নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, syringomyelia অসুখটির নাম-ই শোনেননি সিংহভাগ সাধারণ মানুষ। কারণ, এই অসুখে সচরাচর কাউকে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না। কিন্তু, এক পরিচিত মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পর, অস্ত্রোপচার করে সুস্থ হয়েছেন জেনে, অসুখটির সম্পর্কে বিশদে জানার খুব কৌতূহল হল। আর সেই কৌতূহল মেটালেন নিউরো সার্জন ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠি।

সিরিঙ্গোমিলিয়া রোগটি আসলে কী?

সিরিঙ্গোমিলিয়া একটি বিশেষ ব্যাধি, যার ফলে Spinal chord-এ অতিরিক্ত তরল (সিরিঙ্গস) তৈরি হয়। এই সিরিঙ্গস আরও বেড়ে গেলে, স্পাইনাল কর্ডের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িড (সিএসএফ) সাধারণত ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ডের আশপাশে থাকে এবং রক্ষাও করে। এই প্রবাহ স্পাইনাল কর্ড বরাবর একটি সরু ক্যানাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। কোনও মানুষের যদি সিরিঙ্গোমিলিয়া থাকে, সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িড স্পাইনাল কর্ডের টিস্যুর কাছে জড়ো হয় এবং সিরিঙ্গস তৈরি করে। সিরিঙ্গোমিলিয়া সাধারণত কিয়ারি ম্যালফরমেশনের সাথে যুক্ত একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যেখানে ব্রেনটিস্যু ফোরামেন ম্যাগনাম অবধি পৌঁছে থাকে এবং সিএসএফ-এর প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায়।

কী কী কারণে হয় এই অসুখ?

সিরিঙ্গোমিলিয়া স্পাইনাল কর্ডে চোট, স্পাইনাল কর্ডে টিউমার, আঘাতের ফলে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কারণ নাও জানা যেতে পারে।

Syringomyelia Symptoms কী?

উপসর্গগুলো শরীরের একদিকে বা দুই দিকেই দেখা যেতে পারে। হাতে, পায়ে, ঘাড়ে যন্ত্রণা, ঠান্ডা-গরম বোধ না হওয়া, বিশেষ করে হাতে সেন্স না থাকা, খিদে না পাওয়া বা ব্লাডারের সমস্যা, যৌনক্রিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা, স্পাইনের আকৃতির ক্ষেত্রে সমস্যা (স্কোলিওসিস) প্রভৃতি। এই উপসর্গগুলো না থাকলে, সিরিঙ্গোমিলিয়া হয়েছে বলা যাবে না।

কীভাবে করা হয় সিরিঙ্গোমিলিয়ার চিকিৎসা?

সিরিঙ্গোমিলিয়ার ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্যে নিউরোলজিকাল পরীক্ষানিরীক্ষা এবং তারপর ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) করা জরুরি। রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ভারী কাজ যেমন ভারী জিনিস তোলা, লাফালাফির মতো শারীরিক কাজ করা চলবে না। যাদের কিয়ারি ম্যালফরমেশনের সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ক্লান্তির সঙ্গে মাথাব্যথা হতে পারে। তবে সিরিঙ্গস বেড়ে না থাকলে, ব্যথার উপশমের জন্য নিয়মানুগ চিকিৎসা কার্যকরী হতে পারে। তাই, শুরুর দিকে ফিজিওথেরাপিকে রোগ নিরাময়ের মাধ্যম করা যেতে পারে। কিন্তু প্রয়োজন হলে, অর্থাৎ ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপি-তে কাজ না হলে, অস্ত্রোপচার করে রোগ নিরাময় করতে হবে। কিয়ারি ম্যালফরমেশনের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের লক্ষ্যই হল, মাথা ও গলার উপরের দিকে ক্ষেত্রবিশেষে আরও একটু জায়গা তৈরি করা। এর ফলে ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ কমবে এবং সিএসএফ-এর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকবে। অস্ত্রোপচারের ফলে সিরিঙ্গস বেরিয়ে যেতে পারে। অনেক সময় ছোটো হয় বা কিছু ক্ষেত্রে একদম কমে যাওয়ার নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে। তবে, সিরিঙ্গস যদি একই রকম থাকে বা আগের চেয়ে কমে যায়, তাহলে ভালো। কিন্তু চিকিৎসায় দেরি করলে স্পাইনাল কর্ডের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সিরিঙ্গস কমিয়ে দেওয়ার দিকটি সেখানেই দেখা হয়, যেখানে সিরিঙ্গস সমস্যা তৈরি করে। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, স্পাইনের কোনও সমস্যা, অর্থাৎ যদি অ্যাটলাস এবং অ্যাকসিস (সারভিকাল স্পাইনের উপরের দুটি ভারটিব্রা) হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, সিরিঙ্গস এবং কিয়ারি ম্যালফরমেশনই কারণ। এই ক্ষেত্রে স্পাইন ঠিক করার চিকিৎসা সফল হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...