—কেন রে, কী করবি তুই। বলতে বলতেও ছেলেটা হাত সরিয়ে নেয়। হঠাৎ করেই গুটিয়ে যায়।
—যা বললাম মনে থাকে যেন। কালকেই বাড়ি ফাঁকা করে দেবে। কাল আমরা আবার আসব। এই চলে আয় সবাই। সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন সাধনবাবুরা, পিছন থেকে পাতলা গলাটা ভেসে এল ‘আবার আসবেন কিন্তু।”
সেদিন রাতে প্রতিবেশিনী জানলায় দাঁড়িয়ে শুনল...
—ওরা তোমার গায়ে হাত তুলল।
—হ্যাঁ, ঠিক আছে।
—ওরা কাল আবার আসবে।
—হ্যাঁ আসবে।
—চলো, এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।
—কোথায় যাব ছায়া, আমাদের কোথাও যাবার জায়গা নেই!
—কেন নেই, অনেক দূরে কোথাও?
—ওকে ছেড়ে তুমি যেতে পারবে?
কোনও উত্তর নেই।
—ওকে গান না শুনিয়ে থাকতে পারবে?
—কেন বাজে কথা বলছ?
—আমরা এখানেই থাকব ছায়া। এই বাড়িটা ভালো নয়?
—আমার ভয় করছে।
—ভয় নেই, কাছে এসো ছায়া।
—আমার তোমাকে ভয় করছে। সেটাই ওদের শেষ কথা ।
পরেরদিন সাধনবাবুরা গিয়ে দেখলেন, বিছানার ওপর মেয়েটার প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে। ওর গলায় একটা সাদা মোটা দাগ। কোনও শক্ত কিছু গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ওকে মারা হয়েছে। আর ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে, একটা চামড়ার বেল্ট গলায় দিয়ে ঝুলছে ছেলেটা। ওর মুখে তখনও সেই হাসিটা লেগে আছে। যেন পুরোটাই বেশ মজার ব্যপার !
সবাই নির্বাক হয়ে গেল। এমনটা ঘটতে পারে কেউ ভাবেইনি। প্রতিবেশিনী শুধু বলল, “ওরা দু'জন নিজের মতো থাকত। এটা ভালো হল না!' বিছানায় একটা মোবাইল সেট পড়ে ছিল। কী মনে হতে সাধনবাবু তুলে নিয়ে দেখলেন। সাধারণ ফোন। কোনও প্রোজেক্টর ফোন নয়।
পুলিশ এল। বাড়ি তল্লাসি হল। ওষুধ ওষুধ গন্ধটা ওরাও পেয়েছিল। বিছানার নীচে লেপ তোষক রাখার ড্রায়ার, সেটা খুলেই সবাই ছিটকে সরে দাঁড়াল। একটা পচা গলা মানুষের লাশ। তার সারা গায়ে ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে সাদা সাদা হাড়। এখনও তার পাঁজরে আটকে আছে একটা সবুজ জামার ছিন্ন অবশেষ। তার ডান হাতের আঙুলে একটা সোনার আংটি— তাতে লেখা আছে ছায়া।