মাঝরাতে প্রচন্ড ঠান্ডা এবং অসহ্য মাথাযন্ত্রণা নিয়ে উঠে পড়লাম। টুকি মেরে দেখি পাশের ঘরের সঙ্গীরা লাইট জ্বেলে দেদার আড্ডা বসিয়েছে। আমরাও ওই বরফ বিছানার মায়া ত্যাগ করে আড্ডায় মজে গেলাম। ঘুমটুমের বালাই নেই তাই বেশ সকালেই রওনা দিলাম কুনজুম পাসের উদ্দেশ্যে। এই পাস হিমাচলের বৃহত্তম জেলা লাহুল ও স্পিতিকে সংযুক্ত করেছে।
লোসার থেকে যত দূরে যাচ্ছি রাজপথে বরফের রেখা ততই গভীরতর হচ্ছে। যে পাহাড়েরা দূরে ছড়িয়ে ছিল তারা যেন হুড়মুড় করে কাছে এসে দাঁড়াল, যে-কোনও সময় পথ অবরোধ করতে পারে। কঠিন বরফের রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। ঘন্টা তিনেকের কষ্টের শেষে ৪,৫৯০ মিটার/ ১৪,৯৩১ ফিট উচ্চতায় কুনজুম পাসে (কুনজুম লা ও বলে) পৌঁছে গেলাম।
নেমেই হাততালি দিয়ে এক চক্কর ঘুরে নিলাম আনন্দে। আমার ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়ে ভালো আরামের জায়গায় বেড়াতে ভালোবাসে। প্রচন্ড ঠান্ডায় এবং সব প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে সে জুবুথুবু। সেও আবাক হয়ে গিয়ে নেমে পড়েছে। তুষারাবৃত বড়া শিগরি, ছোটা শিগরি গ্লেসিয়ার ও চন্দ্রভাগা শৃঙ্গ খুব কাছের থেকে দৃশ্যমান। কুনজুম পাসে রয়েছে কুনজুম মাতার মন্দির ও বড়ো একটা চোর্তেন। চোর্তেন সংলগ্ন অঞ্চলে প্রচুর প্রেয়ার ফ্ল্যাগের ছড়াছড়ি। দলের শ্যামলী বউদি নেমেই বরফ দিয়ে দারুণ সুন্দর এক শিবলিঙ্গ তৈরি করলেন। নারকেল ফাটিয়ে কুনজুম মাতাকে পুজো দিলাম আমরা। নির্বিঘ্নে এত দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।
এর পর গাড়ির দরজা খুলে স্টিরিও-তে ভাঙড়া গান বাজিয়ে আমরা সবাই কুনজুম পাসে ভাঙড়া নাচ শুরু করলাম। অসাধারণ অনুভূতি প্রকৃতির কাছে নতজানু প্রতিবার। আমরা একটু ইতস্তত ঘোরাঘুরি করছি কানে গান এলেই হাত পা ছুড়ছি। এর মধ্যে চার বাইক আরোহী এসে উপস্থিত হল। হেলমেট খুলে দু'জন এসে বললেন— আপ লোগ বাঙালি হ্যায় ক্যায়া? ক্যারি অন।
আমাদের সমস্বরে উত্তর ইয়েস, ফ্রম কলকাতা৷
—আরে দুর মশাই আমরা ভদ্রেশ্বর থেকে আসছি।