ছোটো থেকেই বাচ্চাকে ভালো ব্যবহার এবং অভ্যাস শেখানো উচিত অভিভাবকদের। শৈশবে শিশু যা শেখে, বড়ো হয়ে তার ব্যবহারে সেগুলোই দৈনন্দিন প্রতিফলিত হয়। কী শেখাবেন, কেন শেখাবেন আসুন জেনে নেওয়া যাক।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস

 ছোটোবেলায় বাচ্চাকে যা শেখানো হবে, বড়ো হয়ে সেটাই তার অভ্যাসে পরিণত হবে। তাই শিশুর শৈশবের দিনগুলো থেকেই তার মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা খুব জরুরি। নীচের অভ্যাসগুলির সঙ্গে বাচ্চাদের পরিচয় করিয়ে পরিচ্ছন্নতার প্রতি তাদের সজাগ করে তুলতে পারেন।

১) হাতমুখ ধোওয়া দিয়ে বাচ্চাদের দিন শুরু করতে শেখান।

২) ২ থেকে ৩ মিনিট ঠিক ভাবে নিজের দাঁত ব্রাশ করতে বলুন যাতে শিশুর দাঁত ক্যাভিটিমুক্ত থাকে। দিনে অন্তত ২ বার ব্রাশ করার অভ্যাস করান।

৩) বাচ্চাকে নখ ছোটো রাখতে বলুন কারণ বড়ো নখে নোংরা জমে। এই নোংরা থেকেই সংক্রমণের ভয় থাকে।

৪) সর্দি-কাশি হলে বা হাঁচি পেলে রুমাল বা টিস্যু পেপার মুখ এবং নাকের উপর যাতে ধরে, সেই অভ্যাস বাচ্চার মধ্যে গড়ে তুলুন।

৫) কাচা এবং ইস্তিরি করা পোশাক পরার অভ্যাস করান।

৬) নোংরা বা বর্জ্য পদার্থ ডাস্টবিনে ফেলার অভ্যাস করান।

৭) অভিভাবকদের বাচ্চাকে বোঝানো উচিত, নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘর, ঘরের আশপাশ এবং যে-লোকালিটিতে থাকে সেটা পরিষ্কার রাখাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

৮) বাচ্চাকে নিজের জিনিস যেমন খেলনা, বই ইত্যাদি সঠিক জায়গায় রাখার শিক্ষা দিতে হবে।

৯) পেনসিল, পেন, রাবার, আঙুল ইত্যাদি যেন নাক বা মুখের ভিতর না ঢোকায় সেটাও বাচ্চাকে শেখাতে হবে।

১০) বাচ্চাকে শেখান রাস্তায় বেরিয়ে কোথাও যেন নোংরা না ফেলে। বাইরে যাওয়ার সময় একটা পেপার ব্যাগ নিয়ে যেতে বলুন যাতে রাস্তায় নোংরা ফেলতে না হয়।

শুরু করুন বাড়ি থেকে

 বাড়ি থেকেই বাচ্চাদের অভ্যাস তৈরি করাটা খুব দরকার। অনেক বাচ্চাই খাওয়ার সময় মুখে আওয়াজ করে খায়। কেউ কেউ ন্যাপকিন এবং নাইফ-এর ব্যবহার ঠিকমতো জানে না। সামাজিক কোনও অনুষ্ঠানে অথবা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে, বাচ্চাকে টেবিল ম্যানার্স শেখানো খুবই দরকার। কীভাবে বসবে, খাবে ইত্যাদি শিষ্টাচার বাড়ি থেকেই শেখানো শুরু করতে হবে।

বাড়ির বাইরে গিয়ে যাতে সকলের সঙ্গে খেতে বসে বাচ্চার অসুবিধা না হয়, তার জন্য আগে থেকেই টেবিল ম্যানার্স বাড়িতেই প্রাক্টিস করানো দরকার। যদি বাচ্চা কারও বাড়ি গিয়ে অথবা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে কোনওরকম ভুল করে ফেলে, সেই মুহূর্তে ওখানে বকাবকি না করে, বাড়ি ফিরে এসে ভালো করে ধীরেসুস্থে বুঝিয়ে বলুন।

ছোটো থেকেই যদি বাচ্চার টেবিল ম্যানার্স-এর অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে বড়ো হয়ে যে-কোনওরকম সোশ্যাল গ্যাদারিং-এ তার আত্মবিশ্বাস অটুট থাকবে।

১) টেবিল ম্যানার্স-এ প্রথমেই শেখান খেতে বসে অল্প করে খাবার তুলে মুখে দিতে এবং ভালো করে খাবার চিবোতে। মুখ বন্ধ করে খাবার চিবোতে বলুন যাতে আওয়াজ না হয়। জল খেতে গিয়েও যেন আওয়াজ না হয়। এই অভ্যাসও করান, সে যতটুকু খেতে পারবে ততটুকুই প্লেটে যেন নেয়, যাতে অযথা খাবার নষ্ট না হয়। প্রয়োজন হলে পরে আবার নিতে বলুন।

২) কোন বাসনে খাবে সেটাও বাচ্চাকে ছোটো থেকেই শেখাবার প্রয়াস করুন। যেমন স্যুপের জন্য বড়ো চামচ এবং ডেসার্টের জন্য ছোটো চামচের ব্যবহার, গ্রেভি-যুক্ত খাবারের জন্য বাটির ব্যবহার ইত্যাদি। বাচ্চাকে এও শেখান কারও তৈরি খাবার ভালো লাগলে, যে খাবারটি তৈরি করেছে তার প্রশংসা করতে। খাবার ভালো না লাগলে খারাপ করে না বলে বিনম্রভাবে তাকে জানানো যে ওর ওই খাবারটি ভালো লাগেনি।

৩) নিজের বাড়িতে অথবা কারও বাড়িতে খেতে গেলে, খাওয়ার শেষে নিজের এঁটো প্লেট তুলে নিয়ে সিংক-এ রাখতে শেখান।

৪) রেস্তোরাঁয় গিয়ে ন্যাপকিনের ব্যবহার শেখান যাতে হাত এবং মুখ মুছতে অসুবিধা না হয়। টেবিলে বসে এমন ভাবে হাত রাখা উচিত যাতে পাশে বসা ব্যক্তির অসুবিধা না হয়।

৫) খেতে বসে কথা যেন না বলে, সেটার শিক্ষাও ছোটো থেকেই দেওয়া উচিত। খাবারের সময় বিভিন্ন কাটলারির ব্যবহার বাচ্চা কী করে করবে, সেটাও বাড়িতেই শেখান যেমন নাইফ ডানহাতে এবং ফোর্ক বাঁহাতে ধরতে হয়, এঁটো হাত দিয়ে গেলাস না ধরে, খাওয়ার পর গেলাসের জল দিয়ে হাত না ধোয় ইত্যাদি। এছাড়াও খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে, যতক্ষণ না সবাই খেয়ে উঠছে ততক্ষণ সকলের সঙ্গে বসে থাকাটা ম্যানার্স, এটাও বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

৬) ডাইনিং টেবিলে রাখা কোনও ডিশ খাওয়ার ইচ্ছে হলে পাশের ব্যক্তিকে ডিশটি পাস করতে বলতে শেখান। ডাইনিং টেবিলের উপর যেন উঠে না পড়ে খাবার প্লেটে নেবার জন্য।

বাচ্চা যদি খুব দুষ্টু হয় তাহলে পাবলিক প্লেস-এ নিয়ে গিয়ে অভিভাবকেরা অনেক সময় লজ্জায় পড়ে যান। প্রায়শই দেখা যায় খাওয়ার সময় এক জায়গায় না বসে, বাচ্চা এদিক-ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। টেবিলে রাখা ক্রকারিতে হাত দিচ্ছে, টেবিলে রাখা জল উলটে ফেলছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে। এর ফলে অন্যান্য অতিথিরাও সমস্যায় পড়েন। সুতরাং ছোটো থেকেই বাচ্চাকে ভালো অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে টেবিল ম্যানার্সও শেখাতে থাকুন যাতে বাড়িতে বা বাইরে আপনাকে লজ্জার সম্মুখীন না হতে হয়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...