ঘরে-বাইরে নানারকম কাজে এখন আমরা ভীষণ ব্যস্ত। সংসার আর কর্মক্ষেত্রের চাপে দৈনন্দিন অবসরের সময় কোথায়? দীর্ঘ জীবনলাভের জন্য নিজেকে যে হেলদি এবং ফিট্ থাকতে হবে, একথা ভাবতে প্রায় ভুলে গেছি আমরা। অথচ, বেঁচে থাকার জন্য চাই সুস্থ শরীর, সজীব মন আর আপনজন। নয়তো, ধীরে ধীরে বিকল হবে শরীরের কলকবজা, অবসাদে ভরবে মন আর গ্রাস করবে অসুখ।

অনেক সিনেমায়, সাহিত্যে তাই মানুষকে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন স্রষ্টারা। দূর অতীতকে স্মরণ করলে সেই তালিকা দীর্ঘ হবে। তাই সাম্প্রতিক কয়েকটি সিনেমার নাম এক্ষেত্রে উল্লেখ্য। যেমন– ডিয়ার জিন্দেগি, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা, ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি, তামাশা প্রভৃতি ছবিতে জীবনের জয়গানই গাওয়া হয়েছে।

আসলে আমরা বেশিটাই বাঁচি মনে-মনে। তাই প্রথমেই চাই সবুজ মন এবং তারপর চাই সতেজ শরীর। কিন্তু এই মন আর শরীরকে সবুজ এবং সতেজ রাখার জন্য কী কী করণীয়, তা জানা জরুরি।

মেন্টাল ফিটনেস

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অংশুল কুলকার্নির মতে, যাদের সুন্দর স্বাভাবিক প্রাণচঞ্চল থাকার কথা, সেই তরুণ প্রজন্মের একাংশ এখন মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রয়েছে মেয়েরা। এর মূলে যেমন রয়েছে লেখাপড়া কিংবা কেরিয়ারের চাপ, ঠিক তেমনই এদের একাকিত্ব, অতিরিক্ত প্রত্যাশা, প্রতিযোগিতা এবং সঠিক পরামর্শদাতার অভাবের সমস্যাও রয়েছে। মা-বাবাও যেমন কাজের চাপে এদের সময় দিতে পারেন না, ঠিক তেমনই কাকা-কাকিমা, দাদু-ঠাকুমার মতো যারা বন্ধুর মতো মেলামেশা করে এদের খুশি রাখতে পারতেন, তাদের সান্নিধ্য থেকেও এখন এরা বঞ্চিত নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হওয়ার কারণে। অতএব, ভালো ভাবে বাঁচতে হলে, এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার। এরজন্য কিছু উদ্যোগ নিতে হবে নিজেকে। ইচ্ছে কিংবা স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।

আর শত চেষ্টায়ও যদি বিফল হন, তাহলেও ভেঙে পড়বেন না। মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে আপনি এসেছেন খালি হাতে, যেতেও হবে খালি হাতে। তাই, না পাওয়ার দুঃখকে মনে জায়গা দেবেন না। নিজের আনন্দে বাঁচুন। জীবনে যতটুকু পেলেন, তাকে মহার্ঘ্য ভাবুন। যা পেলেন না, তা আপনার জন্য বরাদ্দ ছিল না ভেবে নেবেন।

ভেবে দেখবেন, এই পৃথিবীতে আপনার থেকেও দুঃখ দারিদ্র্যের মধ্যে বেঁচে আছেন অনেক মানুষ। কারও হাত নেই, পা নেই, কেউ হয়তো অন্ধ, মূক কিংবা বধির– তবুও তারা বেঁচে আছেন দুর্ভাগ্যকে জয় করে। অতএব, বিষণ্ণতা কাটান, ভালোভাবে বেঁচে থাকার কৌশল রপ্ত করুন।

  • মনের জোর বাড়ান।
  • একা একা নয়, আপনজনকে সঙ্গে নিয়ে থাকার চেষ্টা করুন।
  • অন্যের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করুন কৃতজ্ঞতা না পাওয়ার আশা করে, দেখবেন মানসিক তৃপ্তি পাবেন।
  • রাগ কমান, ধৈর্য বাড়ান। প্রত্যাশা কমান।
  • ঠান্ডা মাথায় সমস্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, যে-সমস্যার সমাধান নেই, তা কোনও সমস্যাই নয়।
  • নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখুন, মানসিক চাপ কমবে। সভা সমাবেশে যোগ দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কারণ, হইহুল্লোড়ে মন ভালো থাকে।
  • দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে দলবেঁধে বেড়াতে যান। পকেটে বেশি টাকা না থাকলে কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসুন, মন ভালো করার জন্য।আর মনটাকে রোমান্টিক রাখুন, লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না

ফিজিক্যাল ফিটনেস

বিশাল চেহারা কিন্তু সবসময় সুস্বাস্থ্যের পরিচয় দেয় না। সুস্বাস্থ্য মানে নিরোগ জীবন। আর নিরোগ থাকা মানেই ভালো ভাবে বেঁচে থাকা। এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম জরুরি। হাড় শক্ত রাখার জন্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার।

ব্যায়াম করার সঠিক সময় প্রতিদিন সকালবেলা। অন্তত তিরিশ মিনিট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তবে যারা নানা ভাবে শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। আর এই ব্যায়ামের পরিপূরক হতে পারে সাঁতার। নিয়মিত সাঁতার কাটলে শরীর সুস্থ থাকবে।

বছরে অন্তত একবার মেডিকেল চেক-আপ জরুরি। ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, ইউরিক অ্যাসিড, ব্লাড সুগার প্রভৃতি সঠিক মাত্রায় আছে কিনা তা জেনে নেওয়া জরুরি।

কী খাবেন আর কী খাবেন না, তা ঠিক করে নেওয়াও ভীষণ প্রয়োজন। যদি কোনও রোগ বাসা বেঁধে থাকে শরীরে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ এবং খাবার খাওয়া উচিত। আর যদি সুস্থ থাকেন, তাহলে শরীরে যাতে রোগজীবাণু বাসা বাঁধতে না পারে তার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই কী খাবেন আর কী খাবেন না তা ঠিক করে নেওয়াও জরুরি। ভাজাভুজি, মশলাযুক্ত খাবার কম খাবেন। পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল খাবেন বেশি করে। পেট পরিষ্কার রাখার জন্য শসা, পেয়ারা, ভুট্টা, গাজর প্রভৃতি ফাইবার জাতীয় খাবার রাখুন তালিকায়। সপ্তাহে অন্তত চারদিন এক পিস করে মাছ খাবেন হাড়ে ক্যালসিয়াম ঠিক রাখার জন্য।

ধূমপান, মদ্যপান একেবারে পরিত্যাগ করুন। ঠান্ডা পানীয় থেকেও দূরে থাকা ভালো। তবে প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল পান করুন।

শরীরকে ভালো রাখার জন্য উপযুক্ত ঘুমের প্রয়োজন। তাই, দিনভর পরিশ্রম করে রাতে অন্তত আট ঘন্টা ঘুমোন।

টিভি, কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, এসবের অতি ব্যবহারে মস্তিষ্কে কুপ্রভাব পড়তে পারে। আর এ প্রসঙ্গে যা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি, তা হল– অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। আর শরীর, মন ভালো রাখার জন্য প্রেম করুন চুটিয়ে। শারীরিক সুখলাভ থেকেও বঞ্চিত করবেন না নিজেকে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...