৩ পর্ব
আজ সকালে বেড-রোল গুটিয়ে তেরো নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন টয়লেটের বিপরীত দেয়ালে তালাবন্ধ ঢাউস কাঠের বাক্সটা খুলে বিছানাপত্র ঢুকিয়ে, টয়লেটের দিকে তাকাতেই অর্জুন বুঝতে পারল, তখনও পর্যন্ত টয়লেট একরকম ফাঁকাই রয়েছে বলা চলে। তার মানে ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা বাজলে কি হবে, এখনও পর্যন্ত কোনও ট্রেন স্টেশনে ঢুকতে পারেনি। প্রাতঃকৃত্য-স্নানাদি সেরে, বাইরে বেরোতেই অর্জুনের চোখে পড়ল — বারো নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাঁচি-হাতিয়া এক্সপ্রেস এসে দাঁড়িয়ে আছে। জামা-প্যান্ট-জুতো গলিয়ে, পিঠব্যাগটা কাঁধে নিয়ে, ধীর পায়ে অর্জুন চোদ্দো নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন এস্ক্যালেটরের দিকে পা বাড়াল। তার পুষ্যিগুলোকে ঘুম থেকে উঠিয়ে, রোজকার মতন টিফিন হাতে ধরিয়ে দিয়ে, স্কুলমুখো রওনা করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
সারারাত ধরে দুর্যোগ-ক্লিষ্ট, অনিশ্চিত যাত্রার শেষে, ক্লান্ত আচ্ছন্ন শরীরে মালপত্র টানাটানি করে প্যাসেঞ্জাররা সব ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফর্ম পার করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। তার মধ্যে অর্জুন খেয়াল করল, জিআরপি'র লোকজন ধরাধরি করে কাউকে যেন ওই ট্রেনের সাধারণ কামরা থেকে নামিয়ে প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে, প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে অনেকে চলার পথে সেদিকে অগ্রসর হয়ে, উকিঝুঁকিও মারছে। অর্জুনও কৌতূহল দমন করতে না পেরে সেদিকেই পা বাড়াল।
ভিড় ঠেলে কাছাকাছি পৌঁছোতেই, এবার পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে— একটা মেয়ে পাশ ফিরে অচৈতন্য অবস্থায় শুয়ে রয়েছে। তার জামা-প্যান্ট রক্তে ভেজা; যা দেখে ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ কেউ মন্তব্য করছে, ‘চল চল, পাগলি-টাগলি হবে'। আবার কেউ বলছে, “না না, রেপ কেস! চল, এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানে ঝামেলা বাড়ানো।' অর্জুন কাছে গিয়ে, জিআরপি'র একজন এসআই-কে দেখে জানতে চাইল, 'কী হয়েছে এর?”
—কী যে হয়েছে, সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না। সারারাত সাধারণ কামরার টয়লেটের মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিল। প্যাসেঞ্জাররা নাকি রাত থেকেই ওকে এইরকম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছে ওই টয়লেটের মধ্যে। ঝামেলা এড়াতে কেউ আর কোনও সাড়াশব্দ করেনি। অনেকে বলছে, রেপ-কেস হতে পারে। কিন্তু জ্ঞান না ফিরলে, কিছুই জানা যাচ্ছে না— জিআরপি'র এসআই জয়ন্ত ঘোষ মেয়েটির রক্তে ভেজা জামা-প্যান্টের দিকে ইঙ্গিত করে, অর্জুনের প্রশ্নের উত্তর দিলেন।