সময় খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। মাল্টিটাস্কিং এখন চরিত্রের গুণ শুধু নয়, আজকের সময়ে বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বাচ্চার স্কুল যাওয়ার বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিভাবকদের উচিত লেখাপড়া, স্পোর্টস, ব্রেন অ্যাক্টিভিটি ট্রেনিং এবং অন্যান্য ক্রিয়েটিভ অ্যাক্টিভিটি-র সঙ্গে বাচ্চাকে ধীরে ধীরে কিছু রান্না শেখানো। এটা শুধুমাত্র বাচ্চাকে কিছুক্ষণ এনগেজ রাখার জন্যই নয় বরং এটার অনেক লাভের দিকও আছে।

শিখতে সাহায্য করে – রান্না করার সময় যদি বাচ্চা আশেপাশে থাকে তাহলে তাকেও বলুন আপনাকে রান্নায় সাহায্য করতে। ফ্রিজ থেকে সবজি বার করে আনা, কোনটা কী সবজি ইত্যাদি তাকে চেনানো। বাচ্চাদের মনে সবসময় নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে। যখন সে খুব কাছ থেকে এইসব জিনিস দেখবে, স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলো দিয়ে কী হয় সেটা জানারও আগ্রহ তাদের বাড়বে।

শেখান সবকিছু খেতে – বেশিরভাগ অভিভাবকেরই সমস্যা হয়, তাদের বাচ্চারা অনেক সবজি বা ফল খায় না। তার একটা কারণ হল এরমধ্যে বেশিরভাগ ফল বা সবজি বাচ্চা হয়তো একবার দেখেছে অথবা কখনও-সখনও দেখে। যখন রান্নার সময় রোজ বাচ্চার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করবেন তখন বাচ্চার মনেও সেই খাবারটা খাওয়ার ইচ্ছে জাগবে।

বাচ্চার গুরুত্ব বাড়বে – বাচ্চারা সবসময় চায় বড়োদের মধ্যে থেকেও নিজের গুরুত্ব বাড়াতে। কিন্তু কীভাবে সেটা সফল হবে সেটা সবসময় তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। ফলে বাচ্চা জেদ, বায়না ইত্যাদির আশ্রয় নেয়। এছাড়াও তারা চায় বড়োরা তাদের অ্যাটেনশন দিক। সুতরাং বড়োদের কাছে কিছুটা রান্না শিখতে পারলে তারা বড়োদের সাহায্য ছাড়াই রান্নায় নিজস্ব স্কিল প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাবে। ফলে পুরো পরিবারে তার গুরুত্বটাও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

নতুন আবিষ্কারের আনন্দ – রান্নায় বড়োদের শেখানো পদ্ধতি মেনে চলতে হবে এরকম বাঁধাধরা নিয়মে বাচ্চাকে বন্দি না রেখে, মাঝেমধ্যে তাকে তার নিজেরমতো করে রান্না করার সুযোগ দিন। এতে তার মনে স্বাধীন ভাবটাও যেমন জেগে উঠবে, তেমনি নতুন কিছু ইনোভেশনের ইচ্ছাও জাগবে। বড়োদের ছায়া থেকে সরে এসে নতুন কিছু করার নেশা তার মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। বাড়বে ক্রিয়েটিভ স্কিল।

হেলদি ইটিং হ্যাবিট তৈরি করুন – রান্না করতে করতে রান্নাটাতে ব্যবহূত সামগ্রীর হেল্থ বেনিফিট্‌স সম্পর্কে বাচ্চার কাছে বলুন। ধীরে ধীরে বাচ্চা নিজেই ফল, সবজি এবং অন্যান্য খাওয়া-দাওয়ার জিনিস সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করা শুরু করবে।

বন্ডিং এবং বন্ধুত্ব বাড়বে – বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ডিং এবং বন্ধুত্ব তৈরি করতে এবং তাদের শখ সম্পর্কে জানতে বাড়ির মধ্যে সবথেকে ভালো জায়গা হল রান্নাঘর। বাচ্চারা চঞ্চল প্রকৃতির হয়, ফলে তাদের এক জায়গায় বসিয়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু রান্নাঘরে আলাদা আলাদা জিনিসের ব্যবহার এবং নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি সহজেই বাচ্চাকে আকর্ষণ করে। এর ফলে বাচ্চা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রান্নাঘরে কিছুটা সময় নিজেই কাটাতে আগ্রহী হয়। ব্যস ওই সময়টুকু বাচ্চার সঙ্গে বন্ডিং এবং বন্ধুত্ব বাড়াতে ব্যবহার করুন।

বাচ্চাকে আত্মনির্ভর করে তোলে – কেরিয়ার গড়ে তুলতে অনেক বাচ্চাকেই টিন এজে বাড়ি ছেড়ে দূরে হোস্টেলে বা পিজিতে থাকতে হয়। বাচ্চা যদি ছোটো থেকেই বাড়িতে রান্নার সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায় তাহলে বাইরে থাকাকালীন সেটাই তার সবথেকে বেশি কাজ দেবে। মনের মতন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বানিয়ে নিতে তাকে কারও উপর নির্ভর করতে হবে না। নিজেই স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।

বাচ্চাদের রিডিং স্কিল বাড়বে – রেসিপি দেখে রান্না করার সময় বাচ্চাকে রেসিপিটি আপনার হয়ে জোরে জোরে পড়তে বলতে পারেন। বাচ্চা খুব ছোটো হলে ২ কাপ ময়দা অথবা ৪-টে আলু বা ৮ চা-চামচ মাখন বা ঘি, ১২-টি ডিম ইত্যাদি নাম্বারগুলি চোখে দেখে শিখবে এবং সেই অনুযায়ী জিনিসগুলি একজায়গায় রাখলে তার নাম্বারের জ্ঞান বাড়বে। বাচ্চা বড়ো হলে পদ্ধতির প্রতিটা স্টেপ পড়ে সেইমতো তাকে প্রতিটা স্টেপ মানতে বলুন। এর ফলে পড়ার অভ্যাসও যেমন তৈরি হবে তেমনি পদ্ধতিটি শিখতেও সুবিধা হবে।

বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান বাড়বে – রন্ধন প্রক্রিয়া অনেকটাই বিজ্ঞান নির্ভর। রান্নার কিছু জিনিস একসঙ্গে মেশালে কী হয় অথবা মাপ যখন ভুল হয় তখন কী হতে পারে, বাচ্চা সেটা চট্ করে শিখে যেতে পারে।

ফোকাস এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে – রান্নার সময় বাচ্চাকে কাজটার প্রতি ফোকাস রাখতে হয়। মনোযোগ না দিতে পারলে রেসিপির সামান্য ভুলভ্রান্তি রান্নাটাকে খারাপ করে দিতে পারে। অথচ বাচ্চারা চায় তারা কিছু তৈরি করলে সকলে প্রশংসা করুক। সুতরাং তারা খুব তাড়াতাড়ি শিখে যায় অ্যাটেনশন দিলে তবেই রেসিপি অনুযায়ী পারফেক্ট খাবারটা তারা তৈরি করতে পারবে। ধৈর্য বাড়ানো, এক জায়গায় বেশ কিছুটা এনগেজ থাকার বিষয়গুলির জন্য কুকিং খুব ভালো অ্যাক্টিভিটি।

অঙ্কের মাথা পরিষ্কার হবে – রান্নায় নানা ধরনের মাপের প্রয়োজন হয়। বাচ্চারাও রান্না করতে গেলে সেই মেজারমেন্টগুলো শিখতে পারবে। যেমন এক কাপ চাল বা দুই চা-চামচ জিরেগুঁড়ো অথবা চার টেবিল চামচ রান্নার তেল ইত্যাদি। এমনকী ভগ্নাংশ, যোগ-বিয়োগ ইত্যাদিও তারা তাড়াতাড়ি শিখতে পারে। এর ফলে অঙ্কের বেসিক জিনিসগুলো তারা ছোটো থাকতে খুব সহজেই শিখে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।

সুতরাং বাচ্চার বয়স অনুযায়ী তাকে সহজ কিছু রান্না শিখিয়ে রাখুন যাতে সে-ও ‘হেলদি ইটিং হ্যাপি লিভিং’-এর সঠিক মানে বুঝতে পারে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...