গাড়ির আওয়াজ শুনে সীমা জানলার বাইরে তাকাতেই নরেনের গাড়িটা গেট দিয়ে ঢুকছে দেখতে পেল। অন্যমনস্ক হয়ে যন্ত্রচালিতের মতো উঠে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। এটাই রোজকার নিয়ম। অফিস থেকে ফিরে হাতের কাছে এক কাপ চা না পেলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করবে নরেন। চা বানিয়ে ড্রয়িংরুম-এ আসতেই নরেনের বদলে অনিলকে দেখে বিস্ময়ে ভুরু কুঁচকে উঠল সীমার।
—হ্যাপি বার্থডে ম্যাডাম, ফুলের তোড়াটা সীমার হাতে ধরিয়ে হাত জোড় করল অনিল।
সীমা নিজেকে সামলে নিয়ে অনিলকে ধন্যবাদ জানাল। ব্যথিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, নরেন কোথায়? সীমার চাউনি কিছু খোঁজার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবার অনিলের মুখের উপর এসে স্থির হল।
—স্যার-ই আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। হঠাৎ ওনাকে অফিসের কাজ নিয়ে শহরের বাইরে যেতে হয়েছে।
—এটা তো আপনার স্যার ফোন করেই আমাকে জানাতে পারতেন। সীমার গলার রুক্ষতা স্পষ্ট ধরা পড়ল।
—আসলে, স্যার এই বিশেষ দিনে আপনাকে মনমরা হয়ে থাকতে দিতে চাননি। এমন একটা এমারজেন্সি এসে গেল যে...।
—আপনাকে আর আপনার স্যারের হয়ে ওকালতি করতে হবে না। আমি আপনার থেকে ওকে বেশি চিনি। অনিলের কথার মাঝখানেই সীমা বলে উঠল।
কিছুক্ষণের জন্য দুজনেই চুপ করে রইল। পরিবেশ হালকা করতে সীমাই প্রথম বলল, আপনি কী করে জানলেন আজ আমার জন্মদিন?
—স্যারই বললেন, সীমা ডিনারে আমার জন্য অপেক্ষা করছে নিশ্চই। তুমি বরং গিয়ে ওকে খাওয়ার টেবিলে সঙ্গ দাও এবং আমি আসতে না পারার কারণটাও বুঝিয়ে বোলো। সেজন্যই আমি এখানে এসেছি, নয়তো আমিও খবরটা আপনাকে ফোনেই দিতে পারতাম।
—আই অ্যাম ভেরি সরি, আপনি প্লিজ বসুন। জন্মদিনে নরেনকে আসতে না দেখে সীমা কিছুক্ষণের জন্য ভদ্রতা দেখাতে ভুলে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সামলে নিতেও বেশি সময় লাগলা না। চায়ে কাপটা অনিলের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেও সোফায় এসে বসল।
—আমি আপনার দুঃখটা বুঝতে পারছি ম্যাডাম। আপনি আমাকে দেখে রেগে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক। আমার বোধহয় এভাবে চলে আসাটা উচিত হয়নি, অন্তত একটা ফোন...