সবুজ ধানখেতের বুকে চরে বেড়াচ্ছিল দামাল হাওয়া। পাকা রাস্তা ছেড়ে মোরাম রাস্তা ধরতেই জুড়িযে গেল দুচোখ। সরু ফিতের মতো লালমাটির রাস্তার দুধারে ঘন সবুজের লুটোপুটি। রাজা বাইক চালাতে চালাতে গুনিনের গুণকীর্তন করতে করতে যাচ্ছিল। আর আমি হাঁ-হুঁ করে যাচ্ছিলাম। আসলে আমি অর্ধেক কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না। বাকি যা কানে আসছিল তা অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছিলাম। সত্যি বলতে কী আমি মণির কথা ভাবছিলাম। ভাবছিলাম তাড়াতাড়ি মুক্তির কথা।

আমার তুকতাকে কোনও দিনই বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু মানুষ যখন সমস্যার

অকূল-পাথারে ভাসে, তখন খড়কুটোও আঁকড়ে ধরতে চায়। আমিও ধরেছিলাম।

সুরভি আমার জীবনে আসার পর ঝগড়া-ঝাঁটি, অশান্তি কম হল না, বিগত দুবছরে। কিন্তু মণিদীপা ছেড়ে যাবার কথা উচ্চারণ করে না একটি বারও। বিয়ে প্রথম কয়েক বছরে, যখন মণির সাথে আঠা আঠা ভাব, রোজ বার-দুতিনেক দুটো শরীরের গভীর সংযোগ–তখন ওকে বলতে শুনতাম, আমার জিনিসে কেউ যেন কোনও দিন ভাগ না বসায়… যদি দেখেছি কারও সাথে কিছু করেছ, সটান বাপের বাড়ি।

বিয়ের নবছর পর মণিদীপা আর বাপের বাড়ি যাবার নাম উচ্চারণ করে না। বলে, কত অত্যাচার করতে পারবে করো। সব সহ্য করেও পড়ে থাকব। সময় সময় অসহ্য লাগে ওর এই সতীপনা। দুএকবার চড় থাপ্পড়ও মেরেছি। আর একবার মাটিতে ফেলে বুকে… যাক, সেবার ওর দোষ ছিল খুব!

অত্যাচার অত্যাচার কথাটা ফলাও করে বলার মতো কী আছে? পাবলিকে খুব খায় বলে? আমি ওকে কী অত্যাচার করেছি? খাওয়া দিই, পরা দিই, দামি মোবাইল, মান্থলি নেট প্যাক, বিউটি পার্লার খরচা… আর কী চাই ওর মতো একটা গড়পড়তা মেয়ের? বলে নাকি অবহেলা করছি, আর সেটাই অত্যাচার! নাও বোঝো! মেয়েরা কবে আর বুঝবে, পুরুষমানুষ মাত্রই জিনগত ভাবে বহুগামী।

অফিসের শৈবাল প্রতি সপ্তাহে মেয়ে চেঞ্জ করে। কই ওর বউ তো অশান্তি করে না। মনোরমের মতো ক্যাসানোভাও দিব্যি বউ নিয়ে সংসার করছে। সেদিন ব্যালকনিতে বসে মণি কাকে যেন ফোনে শোনাচ্ছিল অবহেলা নামক অত্যাচারের কথা। ঘুম ভেঙে ওঠার পর সেই শুনে আমার মটকা একটু গরম হয়ে গেছিল। টুসি ছুটে এসেছিল পাশের ঘর থেকে।

বাবা, বাবা, বাবা গো… কাঁদছিল টুসি। ততক্ষণে টেবিলে রাখা কাচের গেলাস মেঝেয় পড়ে ভেঙে গেছে। আর তার উপর মণির কপাল লেগে কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে। ও ছুটে ডেকে এনেছিল একতলার ডক্টর আংকলকে। বসার ঘরের সোফায় বসে মণিকে দেখছিল ডক্টর দাশগুপ্ত। মণি বলল, বাথরুমে পা স্লিপ করে পড়ে দেয়ালের পেরেকে ঘষা খেয়েছে কপালে। সত্তরোর্ধ ডাক্তারবাবু কী বুঝেছিল কে জানে!

আমি অবশ্য সেই হঠাত্ মাথা গরমের জন্য পরে সরি বলেছি। তবু মনটা বেশ কদিন খুঁত খুঁত করেছে। মনে পড়ত বাইকের স্পিড ঝাঁ করে সত্তরে তুলে দিয়ে ঝাড়খন্ডের ফাঁকা রাস্তায় ঘুরতাম। মণি ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে যেত। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরত মনে হতো ওর শরীরটা বুঝি আমার শরীরে মিশে গেছে। সেদিনের অপরাধবোধ থেকে ওদের উইক এন্ডে দিঘা নিয়ে গেছিলাম। বিকেলের বিচে টুসি ছোটাছুটি করছিল। আমরা যেখানে বসেছিলাম, জল বাড়তে বাড়তে এসে পা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। মণি হাতের মুঠোয় তুলে নিয়েছিল এক আঁজলা জল। আমাকেও তুলতে বলল। আমিও তুলেছিলাম।

বলো, সমুদ্রের এই জল ছুঁয়ে বলছি তোমাকে আবার আগের মতো ভালোবাসব। আমার দিকে করুণ ভাবে তাকিয়েছিল মণি। ওর হাতের জল আস্তে আস্তে মুঠো গলে পড়ে গেছিল। আর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম।

এইসব পুরোনো স্মৃতি আমাকে গিলে খেতে আসত রোজ। কী এক বাধো বাধো ঠেকায় বিগত ছ’মাস ধরে ওকে বলতে পারিনি কথাটা। রোজ অফিস থেকে ফেরার সময় ভাবি আজ কায়দা করে কথাটা বলেই ফেলব ওকে। কিন্তু পারি না। সন্ধেবেলায় ও বসে সিরিয়াল দেখে দোতলার ঘরে। আমি অফিস থেকে ফিরি। গাড়ির শব্দ শুনে ও চায়ের জল বসিয়ে দেয় ইন্ডাকশন কুকারে। আমার যখন তখন চা তেষ্টা পায়। আর ওর থাইরয়েডের হাঁটু ব্যথা। রান্নাঘর একতলায়। বারবার ওঠানামা। তাই শুধু চায়ের ব্যবস্থাটুকু মণি উপরেই করেছে। বাইরের পোশাক, বাইরের জুতো এসব একতলায় খুলি। কলঘরে ঢুকে ফ্রেশ হই। তারপর দোতলায় উঠে আমি আমার কম্পিউটার ঘর কাম ইদানীং শোবার ঘরে ঢোকামাত্র চা হাতে এসে হাজির হয় মণি। কাপটা ধরতে গিয়ে হাতখানা যেন ঈষত্ কেঁপে যায়। সেদিন আর কথাটা বলা হয়ে ওঠে না।

আমার সমস্যার কথা একমাত্র রাজাকেই বলেছিলাম। রাজা শুনে গম্ভীর হয়ে গেল। হুম, ডিভোর্স চাস? মুখে বলতে পারছিস না। তাই তো?

হ্যাঁ, তাই। বিয়ের পর যে বলত এই করলে ছেড়ে চলে যাব ওই করলে বাপের বাড়ি চলে যাব… কই এখন তো আর সেসব বলে না।

সেসব কথার মানে এখন তুই আর বুঝবি না, প্রতীক…। রাজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

বরং ঝামেলা ঝগড়া যাই হোক, বলে তুমি কী ভাবছ অত্যাচার করলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব? আর তুমি সুরভিকে নিয়ে নতুন সংসার পাতবে?

তোদের জুটিটা তো ভালোই ছিল রে…

উফ্, রাজাও সেই এক সেন্টু পাবলিকের দলে। ডিভোর্সের কথা ভাবলেই বুকের খাঁচা থেকে বাতাস উড়ে যায়। বাঙালি বস্তাপচা সম্পর্ক নিয়ে পড়ে থাকবে, তবু ডিভোর্সের কথা শুনলে আঁতকে উঠবে। অসহ্য, এই ফোর জি-র যুগে। কোথায় ফরসা, তন্বী, পতৌদির রানির মতো গালে টোল পড়া এমএসসি, ফিজিক্স। আর কোথায় শ্যামলা,বীরভূম-ঝাড়খন্ড সীমানার সামান্য এইচএস। বিয়ে পর এত মুটিয়ে গেছে মণি যে, আর ওর শরীর ঘেঁটে দেখতে কোনও ইচ্ছাই জাগে না। পঁয়তিরিশ পেরোলাম না, এখন থেকেই এই সন্ন্যাস আমার পক্ষে অসহ্য। সেখানে সুরভি বিছানায় আমাকে পাগল করে রাখে। ওকে দেখলেই পৌরুষ জেগে ওঠে। এমনকী জলের স্রোতের মতো ওর হাসির উচ্ছ্বাস ফোনে যখন আছড়ে পড়ে, আমি টের পাই ঘুমন্ত সাপের ফণা তোলা। আমি এখনও অনেকদিন বেঁচে থাকার স্বাদটা পেতে চাই। আমি একথা কাকে কী করে বোঝাব!

রাজা একবার মণিদীপার জন্য দুঃখপ্রকাশ করল। তারপর অবশ্য বন্ধুত্বের খাতিরে আমার সাহায্যের জন্যই এগিয়ে এসেছিল। ওর কথাতেই প্রথম গিয়েছিলাম গুনিনের কাছে। সাঁইথিয়া শহরের কাছেই। তার কথামতো কাজ শুরু করে দিলাম। মণির হার্টের লেফট ভেন্ট্রিকুলার ডায়াস্টলিক কমপ্লায়েন্স স্লো। আমার কথাতেই একসময় ও অর্জুন গাছের ছাল খাওয়া শুরু করেছিল। রোজ রাতে শোবার সময় জলে ভিজিয়ে রাখত, ফ্রিজের উপরে। আমি টুক করে তাতে গুনিনের দেওয়া জড়ি-বুটি অল্প করে ফেলে দিতাম। কথা ছিল, একমাসের মধ্যে এই ঘর ওর কাছে অসহ্য হয়ে উঠবে। আমায় কিছু বলতে হবে না, ও নিজেই আমাকে ছেড়ে পালাবে।

কিন্তু কোথায় কী! সেই ওষুধে দেড়মাস কেটে গেল। ঝগড়াঝাঁটি বাড়ার বদলে ও তো আরও শান্ত হয়ে গেল। আগে চায়ের কাপ দেবার সময় বাড়ি ফিরতে দেরি হবার জন্য নানান প্রশ্ন করত। ইদানীং তাও বন্ধ করে দিয়েছে।

সবই মণি হজম করে নিচ্ছিল। ছেড়ে যাবার কথা মুখেও আনছিল না। অফিসের পর টুর, আউটডোর সার্ভে এসবের নাম করে সুরোর ফরসা নরম বুকের ঘ্রাণ নিয়ে যখন ফিরতাম, তখন রাত বারোটা পেরিয়ে যেত প্রায়দিনই। এসে দেখতাম মণি টুসিকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। রোজই এক প্রস্থ মনখারাপ আর দুর্বলতা কোথা থেকে যেন চলে আসত। কাজটা আদৌ ঠিক হচ্ছে কিনা এই ভেবে মনটা বড়ো খচখচ করত।

একদিকে মণিদীপা। চাকরির প্রথম পোস্টিং-এ ভালো লেগে যাওয়া রাজগ্রামের সামান্য দর্জির মেয়ে আমার বিয়ে করা বউ। রাস্তা পারাপারের সময় টুসির হাত ধরলেও মনে হয় যেন মণিকে ছুঁয়ে আছি। আর একদিকে সুরভি, আমার বেঁচে থাকার নতুন ঠিকানা। যাকে ছেড়ে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে এখন খুব কঠিন।

এদিকে ওষুধে কাজ হল না। ওদিকে আমিও বেশি নিষ্ঠুর হতে পারছি না। টুসির দিকে তাকালে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছি। সেই দুর্বলতা আঁচ করে একদিন সুরভি বলে দিল, ওদেরকে যখন ছাড়তে পারছ না, আমাকেই ছেড়ে দাও, বুঝলে? বাড়ি থেকে চাপ দিচ্ছে, বিয়ের জন্য। কতদিন আর ঝুলিয়ে রাখব, বলো? ডিভোর্সি পাত্রর ব্যাপারটা বাড়িতে বুঝিয়ে বলার দায়িত্ব তাও আমি নিয়েছি। না হলে আমি বেরিয়ে আসব, তোমাকে তাও বলেছি। আর কত করব বলো?

ঝরনার জলের মতো হাসির শব্দ নিয়ে সুরো আমার জীবন ছেড়ে অন্য কারও জীবনে চলে যাবে! ভাবতেই মাথা খারাপ হয়ে গেল। অফিস থেকে ফিরেই রাজার উপর চড়াও হলাম। নিরুদ্বিগ্ন রাজা সিগারেটে টান দিতে লাগল। ওর বাড়ির ছাদে বসে।

যেমন চলছে তাই চালা না…

তুই কী ভাবছিস সুরোর মতো একটা এলিজিবল, অফিসের হার্টথ্রব মেয়ে সারাজীবন আমার রক্ষিতা হয়ে রয়ে যাবে?

তাহলে ডিভোর্সের চিঠি দে তোর বউকে। অন্ধকার আকাশে ধোঁয়া ছেড়ে বলল রাজা।

আরে ক্যালাস! তাহলে এসব কেন করছি? আমি বললেও ডিভোর্সে তো রাজি হবে না। কনটেস্ট করবে। দশ বছর ধরে মামলা চলবে। সুরো বুড়ি হবার জন্য অপেক্ষা করবে না!

আমার চাপে রাজা রাজি হল। ও আমার শৈশব-কৈশোর-বযঃসন্ধিক্ষণের সব গোপন কথার বন্ধু। রবিবার আরও বড়ো এক গুনিনের কাছে নিয়ে যাবে বলে কথা দিল। আমি খড়-কুটোর মতো এক গুনিনকে ছেড়ে অন্য গুনিনকে আঁকড়ে ধরলাম।

বাইকে যেতে যেতে রাজা সেই বড়ো গুনিন বাবাজির মাহাত্ম্য শোনাচ্ছিল আমাকে। দুপাশে ধানের খেতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ায উড়ে যাচ্ছিল সেসব কথা।

থাম রাজা, বাইক থামা…

আমার কথা শুনে রাজা স্পিড স্লো করে, থামায় না। জিজ্ঞেস করে, কেন? মাইনাস…

না, চল। ফিরে চল। আর যাব না গুনিনের কাছে।

রাজা একটা কালভার্টের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে, কী ভাবলি আবার?

উকিল চটজলদি সমাধানের যেসব সম্ভাবনার কথা বলেছিল, সব বলি রাজাকে, এক এক করে। শেষে বলি আমার মাথায় ঝট করে খেলে যাওয়া আইডিয়াটার কথা। কোথায় লাগে গুনিন বাবাজি!

বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হল। অবশ্য খরচ করতে তো আমি প্রথম থেকেই রাজি ছিলাম। আমি তো ওদের দুজনকে এমনি ছেড়ে দিতে চাইনি। খোরপোশ, অর্থাত্ মা-মেয়ে ভরণ-পোষণ, টুসির পড়াশোনার খরচ আমি তো দিতে রাজিই ছিলাম। তাই পিওনের পিছনে সামান্য খরচ গায়ে লাগল না।

কোর্টের পরপর তিনটে চিঠিই গেল মণির ভোটার কার্ডে থাকা বাপের বাড়ির ঠিকানায়। ওর হাফ-ঝাড়খন্ডি দর্জি বাবা রিসিভ করে নিল। বদলে পেল সাদা কাগজ ভর্তি বাদামি খাম। হয়তো ভাবল কেউ ইয়ার্কি করেছে…

কিন্তু আমার আর ইযার্কি করার মতো সময় ছিল না। চিঠি পেয়ে বিবাদী হাজির না হওয়ায় যে-কোনও একটা সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি। আদালতের নির্দেশ, দিয়ে দিলাম। অজস্র খবরের পেটের ভিতর, খুদে হরফে, কোথায় সবার অলক্ষ্যে পড়ে রইল, বিবাদী শ্রীমতী মণিদীপা মন্ডল, আপনি এই বিজ্ঞপ্তি জারির তিরিশ দিনের মধ্যে… নতুবা আদালত একতরফা…

তিন মাস পর বেশ নির্বিঘ্নেই হয়ে গেল রায়। এত তাড়াতাড়ি হবে, ভাবিইনি। আজ আমি মুক্ত। এই কয়েক মাসের মধ্যে কিস্তিতে একটা রেডি ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছি আমরা। আমাদের ঘর তৈরি। সাজানো ঘরে আমরা আজই উঠে যাব। সাত বছরের সন্তান থাকা ডিভোর্সি ছেলের সাথে বিয়েতে মত দেয়নি বাবা-মা। তাই আজই বেরিয়ে আসবে সুরভি। তারপর শুভ দিনক্ষণ দেখে রেজিস্ট্রি।

এবারের ফ্ল্যাটটা বেশ নির্জন। যে-গেস্টহাউসটায় আমরা এতদিন যেতাম, তার দরজার কাছের ব্যালকনিতে বসে পুট পুট করে মোবাইল ঘাঁটত বয়গুলো। খাটটা ছিল সেকেলে, ক্যাঁচকেঁচে, আওয়াজ হতো খুব, বিশেষ করে চরম মুহূর্তে। সুরো তো সেসময় মোটেই দামাল হতে দিত না। আর পুরুষমাত্রে সবাই জানে ওই সময়ে সুখটুকুই সব। ধীর লয়ে মানে পুরো আনন্দই মাটি। আজ থেকে আর ওর বাধা মানব না…

আমি কোর্ট থেকে নতুন ঘরে চলে এসেছি। সুরো অফিস করে কিছু রান্নার জিনিস কিনে নিয়ে ঢুকবে। নির্জন ফ্ল্যাটের ঘরে আজ সুরোর শরীরের প্রতিটি তারে নতুন তান বাজাব আমি। গ্যারান্টি ও আজ পাগল হয়ে যাবে। আজ আর উদ্দামতায় কোনও বাধা নয়।

কলিং বেল এর শব্দ যেন একরাশ আনন্দ নিয়ে বেজে উঠল আমার শরীরের প্রতিটা কণায়। কোশে কোশে। খুব উত্তেজিত বোধ করলাম আমি। দরজা খুলে দিতেই সুরো ঢুকে এল ঘরের ভিতর। চুমুতে চুমুতে আমি বন্যা বইয়ে দিলাম। সোফার উপর আমার কোলেই শুযে পড়ল ও।

গাড়িটা কবে দেবে খোঁজ নিলে?

নতুন মডেল তো, বম্বে থেকে আনাবে। পাঁচ দিনের মধ্যে ডেলিভারি। ইনস্টলমেন্ট এর ডিউরেশনটা বাড়িযে নিয়েছি।

ক’দিন মেট্রোয় অফিস যেতে হবে। কারণ গাড়িটা আমারই টাকায় কেনা যদিও, তবু মণির নামে ছিল বলে সুরো ও গাড়ি রাখতে রাজি হল না। আট বছরের পুরোনো হয়ে গেছে, শরীরের কয়েক জায়গায় সুরোর ড্রাইভিং শেখার চিহ্ন। সারাতেও প্রতিমাসে ভালোই খরচ হচ্ছিল। দোনামোনা করে গাড়িটা ছেড়েই দিলাম, মণিই চাপুক।

কোর্ট থেকে আজ বেশ দূরে গাড়ি রেখেছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে রেল স্টেশনে নিয়ে গিয়ে ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়েছি। অফিস টুর থাকলে যেমন করি। সেরকম কিছু বুঝে বাপ্পা চলে গেল। আমি একটা এসি ট্যাক্সি নিয়ে সোজা নতুন ঘরে।

কোলে শোওয়া সুরভিকে দেখে আমার আর তর সইছিল না। নিজের ঘরে ওকে জড়িয়ে ধরে পিষে দেবার ইচ্ছা, সারারাত নগ্ন হয়ে জড়িযে থাকার রোমাঞ্চ শরীরকে অস্থির করে দিতে লাগল।

আই এম অলরেডি ইন দ্য মুড অব মিসচিফ। ওর ক্লিভেজে নাক ঠেকিয়ে বললাম আমি।

নো-ও-প। নট নাউ… কপট অনাগ্রহে সুরো ঠেলে সরিয়ে দিল আমাকে, ফ্রেশ হই। চা খাই। তারপর যা খুশি কোরো…

আমাকে অপেক্ষায় রেখে বাথরুমে চলে গেল সুরো। জল পড়তে লাগল, যেন অনন্তকাল ধরে। শেষে সুরভি হাত মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এল। তারপর ঢুকে গেল রান্নাঘরে। আমাকে অপেক্ষায় রেখে গ্যাসের উপর চায়ের জল ফুটতে লাগল, যেন অনন্তকাল ধরে।

হঠাত্ আমার রোমাঞ্চ কোথায় যেন উড়ে গেল। একটা প্রশ্ন একরাশ ভয় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার মনের ভিতরে। আমি ঠেকাতে পারলাম না। কিছুতেই না।

এই বাপ্পার পৌঁছাবার সময় হল ঘরে। গ্যারেজের গেট খুলে ওর গাড়ি ঢোকাবার শব্দ হচ্ছে নিশ্চয়। আর সিরিয়ালের শাস-বহুর ঝগড়া ভেদ করে মণি আজও শুনে ফেলেছে সে আওয়াজ, নিশ্চিত। আজও কি মণি চায়ের জল বসাচ্ছে গাড়ির শব্দ শুনেই…? আমাকে না দেখেই কি চায়ের কাপ হাতে ঢুকে আসছে আমার বেডরুমে…??

জানি না।

আমি কিচ্ছু জানি না, সত্যি জানি না…৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...