গ্লুকোমা হল চোখের এমন একটি অবস্থা, যার চিকিৎসা করা না হলে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। এটি এমন একটি রোগ, যা অপটিক স্নায়ুকে, যে চোখ থেকে মস্তিষ্কে দর্শন তথ্য প্রেরণ করে, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গ্লুকোমা সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে চোখের পেরিফেরাল দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেয়। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা না হলে,শেষ পর্যন্ত এটি অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়।
সারা বিশ্বে, ছানি`র পরে অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ গ্লুকোমা। গ্লুকোমা সারা বিশ্বের ৪.৫ মিলিয়ন লোকের অন্ধত্বের কারণ বলে অনুমান করা হয়েছে। যেখানে ভারতে ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ১২ মিলিয়ন লোকের মধ্যে এই রোগের কারণে ১.২ মিলিয়ন লোক অন্ধ। তা সত্ত্বেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্লুকোমা সনাক্তকরণ করা হয় না। ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে গ্লুকোমার চিকিৎসা করা হয় না। এটা দেশের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্ধত্বের ক্ষেত্রে গ্লুকোমা একটি অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ায়, এর প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এবারের এই বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহে, একটি অ্যাবভি কোম্পানি, অ্যালারগান, চক্ষুচিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিল, যেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধে গ্লুকোমা`র প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা ঝুঁকি এবং প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি, চিকিৎসার সর্বশেষ বিকাশের ওপরেও আলোকপাত করেন।
গ্লুকোমার প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, প্রতি বছর মার্চ মাসে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ পালিত হয়ে থাকে। গ্লুকোমার বৃদ্ধির কারণে, চোখের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।
ভারতের বর্তমান গ্লুকোমা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে, সুপার-স্পেশালিটি আই কেয়ার সেন্টার, নেত্রালয়ম-এর ডিরেক্টর ডা. মনীশ সিং জানিয়েছেন, ‘ভারতে গ্লুকোমার প্রকোপের মাত্রা গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে ভিন্ন। এটি বিভিন্ন কারণের জন্য দায়ী করা যেতে পারে। যেমন জীবনযাত্রার পরিবর্তন, আয়ু বৃদ্ধি এবং চোখের চিকিৎসা পরিষেবা`র ক্ষেত্রে সীমিত অ্যাকসেস। বর্ধিত জনসংখ্যা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ডায়াবেটিসের মত ক্রনিক রোগের বৃদ্ধির মত বিভিন্ন কারণের জন্য আগামী বছরগুলিতে ভারতে গ্লুকোমার চাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সমস্ত ফ্যাক্টরগুলি গ্লুকোমার ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ। অতএব, গ্লুকোমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, চোখের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে সুযোগসুবিধাকে উন্নত করা এবং বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কার্যকর স্ক্রিনিং প্রোগ্রামগুলিকে বাড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।