( এক )
অনেকটা সময় নিয়ে বসে থাকলাম। দেখি কাউকে দেখা যায় নাকি। দেখি কোনও শব্দ কানে আসে কিনা। কিন্তু না কোনও শব্দ কানে এল না। দেখাও গেল না কাউকে। বন্ধ কারখানার গেট, কেই-বা আর অপেক্ষায় থাকবে। না কোনও আশা আছে, না সামান্য আলো। এক অন্ধকার ঘিরে রেখেছে জীবনকে।
এখানেই একদিন সব ছেড়েছুঁড়ে বসে থেকেছি। সব দেনা-পাওনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, বসে থেকেছি। সামান্য জল আলোর জন্য। হ্যাঁ, সে একদিন ছিল। কারখানার ওভার টাইম ছিল বেশ ভালো। সে সময় একজন সামান্য লেবারের বেতন, একজন ফাস্ট স্টাফের থেকেও বেড়ে যেত। রোয়াবই আলাদা ছিল সে দিনের। হাত থেকে পয়সা উড়েও যেত তত তাড়াতাড়ি। ইনকামের হাত যখন একটা, খরচের হাত দশটা হয়ে যায়।
অনিল মাঝি এইসব ভাবতে ভাবতে পেরিয়ে যাচ্ছে স্কব গেট, পেরিয়ে যাচ্ছে এলডব্লিউ অফিস, পেরিয়ে যাচ্ছে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার মেইন গেট। আর একটু গেলেই নয়া রাস্তা। সেখান দিয়ে ঢুকে গেলেই বস্তি। কোনও কালে কোম্পানি কোয়াটার ছিল। এখন না জল আছে, না কারেন্ট। অন্ধকারে সব কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে। আজ মন খুব বিষণ্ণ বা বলা ভালো মনে এক ভয় কাজ করছে।
ছেলেটা স্কুলে যেত কিন্তু কখন যে স্কুল ছেড়ে দিয়েছে সে জানতেই পারেনি। সে শুধু দেখেছে তার মেয়েটা একদিন নিজের রাস্তা নিজে দেখে নিল। তারপর হারিয়ে যেতে লাগল সেই অন্ধকারে। তাকে আর বোঝানো গেল না। ভালোমন্দের মধ্যে তফাৎটা দেখানো গেল না। একদিন ইস্কো কোম্পানি তাদের জল লাইট কেটে দিল। নিজের কোম্পানি বার্ন স্ট্যান্ডার্ড তো কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইস্কো থেকে যেটুকু সাহায্য আর কী। তাও ইস্কো এতদিন জল আর কারেন্ট সাপ্লাই দিচ্ছিল। চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছিল কোনও ভাবে। কিন্তু এখন?
বউ এসে বলেছিল— আর কী হবে, চলো অন্য কিছু দেখি। কিন্তু অন্য কিছু সেও কি আর এ বয়সে এসে সম্ভব বলে মনে হয়? এমনই কয়েক শত প্রশ্নের কাছে যখন নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছিল সে, হীরাপুর থানার ছোটোবাবু এসে জিজ্ঞাসা করল, অনিল, ছেলেকে কতদিন ঘরে দেখোনি?”