সময়ের দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে একাধিক বাচ্চা থাকত। একসঙ্গে এতগুলো ভাই-বোন কীভাবে যে মানুষ হতো, সেটা সঠিক ভাবে কেউ-ই হয়তো বলতে পারবেন না। বিশেষ একজনকে নিয়ে মাতামাতি করতেও দেখা যেত না। বাড়ি ভর্তি লোকজন থাকত। সকলেরই শাসন এবং আদরে বাচ্চারা সবার অলক্ষ্যে কখন যেন বড়ো হয়ে উঠত।

বাড়িতে অনেক লোকজন, সংযুক্ত পরিবার এসবের কনসেপ্টটাই এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন ছোট্ট পরিবার– বাবা, মা এবং একটি, বড়োজোর দুটি সন্তান। তারপর প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে বিজ্ঞাপনের রমরমা। রাস্তায় টাঙানো হচ্ছে হোর্ডিং, সিনেমা, টিভিতে বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে সুন্দর, ফুটফুটে বাচ্চাদের দিয়ে করানো কিছু ফুটেজ। আর এই বিজ্ঞাপন দেখে মা-বাবার স্বপ্ন, যদি তাদের সন্তানটিও বাস্তবে এরকম গোলগাল, সুন্দর হয়। কিন্তু স্বপ্ন অনেক সময়ই বাস্তবায়িত হয়ে ওঠে না।

সমবয়সি বাচ্চাদের মতো যদি নিজের সন্তান অ্যাকটিভ না-হয়, তাহলে প্রথমেই বাচ্চাকে অতিমাত্রায় শান্ত ধরে নেওয়া ঠিক নয়। এটা অসুস্থতাও হতে পারে। তাই ভালো হবে যদি সন্তানকে ডাক্তার দেখিয়ে সঠিক পরামর্শ নেওয়া হয়।

সুস্থ হওয়ার মানে

শিশু বিশেষজ্ঞের মতে বাচ্চা যদি বিকলাঙ্গ না হয় এবং মানসিক ভাবে সুস্থ হয়েও সবসময় চুপচাপ, শান্ত থাকে–তাহলে তার কিছু লক্ষণের উপর নজর রাখা উচিত।

  • যদি ৪-৫ মাসের বাচ্চা আলোর দিকে না তাকায়, ঝুমঝুমির আওয়াজ শুনেও সেটা ধরার চেষ্টা না করে,মা-কে চিনছে অথচ গলা থেকে নানারকম আওয়াজ বের না করে তাহলে সেটা নিয়ে ভাবা দরকার
  • যখন দেখবেন ১০ মাসের বাচ্চা, দাদা-বাবা বলছে না অথবা চলবার চেষ্টা করছে না, সেটা অস্বাভাবিক
  • ৪-৫ বছরের বাচ্চার খেলাধুলোয় কোনও মন নেই, সমবয়সি কোনও বন্ধুবান্ধব নেই অথবা তাদের সঙ্গে কথা বলে না, সবসময় সবকিছুতে বিরক্তি– এইসব অস্বাভাবিকতা যদি লক্ষ্য করা যায় বাচ্চার মধ্যে, তা হলে তাকে নিয়ে চিন্তার দরকার আছে। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে জানতে হবে বাচ্চার কী অসুবিধা রয়েছে।

শিশুর শারীরিক দুর্বলতার কারণ

অনেক কারণেই শিশু শারীরিক ভাবে দুর্বল থাকতে পারে তবে বিশেষ কয়েকটি কারণ রয়েছে যেমন,

  • গর্ভধারণ করার সময় মা যদি পুষ্টিকর আহার না-খেয়ে থাকেন এবং মায়ের স্বাস্থ্য যদি খারাপ থাকে
  • প্রসবের সময় যদি কোনওরকম সমস্যা হয়ে থাকে অথবা প্রসবক্রিয়ার সময় কোনও বাধার কারণে যদি শিশুর মস্তিকে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছোতে না-পারে, তাহলেও শিশু জন্ম থেকেই দুর্বল হয়
  • জন্মগত কোনও অসুখের শিকার হলেও শিশু দুর্বল হয়, যেমন হার্টের অসুখ, নিঃশ্বাসের অসুবিধা, হাঁপানি ইত্যাদি।
  • গর্ভাবস্থায় এবং জন্মাবার পর শিশু যদি পুষ্টিকর খাবার না-পায় তাহলে শিশুর প্রতিরোধক ক্ষমতা ঠিকমতো গড়ে ওঠে না। এর ফলে পেটের রোগ, বারবার জ্বর আসা, রক্তের অভাব ইত্যাদি অসুবিধা দেখা দেয়।
  • গর্ভাবস্থায় প্রথম ৪ মাসের মধ্যে যদি মায়ের হাম, বসন্ত ইত্যাদি ছোঁয়াচে রোগ হয়ে থাকে, তাহলে জন্মের পর শিশুর মধ্যেও এই ইনফেকশনের জীবাণু চলে আসে। এর ফলে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।
  • উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও, অনেক সময় শিশুকে দেখেই বোঝা যায় সে সম্পূর্ণ সুস্থ কিনা। অনেক সময় বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম হয় আবার অনেক শিশুর ওজন অস্বাভাবিক বেশি হয়। ‘অ্যাসেসমেন্ট অফ গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ সংস্থার সাহায্যে জানা যায়, শিশু সুস্থ কিনা এবং তার সঠিক গ্রোথ হচ্ছে কিনা।

মানসিক অসুস্থতা ছাড়া শিশুর মধ্যে যদি শারীরিক কোনও দুর্বলতা থেকে থাকে, যেটা ঠিক হওয়া সম্ভব, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। পুষ্টির অভাব যদি শিশুর হয়ে থাকে তাহলে ডায়াটিশিয়ানের সঙ্গে আলোচনা করে তার খাদ্য-তালিকা বানিয়ে, তাকে সঠিক পুষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও বাড়ির সঠিক পরিবেশও বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...