কলকাতা থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির কোনও সরাসরি উড়ান নেই।তাই প্রথমে কলকাতা থেকে মুম্বই তারপর মুম্বই থেকে নাইরোবি। মুম্বই থেকে নাইরোবি পৌঁছোতে সময় লাগল প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা। কেনিয়ার সময় তখন রাত আটটা পঁয়তাল্লিশ। ভারতীয় সময় থেকে আড়াই ঘন্টা পিছিয়ে কেনিয়ার ঘড়ির কাঁটা। নাইরোবি বিমানবন্দর মাঝারি আকারের, খুব একটা ভিড় নজরে এল না। লাগেজ উদ্ধার করে ইমিগ্রেশন ইত্যাদির ঝামেলা মিটিয়ে যখন এয়ারপোর্টের বাইরে এলাম তখন রাত সাড়ে ন’টা বেজে গেছে।
ইতিমধ্যে কেনিয়ার সময় অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে নিয়েছি। এর আগে এয়ারপোর্টের অনুমোদিত কাউন্টার থেকে ডলারের বিনিময়ে কিছু কেনিয়ান কারেন্সি শিলিং নিয়ে নিয়েছি।
রাত ১১টা নাগাদ আমরা হোটেলে পৌঁছোলাম। তারপর ঘরে মাল তোলা, রাতের ডিনার খাওয়া। ডিনার অবশ্য খুবই মামুলি পি-রাইস, পরোটা, একটা পাঁচ মিশেলি সবজি, চিকেনের ঝোল আর কাটা ফল। হোটেলের ঘর পাঁচ তলায়, বেশ ভালোই ব্যবস্থা। আমার রুম পার্টনার আমাদের টুর ম্যানেজার অল্প বয়সি ছেলে অভ্র। রাতে বেশ ঠান্ডা, কম্বল গায়ে দিয়ে শুতে হল।
পরের দিন সকালে আমাদের যাত্রা শুরু হবে সকাল ৮ টায়। তার আগে স্নান করে ব্রেকফাস্টের টেবিলে। ব্রেকফাস্টের অবশ্য এলাহি ব্যবস্থা– ফ্রুট জুস, কাটা ফল যেমন পাকা পেঁপে, তরমুজ, আনারস, এছাড়া দুধ কর্নফ্লেক্স, টোস্ট, মাখন, জ্যাম, ডিম, চিকেন সসেজ আর চা-কফি তো আছেই। ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা রওনা হব আম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশে। সেখান থেকেই আমাদের জঙ্গল ভ্রমণ শুরু হবে। আমাদের ২৫ জনের দল ৪টি টয়োটা গাড়িতে ভাগাভাগি করে চলেছি। এই গাড়িগুলি বেশ আরামদায়ক ও শক্তপোক্ত। সবচেয়ে সুবিধাজনক হল যে, এদের ছাদ উপরদিকে উঠে যায় আর দাঁড়িয়ে চমৎকার জঙ্গল সাফারি করা যায়। এই গাড়িগুলিই আমাদের আগামী সাত দিনের বাহন।
সকালে একটু ঠান্ডা রয়েছে, জুন-জুলাই মাস এখানে শীতকাল, একটা হালকা শীতবস্ত্র পরে নিতে হল। তবে বেলা যত বাড়বে তাপমাত্রাও তত বাড়বে। গাড়ি চলতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে। নাইরোবি থেকে ২৪০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত আম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্ক। মাসাইদের ভাষা অনুযায়ী আম্বোসেলি শব্দের অর্থ নোনতা ধুলো। আম্বোসেলি জাতীয় উদ্যানের খ্যাতি প্রধানত হাতিদের জন্য। বিশাল এই হাতিদের দাঁত সবচেয়ে বড়ো বলে খ্যাতি আছে। এই অরণ্যের পশ্চাৎপটে সব সময়েই উপস্থিত মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো। বরফের টুপি পরা এই শৃঙ্গ সমগ্র আফ্রিকার মধ্যে সর্বোচ্চ।