স্বাস্থ্য-ই যে সম্পদ, এ বিষয়ে দ্বিমত থাকা উচিত নয়। কারণ, অর্থ, সম্পত্তি, খ্যাতি, লোকবল, ভালোবাসার মানুষ যা-ই থাকুক না কেন, সবই গৌণ হয়ে যায় যখন বড়ো কোনও রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। তখন প্রাধান্য পায় শুধু সুস্থ হওয়ার তাগিদ। বাঁচতে ইচ্ছে করে সবকিছুর বিনিময়ে। কিন্তু তখন হয়তো শত চেষ্টাতেও আর আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক শরীর কিংবা জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। হয়তো তখন সম্পূর্ণ সুস্থতা ফিরে পাওয়া যায় না আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার পরেও। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য, সুস্থতার চাবিকাঠি হয়তো আয়ত্তে থাকে না তখন। অতএব, আজ এখন-ই সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

কী হয়নি, কী হতে পারত, কীসের অভাবে আপনার শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে পারেননি, এসব নিয়ে এখন বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং, এই নতুন বছরে নতুন কিছু করার সংকল্প নিন। আর সেই সংকল্প হোক স্বাস্থ্যরক্ষার।

প্রথমে মনে রাখতে হবে, সুস্বাস্থ্যের কিছু মানদণ্ড আছে। এই মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেমন–

১) কর্মশক্তিঃ স্বাভাবিক ভাবে কাজ কিংবা পরিশ্রম করার শক্তি।

২) দৃষ্টিভঙ্গিঃ প্রতিটি কাজের ইতিবাচক মনোভাব।

৩) বিশ্রামঃ পরিশ্রমের নিরিখে প্রয়োজনীয় আরাম এবং ঘুম।

৪) ভারসাম্যঃ প্রকৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং মনুষ্য-প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া।

৫) প্রতিরোধ শক্তিঃ সাধারণ সর্দি-কাশি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধক ক্ষমতা।

৬) উপযুক্ত ওজনঃ বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের সঠিক ভার।

৭) দৃষ্টিশক্তিঃ চোখের স্বাভাবিক উজ্জ্বল দৃষ্টি।

৮) দুর্গন্ধহীনতাঃ মুখের ভেতর এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের না হওয়া।

৯) ঔজ্জ্বল্যঃ খুসকিবিহীন উজ্জ্বল চুল এবং তেলবিহীন মুখমন্ডল।

১০) ব্যথাহীনতাঃ  ব্যথা-যন্ত্রণাহীন শরীরের হাড় এবং পেশিসমূহ।

এই দশটি মানদণ্ড বিচার করলেই বুঝে যাবেন, শারীরিক ভাবে আপনি কতটা সুস্থ। আর আপনার সুস্থতায় যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে প্রস্তুতি নিন সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার। এরজন্য অবশ্য নিষ্ঠার সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। দিনে-রাতে এইসব নিয়ম মেনে চললে, ২০২১ সালের মধ্যে আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন কিংবা নতুন করে স্বাস্থ্যসুন্দর হতে পারবেন।

২০২১-এর জন্য টিপসঃ 

  •  ঘুম থেকে উঠুন সকাল ৬টার মধ্যে। মৌরি ভেজানো জল কিংবা ত্রিফলার জল, অথবা পাতিলেবুর রস হালকা গরম জল দিয়ে অথবা চিরতার জল (প্রতিদিন নয়, মাঝেমধ্যে) পান করুন, মেদবিহীন পেটও পরিষ্কার থাকবে
  • ঢিলেঢালা পোশাক পরে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন অথবা ১৫ মিনিট দৌড়োন, এতে হূদরোগ আটকাতে পারবেন
  • সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত খাবার খান সঠিক সময়ে। ৭টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট, ১টার মধ্যে লাঞ্চ, ৪টে–৬টার মধ্যে টিফিন এবং ৯টার মধ্যে ডিনার সারুন, শরীর ভালো থাকবে
  •  খাবারে শাকসবজির পরিমাণ যেন বেশি থাকে। মাছ বেশি খাবেন, মাংস কম খাবেন। প্রতিদিন অন্তত দুটো ফল খাওয়া জরুরি। কমলালেবু, কিউই, খেজুর, পাকা পেঁপে এসব অবশ্যই খাবেন মাঝেমধ্যে। এতে পেট পরিষ্কার থাকবে এবং শরীরও সঠিক ভিটামিনের জোগান পাবে
  •  প্রতিদিন এক কাপ দুধ খাবেন। মাঝেমধ্যে ডাবের জল খাবেন। আর, দিনে-রাতে অন্তত ৩-৪ লিটার (প্রা৫ বয়স্ক) জল পান করবেন।

দুধ-চায়ের পরিবর্তে গ্রিন-টি পান করুন, শরীর রোগমুক্ত থাকবে

  • দুপুরে না ঘুমোনোই ভালো। রাতে অবশ্যই ১০টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘুমোতে যাবেন। ৬-৮ ঘন্টা গভীর ঘুম চাই রাতে। এর ফলে ফুরফুরে মেজাজ থাকবে
  •  গায়ে সাবান মেখে পরিপূর্ণ স্নান করুন প্রতিদিন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ভালোমানের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোবেন। সকালে এবং রাতে খাওয়ার পরে টুথপেস্ট দিয়ে ভালো ভাবে ব্রাশ করুন, দুর্গন্ধমুক্ত থাকবেন
  •  ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখুন ঘরবাড়ি। ঘরে পর্যা৫ আলো-হাওয়া ঢুকতে দিন, জীবাণুমুক্ত রাখুন। বাড়ির চারপাশ যেন জঞ্জালমুক্ত থাকে। ছুটির দিনে বালিশ, বিছানাকে পর্যা৫ রোদ খাওয়ান, নিরোগ, সুস্থ থাকবেন
  •  ধোয়া জামাকাপড় কড়া রোদে শুকিয়ে নিন, নয়তো ত্বক-সমস্যা হতে পারে
  •  কর্মক্ষেত্রে একনাগাড়ে বসে থাকবেন না। মাঝেমধ্যে হাঁটাচলা করুন এবং সুযোগ থাকলে একটু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিন, স্থূলত্ব এবং হূদরোগ এড়াতে পারবেন
  •  শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি ক্ষয় করার জন্য ঘাম-ঝরানো পরিশ্রম করুন অবশ্যই
  •  যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট। একটানা বেশিক্ষণ মোবাইলে কথা বলবেন না এবং কোনও কিছু বেশি সময় ধরে দেখবেন না। এতে চোখ এবং মস্তিষ্কের রোগ এড়াতে পারবেন
  • একঘেয়েমি কাটাতে পরিবারের সবাই কিংবা বন্ধুবান্ধব মিলে বেড়াতে যান মাঝেমধ্যে। সর্বদা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন
  • বন্ধ করুন ধূমপান এবং মদ্যপান, আয়ু বাড়বে
  •  উপযুক্ত ফোরপ্লে-র মাধ্যমে নিয়মিত যৗনতৃিঀ৫ লাভ করুন। সুরক্ষিত যৌনসম্পর্কের জন্য কন্ডোমের ব্যবহার আবশ্যক
  • ৬ মাস অন্তর ব্লাড টেস্ট করিয়ে দেখে নিন সুগার, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল ইত্যাদি আয়ত্বে আছে কিনা। আর সেইসঙ্গে, মাঝেমধ্যে ব্লাড প্রেসার (বিপি) চেক করিয়ে নিন, সুস্থ এবং নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন
  •  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ কিনে খাবেন না। বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ওইসব ওষুধ খাবেন না, বিপদে পড়বেন
  •   যৌনরোগ এড়াতে বাড়ির শৌচালয় পরিষ্কার রাখুন এবং বাড়ির বাইরে অপরিষ্কার শৌচালয় ব্যবহার করবেন না
  •  পেটের অসুখ এড়ানোর জন্য ফুটপাথ-এ খোলা জায়গায় রাখা কাটা ফল কিংবা অন্যান্য খাবার কিনে খাবেন না
  • ভালোমানের জুতো ব্যবহার করুন। একদিকে ক্ষয়ে যাওয়া জুতো পরবেন না, এতে নার্ভ-এর চাপ এড়াতে পারবেন।

—–সুরঞ্জন দে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...