তুরস্কের একটি বড়ো শহর ইস্তানবুল। ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য, সৗন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারণে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই শহর। এক সময় এই ইস্তানবুল-ই ছিল তুরস্কের রাজধানী।

তিন বছর আগে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে আমি ইস্তানবুল গিয়েছিলাম। আমাদের এই ট্রিপ চার দিনের ছিল। আমরা খুব আনন্দ করেছিলাম ওই কয়েকদিন। ঘোরাফেরা, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া করে খুব মজা করেছি। অর্থাৎ এক যাত্রায় যতটা হইচই, আনন্দ করা যায়, তার পুরোটাই উপভোগ করেছি আমরা। তাই আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে এই ট্রিপ। এখনও যখন আমরা সবাই এক জায়গায় জড়ো হই, তখন ইস্তানবুলের প্রসঙ্গ উঠবেই এবং আমরা ওই আনন্দের দিনগুলি স্মরণ করবই। সত্যিই ভরপুর সৗন্দর্যে সমৃদ্ধ এই শহর।

বাসপোরস নদীর সৗন্দর্য

আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে, ইস্তানবুল ভ্রমণের আগে আমি কখনও নদী দেখিনি। শুধু শুনেছিলাম নদীর সৌন্দর্য সম্পর্কে। কিন্তু ইস্তানবুল গিয়ে  বাসপোরস নদী দেখে আমি মুগ্ধ। শুধু দেখেই চলেছিলাম নিষ্পলক। এতটাই পরিষ্কার, স্বচ্ছ এই নদী যে, আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। ওখানকার সব নদী দেখে-ই আমি মুগ্ধ হয়েছি। নদীর জল নীলাভ। তবে এই নীল রঙেরও নানা শেডখেলা করে নদীর জলে, যা দেখে আমি চোখের পলক ফেলতে পারিনি। এছাড়া আমরা সবাই ক্রুজে গিয়েছিলাম।এই এক্সপিরিয়েন্স-টাও ছিল অসাধারণ। ক্রুজ-এর সৗন্দর্যও মনে গেঁথে আছে এখনও।

খাওয়াদাওয়া

ইস্তানবুলের খাবারও দারুণ! সেই টেস্ট আজও ভুলতে পারিনি। সব খাবারের নাম হয়তো ঠিক মতো বলতে পরব না এখন কিন্তু এক একটা রেস্তোরাঁয় এক এক রকম খাবারের স্বাদ পেয়েছি। বিভিন্ন দেশের খাবারে সমৃদ্ধ সেসব রেস্তোরাঁ। তবে ওই তালিকায় ইন্ডিয়ান খাবার না থাকার জন্য আমার একটু অসুবিধা হয়েছিল। কারণ, তিন দিনের বেশি ইন্ডিয়ান খাবার না পেয়ে আমার একটু কষ্ট হয়েছে। তাই, চতুর্থ দিন আমরা ইন্ডিয়ান খাবারের খোঁজ শুরু করি। অনেক খোঁজাখুজির পর অবশেষে পেয়েছিলাম একটা ইন্ডিয়ান ধাবা। ওখানে আমরা বাটার চিকেন, বাটার নান্, তন্দুরি নান্, ডাল মাখানি, বিরিয়ানি সবকিছুরই স্বাদ নিয়েছি। সত্যি বলতে কী, বিদেশে গিয়ে ইন্ডিয়ান খাবার পেয়ে আনন্দে আমরা প্রায় আত্মহারা হয়েছিলাম।

ইস্তানবুল-এর দুই রূপ

ইস্তানবুলের ভৌগোলিক ক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে, এর দুটি ভিন্ন রূপের উল্লেখ করতেই হবে। কারণ, এই দুটি জায়গা একে অন্যের থেকে আলাদা। এক হচ্ছে পরম্পরাগত পুরোনো ইস্তানবুল, আর অন্যটি আধুনিক শহরের  চাকচিক্য। তবে আমরা দেখলাম, পুরোনোর থেকে বেশি ভিড় ছিল নতুন ভাবে গড়ে ওঠা অংশে। আমরা অবশ্য দু’টি রূপ-ই উপভোগ করেছি। বুঝেছি দুটি ক্ষেত্রের সাংস্কৃতিক তফাত। অন্যান্য দেশের মতো ইস্তানবুলেরও একটা অংশ আধুনিকতায় মোড়া, কিন্তু যে-অংশ তুরস্কের ঐতিহ্য বহনকারী, তা দেখে বেশি ভালো লেগেছিল আমাদের। আর ওই পুরোনো জায়গাতেই আমরা প্রচুর জাংক জুয়েলারি কিনেছি। শুধু নিজের জন্য নয়, বন্ধুদের জন্যও অনেক অলংকার এবং উপহার কিনেছিলাম। ওখান থেকে এত কিছু কিনেছিলাম কারণ, ওখানকার সব জিনিসই ইউনিক ছিল, যা অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল।

Travelogue Istanbul

মনকাড়া ইতিহাস

ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করতেই হচ্ছে। এই শহরের আদি নাম কন্সটান্টিনোপল। তবে একসময় বাইজান্টিয়াম নামেও পরিচিত ছিল এই শহর। সাত পাহাড়ের শহরও বলা হয় ইস্তানবুলকে কারণ, শহরের সবচেয়ে প্রাচীন অংশটি গড়ে উঠেছে সাত পাহাড়কে কেন্দ্র করে।

ইস্তানবুল প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরতে চাই। বিষয়টি হল– এটি দুটি মহাদ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। এর একদিকে ইউরোপ, অন্যদিকে এশিয়া। তাছাড়া, তুরস্কের আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও এই ইস্তানবুল। তাই, এক আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এই শহরের। ইস্তানবুলে এমন কয়েকটি সংগ্রহশালা রয়েছে, যা এখানকার ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে।

পেরা মিউজিয়াম, আতাতুর্ক মিউজিয়াম, সিটি মিউজিয়াম, ইস্তানবুল মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট, টার্কিশ অ্যান্ড ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম প্রভৃতি যেমন ইতিহাসকে আগলে রেখেছে, ঠিক তেমনই, প্রিন্সেস আইল্যান্ড প্রাকৃতিক সৗন্দর্যের আকর হয়ে রয়েছে।

ফতেহ অঞ্চলে অবস্থিত বেজিদ মসজিদের খুব কাছেই রয়েছে বইয়ের বাজার। যেখানে পাওয়া যাবে ইস্তানবুলের শিক্ষা, সাহিত্য,সংস্কৃতি এবং ইতিহাস বিষয়ক বই।যারা শপিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য রয়েছে গ্র্যান্ড বাজার। ওখানকার পুরোনো বাজারগুলির মধ্যে এই বাজার অন্যতম। রবিবার ছাড়া প্রতিদিন-ই খোলা থাকে এই বাজার। গয়না, সাংসারিক জিনিসপত্র, পোশাক, খেলনা সবকিছুই রয়েছে এখানে। তবে এখানে সবচেয়ে বিখ্যাত হল রান্নার মশলা। নানারকম সেই মশলার গন্ধ আজও আমার নাকে লেগে রয়েছে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...