সানস্ক্রিন সানব্লক ক্রিম, সানট্যান লোশন, সানবার্ন ক্রিম, সানক্রিম ইত্যাদিও বলা হয়। লোশন, স্প্রে অথবা জেল– এই তিন ধরনের হয় সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিনের প্রধান কাজ হচ্ছে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ‘আল্ট্রাভায়োলেট রে’ থেকে এটি ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে। আজকাল দেখা যাচ্ছে যেসব মহিলা সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না, তাদের ত্বকের ক্যানসার হওয়ার ভয় বেশি থাকে। নিয়মিত ভাবে সানস্ক্রিন লাগালে সহজে বলিরেখা পড়ে না এবং ত্বকে বলিরেখা পড়ে থাকলেও তা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। যাদের ত্বক সূর্যের রশ্মির প্রতি বেশি স্পর্শকাতর, তাদের সানস্ক্রিন লাগানো অত্যন্ত জরুরি।
এসপিএফ কী
এসপিএফ হল, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে সানস্ক্রিনের মাধ্যমে ত্বককে যে সুরক্ষা দেওয়া হয় তারই মাপদণ্ড। ত্বকের যারা বিশেষজ্ঞ তারা এসপিএফ ১৫ অথবা এসপিএফ ৩০ লাগানোর পরামর্শ দেন। তাই বলে অতিরিক্ত এসপিএফ যে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেবে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
সানস্ক্রিন না লাগালে কী ক্ষতি হতে পারে
যে-কোনও মরশুমেই সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। বিশেষ করে গরমে লাগানোটা খুবই জরুরি। গরম মানেই ত্বকের যম, কারণ এই সময় ত্বকে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। এই মরশুমে, বেশিরভাগ মহিলা ত্বকে র্যাশ, ফোটো ডার্মাটাইটিস, অধিক ঘাম হওয়া, ফাংগাস এবং ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের সমস্যায় ভোগেন। গরমে খানিকক্ষণ রোদে থাকলেও সানট্যান এবং সানবার্নের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই মরশুমে ত্বকে ট্যানিং-এর সমস্যা খুবই স্বাভাবিক একটা সমস্যা। সুতরাং বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতে হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগিয়ে বেরোনো উচিত।
যারা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চান না তাদের ত্বক, সূর্যের রোদে সরাসরি এক্সপোজ হবার ফলে, খুব তাড়াতাড়ি কুঁচকে যায় ফলে অকালেই বলিরেখার শিকার হয়ে পড়ে ত্বক। আল্ট্রাভায়োলেট রে ত্বকের ক্যানসারের অন্যতম কারণও বটে।
কীভাবে বাছবেন সানস্ক্রিন
ত্বকের জন্য সঠিক সানস্ক্রিন বেছে নেওয়াটা খুব জরুরি। বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে এসপিএফ ১৫-যুক্ত সানস্ক্রিন সবথেকে কার্যকরী। কিন্তু যাদের ত্বকের রং ফরসা, ফ্যামিলি হিসট্রি আছে স্কিন ক্যানসারের অথবা লুপুস-এর মতো অসুস্থতার কারণে সূর্যের রোদে ত্বক অত্যন্ত বেশি স্পর্শকাতর, তাদের এসপিএফ ৩০ অথবা তার থেকে বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। কেউ যদি ভাবে এসপিএফ ৩০-যুক্ত সানস্ক্রিন, এসপিএফ ১৫-র থেকে বেশি ভালো, তাহলে বলতে হবে তার ভাবনা ভুল। এসপিএফ ১৫, ৯৩ শতাংশ আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে ফিলটার করে আর এসপিএফ ৩০ সেই জায়গায় সামান্য বেশি অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ ইউভিবি-কে ফিলটার করে।
স্কিন স্পেশালিস্টদের মতে দরকার না হলে এসপিএফ ৩০-যুক্ত সানস্ক্রিন লাগানো উচিত নয়। অনেকে এসপিএফ ৫০-যুক্ত সানস্ক্রিনও ব্যবহার করেন। কিন্তু বাজারে এমন কোনও সানস্ক্রিন পাওয়া যায় না যেটা ১০০ শতাংশ, ত্বককে ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেবে। সবসময় ভালো ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। যাদের বেশি ঘাম হয় তাদের ওয়াটারপ্রুফ্ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
কীভাবে এবং কতটা লাগানো উচিত
সঠিক সানস্ক্রিন লাগিয়েও মনের মতো ফল পাওয়া যায় না যদি না রোজ সঠিক পদ্ধতি মেনে সানস্ক্রিন লাগানো হয়। লাগানোর কয়েকটি নিয়ম –
১) রোদে বেরোবার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
২) মেক-আপ করার দরকার থাকলে, মেক-আপ করার আগে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
৩) খুব কম পরিমাণে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত নয়।
৪) শুধু মুখেই নয়, শরীরের যে অংশ পোশাকে ঢাকা থাকে না ত্বকের সেই অংশেও সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
৫) দু’ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
৬) এক্সপায়ারি ডেট ওভার হয়ে যাওয়া সানস্ক্রিন লাগানো উচিত নয় কারণ এর কার্যকরিতা নষ্ট হয়ে যায়।
সানস্ক্রিন সম্পর্কে ভুল ও সঠিক তথ্য
ভুল – সানস্ক্রিন লাগালে সানট্যান হয় না।
সঠিক – এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন লাগালে সানবার্ন থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। ভালো সানস্ক্রিন ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে পারে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকতে হলে সানট্যানের সমস্যা হতে পারে।
ভুল – জলে সানবার্ন হয় না।
সঠিক – প্রচণ্ড গরমে জল শরীরকে ঠান্ডা করে। জলে ডুবে থাকা শরীর, সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষিত থাকে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বাস্তবে জল, সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করে। এর ফলে জলে ডুবে থাকা শরীর বেশি এক্সপোজ হয়ে পড়ে সূর্যের রশ্মিতে।
ভুল – গাড়ি অথবা বাসের জানলা দিয়ে সূর্যের ইউভি রশ্মি, ত্বকের কোনও ক্ষতি করতে পারে না।
সঠিক – এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সূর্যের ক্ষতিকারক ‘আল্ট্রাভায়োলেট রে’ জানলার কাচ পেনিট্রেট করে ভিতরে চলে আসে। যদি জানলার ধারে কেউ বসা পছন্দ করেন অথবা কাজের জন্য লম্বা ড্রাইভ করতে হয় কাউকে, তাহলে অন্য সময় সাধারণত যতটা পরিমাণ সানস্ক্রিন লাগাতে হয়, তার থেকে বেশি পরিমাণে লাগানো উচিত।