রান্নাঘরের Comfort

রান্নাঘরে গৃহিণীদের দিনের একটা বড়ো অংশের সময় অতিবাহিত হয়৷ তাই কিচেনের প্ৰথম শর্তই হল এটি খুবই ওয়ার্ক ফ্রেন্ডলি এবং কমফর্টেবল হওয়া উচিত৷ কোন কোন দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত সেটা আজ আলোচনা করা যাক৷ প্রথমেই বলব আলো এবং হাওয়া রান্নাঘরে খুব জরুরি৷ হাওয়া এলে রান্নাঘরের ভেজা ভাবটা দূর হবে৷ তাই জানলা খুলে রাখুন সব সময়৷

রান্নাঘর ঠাণ্ডা রাখতে হলে সেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা খুবই প্রয়োজন। এর জন্য রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখা ছাড়াও এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন। এছাড়াও, আপনি আপনার রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক ফায়ারপ্লেস ব্যবহার করতে পারেন। এই সবের সাহায্যে, রান্নাঘরের তাপ বের করা সহজ হবে এবং ঘর সতেজ থাকবে।

বাজারের চিমনির সাকশন ক্ষমতা খুব বেশি নয়, তাই এক্ষেত্রে ভরসা রাখুন জানলাতেই৷ রান্নার ধোঁয়া ঘরের মধ্যে ঘুরপাক খেলে যিনি কাজ করবেন, তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে৷

দ্রুত খাবার তৈরি করতে টোস্টার, গ্রিল, বৈদ্যুতিক কুকার ইত্যাদি ব্যবহার করে আপনি কম সময়ে আরও সহজে খাবার রান্না করতে পারেন। এগুলোতে রান্না করার সুবিধা হল টাইমার দিয়েই আপনি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে একটু ফ্যানের হাওয়া খেয়ে আসতে পারেন। তাছাড়া গ্যাসে রান্না করার সাথে সাথে আঁচের গরম হাওয়া এতে পাবেন না। ফলে গরম অনেক কম লাগবে।

ইন্ডাকশন কুকটপ এবং বার্নার ব্যবহারের কারণে রান্নাঘর গরম হয় না। এমতাবস্থায় গ্যাসের আভেন না লাগিয়ে এগুলো ব্যবহার করা উচিত। ইন্ডাকশন অ্যাপ্লায়েন্স থেকে কম তাপ নির্গত হয়, যার কারণে রান্নাঘর গরম হয় না এবং আপনি সহজেই রান্না করতে সক্ষম হন। তাছাড়া Induction Cooking-এ রান্না করাও অনেক সহজ ও দ্রুত পদ্ধতি৷

রান্নাঘরে সাবধানতা

  • মাইক্রোওয়েভ আভেনকে অনেকেই ব্যবহারের পর ঢাকা পরিয়ে রাখেন৷ এটা একটা মারাত্মক প্রবণতা৷ এই আভেন থেকে উত্তাপ বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নীচের দিকে অনেক ছিদ্র থাকে৷ এই সব ভেন্টিলেশন হোলস বন্ধ থাকলে প্রথমত তাপ বেরতে পারবে না এবং দ্বিতীয়ত এর ফলে এখানেই আরশোলা ডিম পাড়ার আদর্শ জায়গা হিসেবে বেছে নেয়৷ রাতে শোওয়ার আগে একটা ছোট্ট বাটিতে অল্প ভিনিগার নিয়ে দু’মিনিট গরম করে আভেনের ভিতর রেখে দিন৷ পরের দিন সকালে সেই পাত্রটা বের করে আনুন৷ ভিনিগারের বাষ্প এই ছিদ্রগুলোকে পরিস্কার করে দেবে রাতারাতি৷ ফ্রিজকেও পোশাক পরানোর প্রবণতা পরিত্যাগ করুন৷
  • স্টোরেজ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অনেকে গ্যাস সিলিন্ডারের কাছেও জিনিস স্টোর করেন৷ এটা করবেন না৷ এই জায়গায় আরশোলা আর পোকামাকড় আস্তানা গাড়ে৷ সপ্তাহে অন্তত একদিন এই জায়গায় ইনসেক্ট কিলার স্প্রে করবেন৷
  • অন্যতম সাবধানতা নিতে হবে কিচেন কাউন্টার বানানোর সময়৷ লক্ষ্য রাখতে হবে স্ল্যাবের ধারটা যেন মোল্ডেড হয়৷ শার্প থাকলে রান্না করবেন যিনি তাঁর আহত হওয়ার সম্ভাবনা৷ বিশেষ করে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের৷
  • রান্নাঘরের রং এমন হওয়া উচিত, যেটা আলোকে প্রতিফলিত করে৷ এতে ঘরের ঔজ্জ্বলতা বাড়ে৷ ক্রিম কিংবা হালকা হলুদ, রং হিসেবে সেরা৷

কিচেন-এ আনুন স্টাইলিশ লুক

সারা বাড়িতে রান্নাঘর কিংবা কিচেনের গুরুত্ব সবথেকে বেশি কারণ বাড়ির সদস্যদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা শুরু হয় এই কিচেন থেকেই। সুতরাং এই বিশেষ জায়গাটি পরিস্কার এবং গুছিয়ে রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করা কর্তব্য বাড়ির সমস্ত সদস্যদেরই।

বর্তমানে কিচেনকে মডার্ন এবং পরিস্কার রাখার নানা বিকল্প রয়েছে। এই বিকল্পগুলি কিচেনকে মডার্ন এবং পরিষ্কার রাখার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন অনুসারে কিচেনকে নতুন রূপও প্রদান করে।

মডিউলার কিচেন নামে বহুল প্রচলিত এই বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে উড্ ওয়ার্ক, টাইলস ওয়ার্ক, স্টিল আয়রন ওয়ার্ক ইত্যাদি। পরিষ্কার, স্টাইলিশ কিচেনে কাজ করার মনস্তাত্বিক প্রভাবও পড়ে ব্যক্তির উপরে। এই রকম পরিবেশে আনন্দে কাজ করা যায়, ফলে মন-ও ভালো থাকে এবং কাজের কোয়ালিটিও অনেক বেটার হয়।

অর্গানাইজড এবং স্পিক অ্যান্ড স্প্যান

কিচেনকে ঝকঝকে এবং অর্গানাইজড করার জন্য কিছু টিপ্স জেনে নিন।

  • কিচেন ক্যাবিনেটের নীচে যদি জায়গা খালি থাকে তাহলে ওই জায়গায় বক্সেস লাগিয়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনাকে আলাদা করে ডাস্টবিন রাখতে হবে না রান্নাঘরে।
  • আকর্ষণীয় রঙিন কাচের জার, কিউব, কোস্টার্স, টুথপিক হোল্ডার, আর্টিফিশিয়াল ফ্রুট্‌স, ভেজিটেবলস, নানা রঙের বাস্কেটস এবং ন্যাপকিন ইত্যাদি দিয়ে কিচেন সাজান।
  • কিচেনের সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য কন্ট্রাস্ট রঙের টাইলস, বর্ডার এবং নানা ডিজাইন আঁকা টাইলস লাগাতে পারেন।
  • ফ্লোর-এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে ভিনায়েল ফ্লোরিং, সিরামিক টাইলস, ল্যামিনেটেড টাইলস্ নিজের প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন।
  • কিচেনে রাখুন মডার্ন কিচেন অ্যাপ্লায়েনসেস যার সাহায্যে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার থেকে বাঁচবে এবং আপনার রান্নাঘরটিও মডার্ন গ্যাজেটস-এ সজ্জিত থাকবে।
  • কিচেনের কাউন্টার পরিষ্কার রাখুন। যে-গ্যাজেটস রোজ দরকার লাগে যেমন ইলেকট্রিক কেটল, কফি মেকার, মিক্সার গ্রাইন্ডার, চপার ইত্যাদি কাউন্টারে গুছিয়ে রাখুন। বাকি গ্যাজেট্‌স, যেমন টোস্টার, এয়ারফ্রায়ার ইত্যাদির জন্য ক্যাবিনেটে জায়গা রাখুন। এর ফলে কাজ করার যেমন সুবিধা হবে তেমনি কিচেন দেখতেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লাগবে।
  • কাঠ অথবা কাচের ওয়াল ইউনিট বানান যেখানে ক্রকারি এবং অন্যান্য কাচের বাসন সাজিয়ে রাখতে পারবেন। এর ফলে রান্নাঘর আকর্ষণীয় লাগবে এবং ওয়েল ম্যানেজডও মনে হবে
  • আজকাল কমপ্যাক্ট ফ্ল্যাটে কিচেন স্পেস খুব কম থাকে, সুতরাং কিচেনের হাইজিন বজায় রাখাটা খুব জরুরি। এই ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক কিচেন চিমনি খুব প্রয়োজনীয়। এটি রান্নাঘরকে পরিষ্কার রাখার সঙ্গে সঙ্গে স্টাইলিশ লুক-ও দেয়।

কিচেনে খাবার বানাবার সময় কিচেন নোংরা হবেই সুতরাং দেয়াল এবং রান্নাঘরের ফ্লোর পরিষ্কার রাখতে টাইলস্ ব্যবহার করুন। টাইলস্ পরিষ্কার করা সহজ এবং একই সঙ্গে কিচেনকে মডার্ন লুক দিতে সাহায্য করে।

Modular Kitchen

কিচেন ডিজাইনিং টিপ্স

কিচেন আপনার পছন্দ-অপছন্দ, আপনার জীবনযাপনের আয়না, সুতরাং এর ইন্টিরিয়র করার সময় বিশেষ খেয়াল রাখুন৷

  • মডিউলার কিচেনে আলমারি, তাক এবং শেল্ফ সাধারণত মিডিয়াম ডেনসিটির ফাইবার বা কাঠের তৈরি হয়। এই ধরনের কিচেনে খুব সুন্দর ভাবে জায়গার ব্যবহার করা হয়। আপনি নিজের প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী এগুলি অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। এর মধ্যে বিল্ট ইন সিংক, আভেন, চিমনি গ্রিল এবং মাইক্রো আভেনের সুবিধা পাওয়া যায়। কিচেনের যে-কোনও ডিজাইন বানাতে পারেন কিন্তু খেয়াল রাখবেন গ্যাসস্টোভ, ফ্রিজ এবং সিংক যেন ট্রায়াংগুলার ওয়ার্ক এরিয়ায় থাকে।
  • কিচেন কাউন্টারের টপ্, গ্র্যানাইটের বানান। গ্র্যানাইট পাথর পরিষ্কার করার সুবিধে। কিচেনের ডেকরেশনের সঙ্গে ম্যাচ করে গ্র্যানাইটের রং বেছে নিতে পারেন। বাজারেও অনেক রকমের রেডিমেড কাউন্টার কিনতে পাওয়া যায় যেগুলি আপনার কিচেনের ডিজাইন বা রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে যাবে।
  • কিচেন ডিজাইন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। ন্যাচারাল এবং ইনডাইরেক্ট –এই দুরকমই আলোর ব্যবস্থা থাকা উচিত রান্নাঘরে। ইনডাইরেক্ট লাইটিং-এর ক্ষেত্রে হ্যালোজেন বা ফ্লুরোসেন্ট লাইটিং করাতে পারেন। আরও যদি অন্যরকম লুক দিতে চান তাহলে পেনডেন্ট লাইটিং-ও করাতে পারেন। অনেক রকম ডিজাইনে পাওয়া যায় এই লাইট। সিলিং থেকে একটি মেটাল রডে আটকানো এই লাইটিং যেমন সুন্দর লাগে দেখতে তেমনি কার্যকরীও বটে।
  • মডিউলার কিচেনকে মডার্ন টাচ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেকরেটিভও বানান। এতে রান্নাঘরের আকর্ষণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। নানা রঙের প্লেট এবং ক্রকারি রাখুন। এছাড়াও বিড্‌স বা সেন্টেড ক্যান্ডলস রাখুন। কিচেনের দেয়ালকে স্টাইলিশ লুক দেওয়ার জন্য কিচেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে পেইন্টিং টাঙাতে পারেন। এর ফলে কিচেনের পরিবেশে একটা ফ্রেশ অনুভূতি আসবে।

Kitchen Decoration

ক্লিনিং টিপস

কিচেন পরিষ্কার রাখার জন্য ঘরোয়া কয়েকটি টিপস এখানে দেওয়া হল

  • বাসন পরিষ্কার করার ডিশ বার, কিচেন পরিষ্কার করতেও কাজে লাগে। কুকিং টপ, কিচেন কাউন্টার এবং সিংক পরিষ্কার করতে ডিশ বার ব্যবহার করা যায়। অল্প গরমজলে সামান্য ডিশ বার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। তারপর স্্ক্রাবার কিংবা সুতির কাপড় ওই মিশ্রণে ডুবিয়ে হালকা ভাবে কুকিং টপ, কিচেন টপ মুছে নিন এবং পরে শুকনো সুতির কাপড় দিয়ে দ্বিতীয়বার মুছুন। সিংক-ও একই পদ্ধতিতে স্্ক্রাবার দিয়ে পরিস্কার করুন। এই একই মিশ্রণ দিয়ে কিচেন ফ্লোর-ও পরিষ্কার করা যাবে।
  • কিচেন ফ্লোর ঝকঝকে করতে ব্লিচও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু টাইলস লাগানো থাকলে ব্লিচ ব্যবহার করবেন না। টাইল্স-এ দাগ লাগলে সামান্য গরমজলে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে দাগের উপর ঢেলে দিয়ে খানিকক্ষণ রেখে দিন। তারপর স্্ক্রাবার দিয়ে সামান্য ঘষে দিলেই দাগ মুছে যাবে।
  • খেয়াল রাখুন যেখানে বাড়ির মহিলাদের বেশিরভাগ সময় কাটে সেই জায়গাটা যেন আরামপ্রদ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়।
পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব