকে মাত্রই ১২৫ কিমি দূরের ‘মনোরম প্যরাডাইস’ বলে খ্যাত কাশিদ সৈকতের। নীল সাগর, পাথুরে সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউ, সফেদ বালুকারাশি নিয়ে টানা তিন কিমি ব্যাপ্তি কাশিদ সৈকতের। একদিকে ক্যাসুরিনা ও গুল্মলতার ঝোপঝাড়। জলজ স্পোর্টসের এলাহি ব্যবস্থা সৈকত চত্বরে। প্রচুর রিসর্ট ছাড়াও আছে নীল দিনান্তের খোলা আকাশের নীচে তাঁবুতে রাত্রিবাসের অদ্ভুত রোমাঞ্চ।

ভারসোলি সৈকত

ছোট্ট ‘হ্যামলেট’ বলা যায় আলিবাগ শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বে ভারসোলি অঞ্চলটিকে। ১৭ শতকে শিবাজির বিশ্বস্ত নৗসেনানায়ক কনহৗজি আংরের নৗঘাঁটি ছিল ভারসোলি। সুকৗশলী অবস্থানের জন্য আজও ভারতীয় নৗসেনাবাহিনি এলাকাটি ব্যবহার করেন। ভারসোলিতে এখন একটি সুন্দর উপনগরীও গড়ে উঠেছে।

সাদা বালুকাবেলা, ঈষৎ তৈলাক্তরঙা সাগরজল।  আলিবাগের দূরন্ত ভিড় এড়িয়ে ভারসোলির রম্য রিসর্ট ও হোমস্টেতে অবসর কাটিয়ে যান। ভারসোলি সৈকতে সকাল ও বিকেলটা ভারি মনোরম।  সৈকতে প্রচুর ওয়াটার স্পোর্টসের রমরমা। ভারসোলি সৈকতে জমে ওঠে স্থানীয় তরুণদের বিচ ভলিবলের আসর।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...